তাইওয়ানে স্বাধীনতা ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের উসকানি

মো: বজলুর রশীদ | Jan 20, 2022 04:05 pm
তাইওয়ানে স্বাধীনতা ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের উসকানি

তাইওয়ানে স্বাধীনতা ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের উসকানি - ছবি : সংগ্রহ

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, তাইওয়ানের কিছু রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে তালগোল পাকাচ্ছেন এবং কিছু মার্কিন রাজনীতিবিদ ‘এক চীন’ নীতির সাথে স্বাধীনতার কথাও বলছেন! ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে পশ্চাদপসরণ শুরু করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আমি এক চীন নীতি পুরোপুরি বুঝতে পারি, কিন্তু আমি জানি না, কেন আমাদের এক চীন নীতিতে আবদ্ধ হতে হবে যদি না আমরা চীনের সাথে বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়ে চুক্তি করি।’

এরপর জো বাইডেন উসকানিমূলকভাবে গত মাস ডিসেম্বরে গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলনে তাইওয়ানকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জাতিসঙ্ঘের ব্যবস্থায় তাইওয়ানের ‘দৃঢ় অংশগ্রহণের’ প্রতি সমর্থন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপ চীনের সাথে উত্তেজনাকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েকটি বিষয়ে চীন ‘রেড লাইন’ এঁকে দিয়েছে।

আবার, মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা যুক্তি দেন যে, তাইওয়ান স্বাধীনতা ঘোষণা করার অধিকারের পথে রয়েছে; আমেরিকার তার নিজস্ব ইতিহাসের আলোকে সেটিকে বিশ্লেষণ করা উচিত। এভাবেই ঘুমন্ত ড্রাগনকে তাপ দেয়া হচ্ছে। চীনও ক্যালিফোর্নিয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে, মার্কিন সরকার সেটি সহ্য করছে না। যুক্তরাষ্ট্র চিন্তা করেনি, চীন এত তাড়াতাড়ি বৈশ্বিক রাজনীতিতে খেলা শুরু করবে।

তাইওয়ানে সামরিক ইস্যু বৃদ্ধির ঝুঁকিগুলো নিয়ে সম্প্রতি ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ ঘোষণা দেন, ন্যাটো জোট চীনকে মোকাবেলা করতে পারে। যদি তেমনটি হয়, তবে তাইওয়ান পরিস্থিতি আরো জটিলতার সৃষ্টি করবে।
মার্কিন সিনেট গত ১৫ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট এর একটি সংস্করণের পক্ষে ভোট দিয়ে ৭৭৮ বিলিয়ন প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অনুমোদন দেয় যা আগের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এটি ৩৬৩-৭০ ভোটে, সিনেট ৮৯-১০ ভোটে পাস করেছে।

২০২২ সালে এ আইন ইউক্রেন নিরাপত্তা সহায়তা উদ্যোগের জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার রেখেছে। ইউক্রেনের সশস্ত্রবাহিনীকে সহায়তা প্রদানকারী রাশিয়ার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর মারাত্মক বিরোধ রয়েছে; ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা উদ্যোগের জন্য চার বিলিয়ন ডলার এবং বাল্টিক সুরক্ষা সহযোগিতার জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করেছে। চীনের বিষয়ে, বিলে প্যাসিফিক ডিটারেন্স ইনিশিয়েটিভের জন্য ৭.১ বিলিয়ন এবং তাইওয়ানের প্রতিরক্ষার জন্য কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়া গেছে। সেই সাথে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে জোরপূর্বক শ্রম দিয়ে উৎপাদিত পণ্য ক্রয়ে প্রতিরক্ষা বিভাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়াও, বিলে বলা হয়েছেÑ তাইওয়ান দ্বীপের নৌবাহিনীকে ২০২২ সালে পরিচালিতব্য, মার্কিন নেতৃত্বাধীন রিম অব দ্য প্যাসিফিক মহড়ায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর পক্ষে জোর দেয়া হয়েছে।

প্রতিরক্ষা ব্যয়ের সমর্থকরা যুক্তি দিয়েছিলেন, মার্কিন সামরিক বাহিনীকে এখন চীন এবং রাশিয়াকে মোকাবেলা করতে হবে। তারা বলছেন, চীন তার সামরিক বাজেট সাত গুণ বাড়িয়ে ২০৯ বিলিয়ন ডলারে তুলেছে। তারা বলছেন, মূল মূল্য আরো অনেক বেশিতে দাঁড়াবে, কেননা চীনে শ্রমিকদের কম বেতন ও সস্তা উপাদান পাওয়া যায়। বাইডেন চীনের বিরুদ্ধে একটি ‘এক মহাকৌশলকে’ বিকশিত করতে চান।

পশ্চিম ইউরোপকে অধুনালুপ্ত ইউরোপীয় শক্তির আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা এক জোটকে একটি এশিয়ান শক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট হিসেবে ব্যবহার করা কোনো যুক্তিতেই উচিত নয়।
ইউক্রেন এবং তাইওয়ান সঙ্কট শান্তিপূর্ণভাবে এবং সহজভাবে সমাধান করা উচিত। ন্যাটোর উচিত ইউক্রেনের সদস্যপদ পরিকল্পনার ছক থেকে তুলে নেয়া এবং রাশিয়ার উচিত যেকোনো আগ্রাসন পরিত্যাগ করা। ইউক্রেনকে তার বাণিজ্যনীতিগুলোকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য স্বাধীনতা দিতে হবে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নীতিগুলো মেনে চলতে হবে।

একইভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট করা উচিত যে, তারা অবিচলভাবে তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতার পক্ষালম্বন করবে না এবং ন্যাটোকে পুনর্গঠন করে চীনকে টার্গেট বানাবে না। চীনের উচিত তাইওয়ানের বিরুদ্ধে একতরফা সামরিক পদক্ষেপ ত্যাগ করা এবং দ্বি-ব্যবস্থার নীতিকে পুনঃনিশ্চিত করা, যা হংকংয়ের ক্র্যাকডাউনের পরে আসন্ন হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে অনেক তাইওয়ানি বিশ্বাস করেন।

শান্তির কোনো বৈশ্বিক কাঠামো স্থিতিশীল ও নিরাপদ হতে পারে না যত ক্ষণ না সব পক্ষ অন্যের বৈধ নিরাপত্তা স্বার্থকে স্বীকৃতি দেয়। এটি অর্জনের জন্য প্রধান শক্তিগুলোর জন্য সর্বোত্তম উপায় হলো, ইউক্রেন এবং তাইওয়ানের ওপর পারস্পরিক বোঝাপড়া সৃষ্টি এবং যুদ্ধাবস্থার উত্তাপ তাড়াতাড়ি কমিয়ে আনার পথ বেছে নেয়া।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us