কাজাখস্তানে এত সম্পদ!
কাজাখস্তানে এত সম্পদ! - ছবি : সংগৃহীত
মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র কাজাখস্তান রাশিয়ার জন্য কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিবেশী। রাশিয়ার সাথে বিশাল সীমান্ত, ২৫ ভাগ রুশভাষী জনগণের বসবাস ছাড়িয়ে অঞ্চলটি রাশিয়ার কাছে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে তার ব্যাপক খনিজ মজুদের জন্য!
→ কাজাখস্তান প্রতিদিন ১.৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। যা বিশ্বের মোট চাহিদার ২ ভাগ। অপরিশোধিত তেল রফতানির তালিকায় বিশ্বে দেশটির অবস্থান নবম। বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, তেল রিজার্ভের দিক থেকে বিশ্বে ১২ তম অবস্থানে আছে দেশটি। তবে ধারণা করা হয় মজুদ বৃদ্ধির নিরিখে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটি ৫ম তম অবস্থানে চলে আসবে বিশ্বের মধ্যে।
→ প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানিতে বিশ্বে ১২ তম অবস্থানে রয়েছে কাজাখস্তান। প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীন তার মোট চাহিদার ২৫ ভাগ গ্যাস আমদানি করে কাজাখস্তান থেকে।
এক হিসেবে জানা যায়, প্রতিদিন চীনে ২৭ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস রফতানি করা হয় কাজাখস্তান থেকে। ফলে কাজাখস্তানের গ্যাসলাইনের ওপর হামলা অথবা কাজাখস্তানের রাজনৈতিক স্থবিরতা চীনের বিশাল অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
→ কয়লা রফতানিতেও বিশ্বে ৯ম অবস্থানে রয়েছে কাজাখস্তান এবং কয়লা রিজার্ভে তাদের অবস্থান বিশ্বে ১০ম।
→ বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ ইউরোনিয়ামের অন্যতম উৎপাদক রাষ্ট্র হলো কাজাখস্তান! বিশ্বের মোট ইউরোনিয়ামের ৪০ ভাগ যোগান আসে কাজাখস্তান থেকে।
আর তাই চলমান অস্থিরতার জন্য বিশ্ব বাজারে ইউক্রেনের দাম ইতোমধ্যে ৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য সরবরাহদাতা কাজাখস্তান আজ সরকার বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল।
→ চীন, দক্ষিণ আফ্রিকার পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয়রনের মজুত রয়েছে কাজাখস্তান। পাশাপাশি কপার, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন, ক্রোমিয়াম সহ বেশিরভাগ মূল্যাবান ধাতু উৎপাদিত হয় কাজাখস্তানে। কপার উৎপাদনে দেশটির অবস্থান ১০ম।
আর তাই কাজাখস্তানের চলমান অস্থিরতার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছে বিশ্বের স্টিল এবং নির্মাণ খাতগুলো।
→ বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা বিটকয়েনের দ্বিতীয় যোগানদাতা দেশ কাজাখস্তান। বিটকয়েনের ১৮ ভাগ উৎপাদন আসে কাজাখস্তান থেকে।
অর্থাৎ বলা যায়, বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক, জ্বালানি, নির্মাণ, মুদ্রাসহ বড় সবগুলো সেক্টরের কাঁচামালের অন্যতম যোগানদাতা রাষ্ট্র হলো কাজাখস্তান। স্বাভাবিকভাবেই কাজাখস্তানে অস্থিরতা তৈরি হওয়া মানে বিশ্বের মেজর অর্থনৈতিক সেক্টরগুলোতে স্থবিরতা নেমে আসা। কিন্তু অজনপ্রিয়, একনায়কতন্ত্রের শাসককে ক্ষমতায় রেখে পশ্চিমা বিশ্ব, রাশিয়া ও চীনের লাভটা কি?
৪.
কাজাখস্তানে রুশ-সমর্থিত সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সামরিক অভিযান!
কাজাখস্তানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তাদের সম্পদের বেশিরভাগই ইউরোপে বিনিয়োগ করে রেখেছে। আর তাই এই শাসকশ্রেণি থাকা মানে ইউরোপীয় দেশগুলোর আর্থিক লাভ। কেননা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে কোনো সরকার কাজাখস্তানের ক্ষমতায় এলে তারা দেশের বাইরে সম্পদ পাচার না করে দেশের কাজেই লাগাবে। কিন্তু কাজাখবাসীর দুর্ভাগ্য, এত বিশাল সম্পদ পেয়েও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকশ্রেণির জন্য তারা আজ বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবার মতো শক্তি হতে পারেনি।
ভূরাজনৈতিক দিক থেকে কাজাখস্তান সবসময়ই রাশিয়ার অনুগত ছিল। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এ রাষ্ট্রটি কখনোই ইইউ বা ন্যাটোর সাথে রাজনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টাও করেনি। রাশিয়ার এমন পরম মিত্রের দুর্দিনে তাই আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে হলেও কাজাখস্তানে সৈন্য পাঠিয়েছে রাশিয়া।
নিজ দেশের জনগণের ওপর বাইরের দেশের এমন আক্রমণ উপভোগ করে হয়তো আনন্দেই দিন কাটাচ্ছে কাজাখস্তানের শাসকগোষ্ঠী। কারণ তাদের তো মানুষ না, মাটি দরকার!
সব মিলিয়ে বলা যায়, পারষ্পরিক বিরোধ থাকলেও রাশিয়া, চীন ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর কেউই কাজাখস্তানের সাধারণ মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। কারণ যত দিন কাজাখস্তানে অজনপ্রিয় সরকার বসে থাকবে, তত দিন দেশটির সম্পদ লুটেপুটেই খেতে পারবে পরাশক্তিগুলো।
অন্য সব পরাশক্তির তুলনায় কাজাখস্তানে রুশদের আগ্রাসন একটু বেশিই চোখে পড়বে। কারণ অন্যরা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক শোষণের জন্য কাজাখ সরকারকে তোয়াজ করলেও রাশিয়ার এখানে বহুমুখী স্বার্থ বিরাজমান। সামরিক, অর্থনৈতিক, ভূরাজনৈতিক প্রতিটা দৃষ্টিকোণ থেকে রাশিয়ার জন্য অনুগত কাজাখ সরকারের বিকল্প আর কিছু নেই।