রিফিউজি লতার সাতকাহন
রিফিউজি লতার সাতকাহন - ছবি : সংগ্রহ
অতি পরিচিত এই লতার বহু নাম। যেমন, জার্মানি লতা, জাপানি লতা, ফিরিঙ্গি লতা, আসামি লতা, বিকাশ লতা, তুফাইন্যা লতা, মেহমান লতা, পান লতা ইত্যাদি।
কৌতূহলের বিষয় হলো ইংরেজিতেও এই লতার অনেক নাম যেমন American Rope, Bitter Vine, Chinese Creeper, Climbing Hemp Vine, Vlimbing Hempvine, Climbing Hempweed, Mikania, Mikania Vine, Mile a Minute, Mile a Minute Weed ইত্যাদি। যদিও এই লতার বৈজ্ঞানিক নাম Mikania micrantha.
১৯৬০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পরেই এই লতাটি বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র নজরে আসে। বাংলাদেশ পেরিয়ে ভারতের আসামেও এটি দেখা যায়। তবে চট্টগ্রামেই এর সর্বাধিক মাত্রায় বিস্তার ঘটে।
Refugee শব্দটি ইংরেজি যার সহজ বাংলা প্রত্যাখ্যাত। এই লতাটি প্রত্যাখ্যাত হয়ে বাংলার আবহাওয়ার কাঁধে চড়ে, অন্য গাছের অন্যতম শত্রু হিসেবে ভূমিকা রাখে। এ কারণেই তাকে ‘রিফিউজি লতা’ বলা হয়।
চট্টগ্রামে বাহিরের আগন্তুককে জাপানি বলা হয়, সে কারণে এ লতাটির নাম ‘জাপানি লতা’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই যেহেতু লতাটি নজরে আসতে থাকে, এর সাথে জার্মানির কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে এমন ধারণায়, তাকে জার্মানি লতা বলে। পানের মতো বলে ‘পান লতা’, আসামেও লতাটি আছে বলেই এটার ‘আসামি লতা’। তুফানের পরে হয়েছে বলে 'তুফাইন্যা লতা' এবং অন্য জায়গা থেকে আগত বলে 'মেহমান লতা' হিসেবে বিবেচিত।
প্রকৃত অর্থে এটার বাংলা নাম ‘ফিরিঙ্গী’ লতা। এর পক্ষে সবল যুক্তি আছে। কেননা এই লতাটির আদি বাসস্থান হচ্ছে, মেক্সিকো, এল সালভেদর, গুয়েতেমালা, নিকারাগুয়া, ইকুয়েডর, পানামা, কিউবা, পেরু, কলাম্বিয়া মত দেশ গুলোতে।
এসব দেশের উপর একসময় আধিপত্য ছিল পর্তুগিজদের; যাদের অন্য নাম ফিরিঙ্গি। তাদের একটি ব্যতিক্রমী চরিত্র যে, তারা যে দেশেই আধিপত্য বিস্তার করত, সেখানকার জলবায়ু নিয়ে কাজ করত এবং ভিন দেশীয় ফল-মূলের চাষ করত। তাই ধারণা করা হয়, এটি তাদের মাধ্যমেই হয়ত চট্টগ্রামে এসে থাকবে।
এটার পিছনেও যুক্তি আছে। এই লতাটির অনেক গুনের মধ্যে অন্যতম হলো এর Antibacterial and Antimicrobial উপাদান খুবই শক্তিশালী। উপস্থিত ক্ষেত্রে রক্ত বন্ধ করা, পচন রোধ করার ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক।
ফলে এর তিতা রস, মানুষ গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্য নিজ উদ্যোগে খেয়ে থাকে। ফিরিঙ্গিরা ছিল যুদ্ধবাজ জাতি, সর্বত্র রক্তপাত করে বেড়াত। তাদের দখলে ছিল দক্ষিণ আমেরিকা।
তারা এই লতার গুনাগুণ জানত বলেই, জাহাজে কিংবা ভূমিতে সীমিত পরিসরে লতাটি জিইয়ে রাখত। চট্টগ্রাম বন্দর ছিল তাদের অন্যতম প্রধান ঘাটি।
১৯৬০ সালে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল ডিসেম্বর মাসে। এ মাসে এই লতার ফল পাকে ও বাতাসে ভর করে সর্বত্র ছড়ায়। সুতরাং লতার নাম ফিরিঙ্গি লতা ও তার গুনাগুণের পিছনে এটিই হয়ত প্রকৃত কারণ হবে।
গুনাগুণ :
লতাটি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, ফলে দেশ ভেদে তার ব্যবহারও ভিন্ন। বাংলাদেশ ও পাপুয়া নিউগিনিতে কাটা ছেড়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। মালয়েশিয়াতে চুলকানি বন্ধের কাজে লাগে।
এলার্জির জন্যেও স্থানীয় পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্য সেবন করা হয়। পেটের সমস্যা দূর করতে গাছটির পুরো দেহ দিয়ে চা বানিয়ে পান করা হয়।
ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রকোপ কমাতে এর পাতা সিদ্ধ করে পান করা হয়। এটি চামড়াকে ফাঙ্গাস মুক্ত রাখে। জন্ডিসের জন্য এটা সেবন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও আরো অগণিত কাজে মানুষ ব্যবহার করে থাকে।
সতর্কতা :
গাছের পরিচিত লিখতে গিয়ে গুনাগুণ সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। কেউ যেন নিজ দায়িত্বে এটা খেয়ে রোগ থেকে নিশ্চিত বেঁচে গেছে এমন ধারণা না করেন। রোগ নির্ণয় করবে ডাক্তার এবং তিনিই যথাযথ ওষুধ দেবেন।