অজুর এত ফজিলত!
অজুর এত ফজিলত! - ছবি : সংগ্রহ
একজন মুসলমান ব্যক্তির ওপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। আর নামাজ আদায়ের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুন্দরভাবে অজু করা। কেননা, অজু হচ্ছে নামাজের চাবি। তাই নামাজে দণ্ডায়মান হতে হলে অবশ্যই অজুু করতে হবে। এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে ও দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে।’ (সূরা মায়িদা-০৬)
এই অজুর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ফজিলত। আর একজন মুসলিম ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করার মাধ্যমে সহজেই এই ফজিলত অর্জন করতে পারে। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- হজরত রাসূল সা: বলেছেন, ‘বেহেশতের চাবি হচ্ছে নামাজ, আর নামাজের চাবি হলো অজু।’ (মুসনাদে আহমাদ)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত- হজরত রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু থাকা সত্ত্বেও নতুন অজু করে সে ১০টি নেকি লাভ করে।’ (অজুর ফাজায়েল)
শুধু অজুর মাধ্যমে বান্দা নেকি লাভ করে এমনটা নয়। বরং অজুর বরকতে বান্দার অতীত জীবনের গোনাহ মাফ হয়ে যায়। হজরত আমর ইবনে আবাসা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন, আমি একদিন প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! অজুর ফজিলত কী? তিনি বলেন, ‘যখন তুমি অজু করবে ও দুই হাতের কবজি পরিষ্কার করে ধৌত করবে, তখন গোনাহসমূহ আঙ্গুলের অগ্রভাগ ও নখ দিয়ে বের হয়ে যাবে। এরপর যখন তুমি কুলি করবে, নাকে পানি দিয়ে দু’নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করবে, মুখ ও হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, মাথা মাসেহ করবে ও উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে, তখন তুমি যেন তোমার গোনাহসমূহকে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিলে। এরপর যখন তুমি তোমার চেহারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জমিনে রাখবে, তখন তুমি এমনভাবে গোনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেমন যেদিন তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছিল।’ (নাসায়ি শরিফ) হজরত বেলাল রা: দুনিয়াতেই অজুর ফজিলতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। একবার রাসূল সা: ফজরের নামাজের সময় হজরত বেলাল রা:কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে বেলাল! তুমি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যে আমল করেছ তার কথা আমাকে বলো! কেননা, জান্নাতে আমি তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। হজরত বেলাল রা: বললেন, দিন বা রাত যখনই আমার অজু ছুটে যায় আমি সাথে সাথে অজু করি এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করি। এ ছাড়া আর তেমন কিছুই করি না।’ (সহিহ বোখারি-১০৮৩)
অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠকারী ব্যক্তির জন্য আরো সুসংবাদ রয়েছে। অজু শেষ করে যে ব্যক্তি কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে- হজরত রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সব নিয়ম-কানুনসহ উত্তমরূপে অজু করবে, এরপর ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু’ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম)
শুধু দুনিয়াতেই নয় আখিরাতেও অজুকারী ব্যক্তির জন্য রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। হাশরের মাঠে উপস্থিত সবাই অজুকারী ব্যক্তির দিকে বারবার তাকাতে থাকবে। অজুকারী ব্যক্তির হাত-পা ও মুখমণ্ডল চমকাতে থাকবে। হজরত মুজমির রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা রা:-এর সাথে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তিনি অজু করলেন। তারপর বললেন, আমি রাসূল সা:কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার ইচ্ছা রাখে সে যেন তা করে নেয়।’ (সহিহ বোখারি-১৩৮)
অজুর মাধ্যমে নিশ্চয় বান্দা আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে যায়। যার ফলে অজুকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাতের দরজাসমূহ পর্যন্ত খুলে দেন। তবে অজুর মাধ্যমে আল্লাহর এই নৈকট্য অর্জনের জন্য অবশ্যই আমাদের সহিহ পদ্ধতিতে অজু করতে হবে।
অজুর মধ্যে রয়েছে চারটি ফরজ। এ চারটির নাম মূলত অজু। এই চারের ক্ষেত্রে কোনো একটি বাদ গেলে বা চুল পরিমাণ কোনো স্থান শুকনা থাকলে অজু হবে না। ১. একবার সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করা। অর্থাৎ কপালের উপর মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনির নিচ এবং এক কানের গোড়া থেকে অন্য কানের গোড়া পর্যন্ত সমস্ত মুখমণ্ডল ধুয়া ফরজ। ২. দু’হাত অন্তত একবার কনুই পর্যন্ত ধৌত করা। ৩. একবার মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা। ৪. একবার দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা। এ ছাড়াও অজুর মধ্যে কতগুলো সুন্নাত এবং ওয়াজিব রয়েছে। যেগুলো পালন করাও আমাদের জন্য জরুরি। কেননা, একজন মুসলিম ব্যক্তির সব সময়ে ঈমানের দাবি হচ্ছে নেককাজে মনোযোগী হয়ে সুন্দরভাবে তা সম্পাদন করা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। আর একজন মুসলিম ব্যক্তি সহজেই সুন্দরভাবে অজু করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে।