তাইওয়ানকে কিভাবে একত্রিত করতে চায় চীন?
তাইওয়ানকে কিভাবে একত্রিত করতে চায় চীন? - ছবি : সংগ্রহ
তাইওয়ানকে চীনের সাথে সংযুক্ত করার জন্য চীনের বিভিন্ন কৌশল নকশা করা আছে। রাশিয়া তার সামরিক বাহিনীকে ইউক্রেন আক্রমণ এবং জয় করার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে প্রস্তুত ও সজ্জিত করছে। ক্রিমিয়া দখলের পাশাপাশি ক্রেমলিন ইতোমধ্যে ইউক্রেনে নিয়মিত সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে। ২০১৪ সালের আগস্টে এবং ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতেও এমন সেনা মোতায়েন হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, এবার পুতিন বড় ধরনের সেনা ‘পুশ’ করতে ইচ্ছুক।
সমালোচকরা মনে করেন, তাইওয়ানে চীনা সামরিক অধিগ্রহণ পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আমূল পরিবর্তন করবে না, তেমনি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অধিগ্রহণ ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে বিঘিœত করবে না। পুতিন তাইওয়ান প্রশ্নে বারবার চীনকে সমর্থন দিয়েছেন। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে চীন কঠোরভাবে নীরব। অনেকে আশঙ্কা করছেন, যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্য, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে বর্তমান ‘বিশ্ব শান্তির পরিবেশ’ বিনষ্ট হবে।
চীনের তাইওয়ান আক্রমণ এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ করা বিশাল ভুল হবে, কেননা এতে বৃহত্তর সামরিক সঙ্ঘাতের ঝুঁকি বাড়বে এবং যুদ্ধ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসারিত হবে। জাপান ও ভারতের মতো দেশগুলো প্রায় নিশ্চিতভাবে চীনকে প্রতিহত করার জন্য তাদের নিজস্ব সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেবে। অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ ও উৎপাদন দু’টি দেশে ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ইউরোপীয়রাও তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য আরো কৌশলী হবে এবং বৈশ্বিক সমর-রাজনীতির টেবিলে নতুন নতুন কার্ড ফেলবে। যুদ্ধের ড্রামগুলোর আওয়াজ বেশ স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছে। কূটনীতির কাজ হলো, এসব কোলাহলের পটভূমিতে বিচরণ করে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করা। সেটি তেমন কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে।
উপরের আলোচনায় আমরা দেখেছি, ইউরোপ ও এশিয়ায় দু’টি বিপজ্জনক ফ্ল্যাশপয়েন্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনকে প্রকাশ্য সঙ্ঘাতে নিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন ও তাইওয়ানের সঙ্কট সমাধান করা যেতে পারে যদি সব পক্ষ অন্যদের বৈধ নিরাপত্তা স্বার্থকে সম্মান জানায়।
বর্তমান ইউক্রেন সঙ্কট রাশিয়া এবং মার্কিন উভয়েরই অত্যাচারের ফল। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করা এবং ইউক্রেনের দোনেৎস্ক এবং লুহানস্কে শিল্প কেন্দ্র দখলের মধ্যে রাশিয়া নিজের প্রভাবের পাখা মেলে দেয় এবং শক্তি, শিল্প ইনপুট এবং বাজারের জন্য ইউক্রেনকে নির্ভরশীল রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতির সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে একীভূত হতে চায়। সেই উদ্দেশ্যে ইউনিয়নের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। ক্রেমলিন আশঙ্কা করছে যে, ইউক্রেনের জন্য ইইউ সদস্যপদ ন্যাটোতে যোগদানের একটি ধাপ মাত্র।
যুক্তরাষ্ট্রও অনেক প্রভাব ফেলেছে, ২০০৮ সালে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসন ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এই উসকানিমূলক প্রস্তাব মার্কিন মিত্রদের বিভক্ত করেছিল এবং ন্যাটো তবুও নিশ্চিত করেছে যে, ইউক্রেনকে সদস্য হিসেবে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। ২০১৪ সালে রাশিয়া সহিংসভাবে ক্রিমিয়াকে অধিভুক্ত করে। তখন তার একটি উদ্দেশ্য ছিল ন্যাটো যেন কখনোই রাশিয়ার ব্ল্যাক সি নৌ-ঘাঁটি এবং নৌ-বহরে ঢুকতে না পারে।
নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে যে আলোচনার বিষয়বস্তু প্রচারিত হয় তাতে দেখা যায়, ইউক্রেনে ন্যাটোর নীতির পরিবর্তন হচ্ছে। ইউক্রেনীয় এবং ন্যাটো কর্মকর্তারা উভয়েই মত প্রকাশ করেছেন, ইউক্রেন যেকোনো সময় ন্যাটোতে যোগদান করে পূর্ণ সদস্যপদ গ্রহণ করতে পারে। তবুও, একজন উচ্চপদস্থ এস্তোনিয়ান সংসদ সদস্য সতর্ক করেছেন যে, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টি ১৯৩৮ সালে ব্রিটেনের হিটলারকে তুষ্ট করার মতো।