২ হাজার টাকায় ৩ মাস ভিক্ষা করার লাইসেন্স!
২ হাজার টাকায় ৩ মাস ভিক্ষা করার লাইসেন্স! - ছবি : সংগ্রহ
আর চলছে না। অন্য কোনো উপায় না দেখে ভিক্ষার ঝুলি হাতে যেখানে সেখানে বসে পড়লেই হলো? অনুমতি নিয়েছেন? ভিক্ষা করার জন্য লাইসেন্স করিয়েছেন? ভিক্ষা করার লাইসেন্স! আজগুবি মনে হলেও এমনই ঘটেছে ইউরোপের দেশ সুইডেনের একটি শহরে। অর্থাৎ একেবারে লাইসেন্স নিয়ে পথে বসতে হবে!
সুইডেনের বেশ কয়েকটি শহরে ভিক্ষাবৃত্তি বেআইনি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সুইডেনের স্কনে শহরে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করতে নির্দেশ জারি করেছিল ওই দেশের সুপ্রিম কোর্ট। বছরখানেক ধরে বিষয়টি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার পর ওই রায় দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। আদালতের যুক্তি, জনজীবনে অসুবিধা রুখতেই এ নিদান দেয়া হয়েছে।
আদালতের ওই রায়ের পর স্কনের দেখাদেখি সুইডেনের বেশ কয়েকটি শহরে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করেন সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষ। তবে এসকিলস্তুনা শহরে আবার অন্য নিয়ম। সেখানে ভিক্ষা করা যাবে বটে, তবে তার জন্য ভিক্ষুকদের কাছে বৈধ লাইসেন্স থাকতে হবে।
গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে পুর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পারমিটও কিনতে হবে এসকিলস্তুনা শহরের ভিক্ষুকদের। তবে এই পারমিট ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।
সমালোচকদের মতে, এই ব্যবস্থায় ভিক্ষাবৃত্তিকে উৎসাহ দেয়া হবে। এমনকি, এতে ভিক্ষা করার আইনি অধিকারও পেয়ে যাবেন ভিক্ষুকেরা। বিশেষ করে রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া থেকে সুইডেনে আসা জনগণের একটি অংশ এতে বিশেষভাবে লাভবান হবে।
বিতর্ক সত্ত্বেও নগর কর্তৃপক্ষ অন্য যুক্তি দিয়েছেন। তাদের দাবি, শহরের কত জন ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন গুজরান করেন, সে সম্পর্কে তথ্য জমা করে করতেই নাকি এ উদ্যোগ। এমনকি, তাদের সাহায্যের জন্যই এ ব্যবস্থা কাজে আসবে।
২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে ভিক্ষুকদের জন্য লাইসেন্স দেয়া শুরু করেন এসকিলস্তুনা শহরের নগর কর্মকর্তারা।
সুইডেনের ওই শহরে ভিক্ষা করতে কত টাকা খসাতে হবে? নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তিন মাস ভিক্ষা করার জন্য সুইডিশ মুদ্রায় ২৫০ ক্রোনা দিয়ে লাইসেন্স তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার মূল্য ২ হাজার ৩৩৮ টাকা। সেইসাথে ভিক্ষুকদের বৈধ পরিচয়পত্রও থাকা বাঞ্ছনীয়।
ভিক্ষাবৃত্তির জন্য লাইসেন্স পেতে অনলাইনে একটি ফর্ম পূরণ করে আবেদন করা যাবে। অথবা থানার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আবেদনপত্র পেতে পারেন ভিক্ষুকেরা।
লাইসেন্স ছাড়া এসকিলস্তুনা শহরের কোথাও ভিক্ষা করলে কড়া শাস্তিরও বিধান রয়েছে। নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, লাইসেন্স ছাড়া ধরা পড়লে ভিক্ষুকদের মাথা পিছু ৪ হাজার সুইডিশ ক্রোনা দিতে হবে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা!
এই নিয়ম চালু হওয়ার পর কী রকম সাড়া পাওয়া গেছে? সাড়া পাওয়া গেছেই বলে মনে করা হচ্ছে। নগর কর্তৃপক্ষের দাবি, বহু ভিক্ষুকই পেশা বদল করেছেন। অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তির বদলে ফলমূল বিক্রি করতে শুরু করেছেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা