কূটনীতিতে বড় অর্জন পেতে যাচ্ছেন এরদোগান!
এরদোগান - ছবি : সংগ্রহ
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, তুরস্ক ২০২২ সালে ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি মিত্র হিসেবে স্বীকৃত হতে চলেছে। এই প্রত্যাশায়, আঙ্কারা ডিসেম্বরের শেষের দিকে ওয়াশিংটনের কাছে একটি ‘যৌথ কৌশলগত প্রক্রিয়া’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিল। তবে এরদোগানের প্রধান সমস্যা হলো তিনি কতটা পাশ্চাত্যের অ্যাজেন্ডা ধারণ করে সামনে এগোবেন এ ব্যাপারে পশ্চিমাদের আস্থার অভাব। সিরিয়া পরিস্থিতিতে তিনি নিজস্ব অবস্থান নিয়েছেন এবং ইউরেশীয় একীকরণের চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় (এসসিও) তুরস্কের সদস্য হওয়ার মতো বিষয় নিয়ে ভেবেছেন। আরব প্রতিবেশীরাও তুরস্কের প্রভাব বিস্তারের উচ্চাকাক্সক্ষাকে সন্দেহের চোখে দেখে।
বাস্তবে এরদোগান মনে করছেন, তুরস্ক পশ্চিম, ন্যাটো এবং রাশিয়ার কাছে অপরিহার্য। যদিও ভদ্রকুমারের মতো অনেকে মনে করেন, পশ্চিমারা তুরস্ককে ফিরিয়ে নিতে পারে, কিন্তু এরদোগানকে মেনে নেবে কি না সেটি এখনো প্রশ্ন হিসেবে রয়ে গেছে। এরপরও এরদোগান তার অবস্থানকে এগিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কাজাখস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রতিক্রিয়া জানাতে তুরস্ক আট দিন সময় নিয়েছে। এটা অলক্ষিত হয়নি যে, রাষ্ট্রপতি কাসিম-জোমার্ত টোকায়েভ বারবার অভিযোগ করেছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের চরমপন্থী এবং সন্ত্রাসীরা তার দেশে অশান্তি সৃষ্টিতে জড়িত যারা বিদেশী শক্তি দ্বারা প্রশিক্ষিত এবং যুদ্ধে কঠোর ছিল। কাজাখ কর্মকর্তারা বলেছেন, প্লটটি ‘একক উৎস থেকে’ পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু কাজাখ কর্তৃপক্ষ যে বিপুল সংখ্যক অ্যাক্টিভিস্টকে আটক করেছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে, তাদের মধ্যে অনেক বিদেশীও রয়েছে। কাজাখ সরকার সম্ভবত তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। নূর সুলতান নজরবায়েভ নিজেই সরকারের এই নীতির সমালোচনা করেছেন।
যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থার (সিএসটিও) শান্তিরক্ষা মিশন কাজাখস্তানের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে যখন সাহায্য করছিল তখন রাশিয়ান মিডিয়া আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির খবর দিয়েছে। আর্মেনিয়া সোভিয়েত-উত্তর এই ব্লকের এখন সভাপতি। অন্য দিকে, মস্কোর প্রভাবশালী দৈনিক কমারসান্ট রিপোর্ট করেছে, কাজাখস্তানে সিএসটিও মিশন তুর্কি এবং আজারবাইজানী মিডিয়া আউটলেটগুলোতে সক্রিয়ভাবে সমালোচিত হয়েছিল, যদিও অফিসিয়ালভাবে কোনো অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়নি।
কাজাখস্তানে বিস্ফোরণের প্রাক্কালে এরদোগান তার রাশিয়ান প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ২০২২ সালের প্রথম টেলিফোন কথোপকথন করেন। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর কাছে দেয়া রাশিয়ার নিরাপত্তা গ্যারান্টি সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর দুই দিন পরে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু তার মার্কিন প্রতিপক্ষ অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে আলোচনা করেন যেখানে, তুর্কি বক্তব্য অনুসারে, মূল বিষয় ছিল ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যে উত্তেজনার বিষয়টি।
ব্লিঙ্কেন নিজেই এ বিষয়ে টুইট করেছেন, ‘তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ‘ভালো’ আলোচনা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কের মধ্যে ইউক্রেনে রুশ উত্তেজনার হুমকির বিষয়ে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় অব্যাহত রয়েছে এবং আলাদাভাবে, দ্বিপাক্ষিকভাবে ন্যাটোর মিত্র হিসেবে সহযোগিতাকে আরো গভীর করতে কাজ হচ্ছে।’
এর পর ৬ জানুয়ারি, মেভলুত কাভুসোগলু রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথেও কথা বলেছেন। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, দুজন ন্যাটো-রাশিয়া কাউন্সিলের বৈঠক এবং কাজাখস্তান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা আর ককেশাসের বর্তমান উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সাবাহ পত্রিকার এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- ‘সম্ভবত নতুন বছরে যে দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পদক্ষেপ চলমান রয়েছে তারাই নয় বরং ন্যাটো আর ইইউও তুরস্কের দরজায় কড়া নাড়বে; ২০২২ সালে, যেমনটি রাশিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছে।’
ভদ্রকুমারের মন্তব্য হলো- ‘খরগোশের সাথে দৌড়ানো এবং গ্রে হাউন্ডের সাথে শিকার করা উত্তেজনাপূর্ণ আর এটি করা স্মার্ট কিছু বলে মনে হতে পারে। কিন্তু একশ’ বছর আগে উসমানীয় তুরস্ককে একটি ভারী মূল্য দিতে হয়েছিল। কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার উপর জার্মানির আক্রমণকে সহায়তা করার সিদ্ধান্তটি শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় হাজার হাজার অটোম্যান নাগরিককে, তুর্কি সাম্রাজ্য ও ইসলামী খিলাফতের বিলুপ্তি ঘটে।’
এই মন্তব্যে তার ইঙ্গিত হলো- ন্যাটোর সাথে সম্পর্ক বাড়াতে গিয়ে রাশিয়ার সর্বাত্মক শত্রুতা আঙ্কারার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। এমনকি একেক সময় একেক দিকে খেলতে গিয়ে সব পক্ষের আস্থা হারানো বা শত্রুতার সম্মুখীন হতে হয় কি না সেটিও দেখার একটি বিষয় হতে পারে। প্রথম মহাযুদ্ধের এরকম একটি বৈরী সময়ে ১০০ বছর আগে তুর্কি সাম্রাজ্য ভেঙে পড়েছিল।