ইউক্রেন সঙ্কটে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
ইউক্রেন সঙ্কটে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা - ছবি : সংগ্রহ
বর্তমান ইউক্রেন সঙ্কট রাশিয়া এবং মার্কিন উভয়েরই অত্যাচারের ফল। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করা এবং ইউক্রেনের দোনেৎস্ক এবং লুহানস্কে শিল্প কেন্দ্র দখলের মধ্যে রাশিয়া নিজের প্রভাবের পাখা মেলে দেয় এবং শক্তি, শিল্প ইনপুট এবং বাজারের জন্য ইউক্রেনকে নির্ভরশীল রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতির সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে একীভূত হতে চায়। সেই উদ্দেশ্যে ইউনিয়নের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। ক্রেমলিন আশঙ্কা করছে যে, ইউক্রেনের জন্য ইইউ সদস্যপদ ন্যাটোতে যোগদানের একটি ধাপ মাত্র।
যুক্তরাষ্ট্রও অনেক প্রভাব ফেলেছে, ২০০৮ সালে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসন ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এই উসকানিমূলক প্রস্তাব মার্কিন মিত্রদের বিভক্ত করেছিল এবং ন্যাটো তবুও নিশ্চিত করেছে যে, ইউক্রেনকে সদস্য হিসেবে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। ২০১৪ সালে রাশিয়া সহিংসভাবে ক্রিমিয়াকে অধিভুক্ত করে। তখন তার একটি উদ্দেশ্য ছিল ন্যাটো যেন কখনোই রাশিয়ার ব্ল্যাক সি নৌ-ঘাঁটি এবং নৌ-বহরে ঢুকতে না পারে।
নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে যে আলোচনার বিষয়বস্তু প্রচারিত হয় তাতে দেখা যায়, ইউক্রেনে ন্যাটোর নীতির পরিবর্তন হচ্ছে। ইউক্রেনীয় এবং ন্যাটো কর্মকর্তারা উভয়েই মত প্রকাশ করেছেন, ইউক্রেন যেকোনো সময় ন্যাটোতে যোগদান করে পূর্ণ সদস্যপদ গ্রহণ করতে পারে। তবুও, একজন উচ্চপদস্থ এস্তোনিয়ান সংসদ সদস্য সতর্ক করেছেন যে, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টি ১৯৩৮ সালে ব্রিটেনের হিটলারকে তুষ্ট করার মতো।
পেন্টাগন মনে করে, ইউক্রেনের কোনো সামরিক জোট বেছে নেয়ার অধিকার রয়েছে। এই অবস্থানটি প্রথম ১৮২৩ সালের মনরো মতবাদে প্রকাশ করা হয়েছিল এবং মার্কিন হিংসাত্মক প্রতিক্রিয়ায় ১৯৫৯ সালের কিউবান বিপ্লবের পর ফিদেল কাস্ত্রোর সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে ফিরে যাওয়াকে মনে করিয়ে দেয়। তারপর, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার ঘোষণা করেছিলেন, ‘কিউবাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে একটি হাতিয়ার হিসেবে হস্তান্তর করা হয়েছে।’ তিনি সিআইএকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আক্রমণের পরিকল্পনা তৈরি করার। ফলে পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সঙ্কটের জন্ম দেয়। তবে এটাও সঠিক যে, ছোট দেশগুলো ঝট করে সামরিক জোট বেছে নিতে পারে না, কারণ এ ধরনের পছন্দ তাদের প্রতিবেশীদের জন্য নিরাপত্তা ইস্যু সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, সোভিয়েত ক্রোধকে উসকে দেয়া হবে এই ভেবে, অস্ট্রিয়া এবং ফিনল্যান্ড উভয়েই ন্যাটোতে যোগদান না করে তাদের স্বাধীনতা এবং ভবিষ্যতের সমৃদ্ধি সুরক্ষিত করতে পেরেছিল। ইউক্রেনের জন্যও আজ একই বিষয় সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কর্মকর্তাদের বিচক্ষণতা সঙ্কটের সমাধান দিতে সহায়ক হতে পারে।
তাইওয়ানের সমস্যাও একই রকম। এক চীন নীতির ধারণা অনুসারে, তাইওয়ানের শান্তি ও গণতন্ত্রের অধিকার রয়েছে। রিচার্ড নিক্সন এবং মাও সেতুংয়ের সময় থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের সম্পর্কের ভিত্তি এমনই চলে আসছে।
তাইওয়ানের প্রতি একতরফা সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে চীনকে সতর্ক করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, চীনের সামরিক পদক্ষেপ বিশ্ব নিরাপত্তা এবং বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। তবুও, ইউক্রেনের যেমন ন্যাটোতে যোগদানের সীমাহীন সমস্যা, তেমনি তাইওয়ানেরও চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াতেও হাজারো সমস্যা এবং বিশ্ব শান্তি ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করবে।