করোনার নতুন ৩ উপসর্গ
করোনার নতুন ৩ উপসর্গ - ছবি : সংগ্রহ
করোনাভাইরাসের নয়া রূপ ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা সারা দেশে চার হাজার পার করেছে। তবে উপসর্গগুলো তুলনামূলকভাবে কম সক্রিয় হওয়ায় আগের দু’বারের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাটা শতাংশ হারে বেশ কম। তবে ওমিক্রনের কোনো একটিও উপসর্গ দেখা দিলে একেবারে হালকাভাবে নেবেন না।
ওমিক্রনের সাধারণ লক্ষণগুলো কী কী
আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন অ্যানালাইসিস’এর অনুসারে, কাশি, অত্যধিক ক্লান্তি, নাক বন্ধ এবং নাক দিয়ে জল পড়া ওমিক্রন রূপের সাধারণ উপসর্গ। এছাড়াও হালকা জ্বর, ঘামাচি, শরীরে ব্যথা,অতিরিক্ত ঘামও ওমিক্রনের উপসর্গ।
লন্ডনের কিংস কলেজের জেনেটিক এপিডেমিওলজির অধ্যাপক টিম স্পেক্টর একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন, ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, খিদে হ্রাস পাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দিচ্ছে।
এ ছাড়াও ওমিক্রনের আরও কয়েকটি নতুন উপসর্গ সামনে এসেছে যেগুলি আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে শীতকালীন ঠান্ডা লাগার কারণে হচ্ছে। কিন্তু এগুলোও হতে পারে ওমিক্রন সংক্রমণের ইঙ্গিত—
১) গলা চুলকানো বা গলা জ্বালা ভাব।
২) মাথা ব্যথা।
৩) ঘন ঘন নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
উপরের কোনো একটি বা দুটি বা ততোধিক উপসর্গ আপনার মধ্যে দেখা দিলে এক মুহূর্ত দেরি না করে অতি অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিন। ফলাফল পজিটিভ এলে নিভৃতবাসে থাকুন।
অ্যান্টিবডিকে বোকা বানিয়ে যেভাবে কোষ থেকে কোষে ছড়ায় করোনাভাইরাস
নিজেকে বাঁচাতে আর দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে মানবদেহে ঢুকে চোরাপথে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। কোষ থেকে কোষে। যা মানবদেহের অ্যান্টিবডিগুলো টেরও পাচ্ছে না। মানবদেহের ভিতরে থাকা ‘প্রহরী’ (অ্যান্টিবডি)-দের চোখে এই ভাবে ধুলা দিতে পারছে বলেই দ্রুত সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠছে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস। ওমিক্রন, ডেল্টা-সহ ভাইরাসের সবক’টি রূপেরই আছে এই অনায়াস দক্ষতা।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা। এর ফলে, আরো কার্যকরী নতুন ওষুধ বা টিকা আবিষ্কারের পথ খুলে যেতে পারে অনতিবিলম্বে।
গবেষকরা পরীক্ষা চালিয়েছেন গবেষণাগারে। কালচার্ড মানব দেহকোষের ওপর। তারা দেখেছেন, মানবশরীরে ঢোকার পরপরই করোনাভাইরাস তার বহিরাবরণের ভিতরে থাকা পদার্থ (আরএনএ-র মতো ‘ভাইরাল পার্টিক্লস’) বের করছে না। মানবশরীরের অ্যান্টিবডিগুলোকে ধোঁকা দিতে। যাতে তারা বুঝতে না পারে বাইরে থেকে কোনো হানাদার ঢুকে পড়েছে মানবশরীরে। কারণ, অ্যান্টিবডিগুলো হানাদারি টের পেলে ভাইরাসের মুশকিল। তার শরীর থেকে বেরিয়ে আসা ভাইরাল পার্টিক্লগুলোকে তখন নিষ্ক্রিয় করে দেবে অ্যান্টিবডি।
তাই করোনাভাইরাস মানবশরীরে ঢোকার পর চট করে ভাইরাল পার্টিক্লগুলো তার দেহের ভিতর থেকে বের না করে দিয়ে আশ্রয়দাতার কোষগুলোর গায়ে গিয়ে লেগে থাকে। তাদের এভাবে সেঁটে থাকতে সাহায্য করে মানব দেহকোষের বাইরের আবরণীতে থাকা এসিই-২ প্রোটিন। আর মানবকোষগুলোর গায়ে নোঙর ফেলতে ভাইরাসকে সাহায্য করে তাদের আবরণীর বাইরে থাকা শুঁড়ের মতো স্পাইক প্রোটিন।
মূল গবেষক ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক শান-লু লিউ বলেছেন, ‘এই ভাবে অভিনব উপায়ে চোরাপথে মানবদেহে একটি কোষ থেকে অন্য কোষে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের সবক’টি রূপই। মানবদেহের অ্যান্টিবডিগুলি যা টেরই পাচ্ছে না। যখন পাচ্ছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কোষের প্রাচীর ভেঙে তার ভিতরে ঢুকে পড়েছে ভাইরাস। আর তার দেহের ভিতরে থাকা ভাইরাল পার্টিক্লগুলোকে বের করে দিয়েছে। ফলে মানব দেহকোষের ভিতরে তখন জোরকদমে শুরু হয়ে গেছে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি (‘রেপ্লিকেশন’)।’
এভাবে কোষ থেকে কোষে অনেকটা তরঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। যা মানবদেহের অ্যান্টিবডিগুলো টেরই পাচ্ছে না।
যখন তা টের পাচ্ছে মানবদেহের প্রহরী অ্যান্টিবডিগুলো ততক্ষণে আশ্রয়দাতার ‘ধন’ চুরি করে নিয়েছে ভাইরাস!
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা