বিপুল সামরিক শক্তি গড়ে তুলছে তুরস্ক
তুরস্কের সামরিক শক্তি -
তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকর সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, তুর্কি ও মার্কিন কর্মকর্তারা এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নিয়ে ওয়াশিংটনে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আকর সতর্কতার সাথে আশাবাদী যে, এর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান পাওয়া যেতে পারে। তুরস্ক এফ-৩৫ প্রোগ্রামের অংশীদার ছিল এবং শতাধিক এফ-৩৫ জেট কেনার পরিকল্পনা করেছিল। এস-৪০০ কেনার ব্যাপারে রাশিয়ার সাথে সমঝোতার পর তুরস্ক এফ-৩৫ প্রোগ্রাম থেকে বাদ পড়ে এবং এর প্রতিরক্ষা শিল্প অধিদফতর ২০২০ সাল থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছে। তবে, তুর্কি ঠিকাদাররা এখনো পঞ্চম প্রজন্মের জেটের যন্ত্রাংশ তৈরি করছে। অন্যদিকে, এরদোগান তুরস্কের বিদ্যমান নৌবহরকে আপগ্রেড করার জন্য ৪০টি নতুন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এবং প্রায় ৮০টি আধুনিকীকরণ কিট কেনার জন্য গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রস্তাব করে।
এরদোগানের প্রধান সহযোগী ইব্রাহিম কালিন ১০ জানুয়ারি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাথে কথা বলেছেন। আঙ্কারার এক বিবৃতি অনুসারে, বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ইস্যুগুলোর মধ্যে, ইউক্রেন সঙ্কট, কাজাখস্তানে বিক্ষোভ, সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিষয়ে মতবিনিময় করা হয়। আর্মেনিয়ার সাথে আলোচনা এবং আফগানিস্তান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও ইথিওপিয়ার উন্নয়ন নিয়েও কথা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কালিন জ্যাক সুলিভানকে জানিয়েছিলেন যে, ইউক্রেন সঙ্কট সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত আর তুরস্ক সম্ভাব্য সব উপায়ে অবদান রাখতে প্রস্তুত। এ ছাড়া, কালিন ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার ‘সুরক্ষা’র গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। ইউক্রেনের সাথে তুরস্কের একটি গতিশীল সামরিক সম্পর্ক রয়েছে, বিশেষ করে দেশটিকে অ্যাটাক ড্রোন সরবরাহের ব্যাপারে।
স্পষ্টতই, সিরিয়া নীতি থেকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে এবং তার বাইরে সার্বভৌম অধিকার পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক মতবিরোধ সত্ত্বেও, তুরস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইতিবাচক আলোচনার পথ অন্বেষণ করছে। আঙ্কারার অনুমান, তুরস্ক নিয়ে ওয়াশিংটনে অনেকের নেতিবাচক মনোভাব থাকলেও, বাইডেন প্রশাসন বিচ্ছেদের জন্য এগোতে ইচ্ছুক নয়।
এরদোগানও আশা করছেন, তুরস্কের প্রতি মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি এখন পরিবর্তিত হতে পারে। কারণ আঙ্কারার অবস্থান বৃহৎ-শক্তির প্রতিযোগিতার পরিণামমূলক হয়ে উঠছে। প্রকৃতপক্ষে, কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে তুরস্কের ভূমিকা, ইউক্রেন, ইরাক ও লিবিয়াতে আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটনের স্বার্থ কাছাকাছি থাকা, রুশ ও চীনা প্রভাব বিস্তৃত হওয়ার অঞ্চল সাব-সাহারান আফ্রিকায় তুরস্কের ক্রমবর্ধমান পদচিহ্ন- এ সবই দুই পক্ষের সম্পর্কের মধ্যে গেম পরিবর্তনকারী হতে পারে।
সার্বিকভাবে ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিপক্ষের সঙ্ঘাতে তুরস্ক যে অবস্থান নেয় তা যুক্তিযুক্তভাবে এখন আগের চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ। তবে এম কে ভদ্রকুমারের মতো কিছু বিশ্লেষক এর উল্টো একটি দিকের প্রতিও ইঙ্গিত দিচ্ছেন। ভদ্রকুমার বলছেন, তুরস্কের জন্য একটি ‘সুইং স্টেট’ হওয়ার কৌশলগত সুবিধা থাকতে পারে, কিন্তু যখন সময় কঠিন ও জটিল হয়ে যায়, তখন এর পরিণতি বিরূপ হতে পারে। তুরস্ক ১০০ বছর আগে সত্যের এমন একটি মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছিল। আজ অনুরূপ একটি অবস্থার সম্মুখীন আঙ্কারা।
আঙ্কারায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সাথে সাম্প্রতিক সময়ে এক বৈঠকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ২০২২ সালে দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সাহসী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইইউ-এর পূর্ণ সদস্যপদ তুরস্কের কৌশলগত অগ্রাধিকার এবং এটি আমাদের মধ্যে অভিন্ন কুসংস্কার বা ভয়ের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করার আগ্রহের প্রকাশ। এরদোগানের মতে, তুরস্ক-ইইউ সহযোগিতা অত্যাবশ্যক এবং তুরস্কের বিশেষ প্রচেষ্টা না থাকলে, সিরিয়া এবং ইউরোপ একটি ভিন্ন ল্যান্ডস্কেপের মুখোমুখি হতো।
আঙ্কারা নিশ্চিত করেছে যে, ওয়াশিংটন তুরস্কের সাথে তার সমস্যাযুক্ত সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে আগ্রহী।
সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিত তুরস্কের দৈনিক সাবাহ পত্রিকার এক ভাষ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অবশেষে, এই মুহূর্তে, তুরস্ক মুখোমুখি অবস্থান নেবে রাশিয়ার। ন্যাটো জোট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি আগের চেয়ে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ন্যাটোর একটি প্রমাণিত এবং অপরিহার্য সদস্য হিসেবে, তুরস্ক উভয় পক্ষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার।’