কাজাখস্তানে রুশ-সমর্থিত সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সামরিক অভিযান!
কাজাখস্তানে রুশ-সমর্থিত সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সামরিক অভিযান! - ছবি : সংগৃহীত
কাজাখস্তানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তাদের সম্পদের বেশিরভাগই ইউরোপে বিনিয়োগ করে রেখেছে। আর তাই এই শাসকশ্রেণি থাকা মানে ইউরোপীয় দেশগুলোর আর্থিক লাভ। কেননা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে কোনো সরকার কাজাখস্তানের ক্ষমতায় এলে তারা দেশের বাইরে সম্পদ পাচার না করে দেশের কাজেই লাগাবে। কিন্তু কাজাখবাসীর দুর্ভাগ্য, এত বিশাল সম্পদ পেয়েও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকশ্রেণির জন্য তারা আজ বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবার মতো শক্তি হতে পারেনি।
ভূরাজনৈতিক দিক থেকে কাজাখস্তান সবসময়ই রাশিয়ার অনুগত ছিল। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এ রাষ্ট্রটি কখনোই ইইউ বা ন্যাটোর সাথে রাজনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টাও করেনি। রাশিয়ার এমন পরম মিত্রের দুর্দিনে তাই আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে হলেও কাজাখস্তানে সৈন্য পাঠিয়েছে রাশিয়া।
নিজ দেশের জনগণের ওপর বাইরের দেশের এমন আক্রমণ উপভোগ করে হয়তো আনন্দেই দিন কাটাচ্ছে কাজাখস্তানের শাসকগোষ্ঠী। কারণ তাদের তো মানুষ না, মাটি দরকার!
সব মিলিয়ে বলা যায়, পারষ্পরিক বিরোধ থাকলেও রাশিয়া, চীন ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর কেউই কাজাখস্তানের সাধারণ মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। কারণ যত দিন কাজাখস্তানে অজনপ্রিয় সরকার বসে থাকবে, তত দিন দেশটির সম্পদ লুটেপুটেই খেতে পারবে পরাশক্তিগুলো।
অন্য সব পরাশক্তির তুলনায় কাজাখস্তানে রুশদের আগ্রাসন একটু বেশিই চোখে পড়বে। কারণ অন্যরা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক শোষণের জন্য কাজাখ সরকারকে তোয়াজ করলেও রাশিয়ার এখানে বহুমুখী স্বার্থ বিরাজমান। সামরিক, অর্থনৈতিক, ভূরাজনৈতিক প্রতিটা দৃষ্টিকোণ থেকে রাশিয়ার জন্য অনুগত কাজাখ সরকারের বিকল্প আর কিছু নেই।
রাশিয়ার এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোনো ইউরোপীয় শক্তিই প্রতিরোধ করার সাহস পাবে না৷ কারণ ইউরোপের গ্যাসের প্রধান যোগানদাতা হলো রাশিয়া। জার্মানির ৫৮ ভাগ, ইতালির ২২ ভাগ গ্যাসের যোগান আসে রাশিয়া থেকে। পাশাপাশি ইউরোপের সর্ববৃহৎ জনশক্তিসম্পন্ন এই দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে বিভিন্ন পণ্যের মার্কেট হারাতে নারাজ ইউরোপীয় ব্যাবসায়ীরাও।
তুরস্ক মাঝে মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে গরম বক্তব্য দিলেও দিনশেষে পুতিনের পিছনেই ছাতা ধরতে বাধ্য তুরস্ক। কেননা তুরস্কের গ্যাসের ২৫ ভাগ আসে রাশিয়া থেকে (সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য এই হার কমে এসেছে)। পাশাপাশি তুরস্কের অন্যতম প্রধান আয়ের খাত পর্যটন শিল্প পুরোপুরি রুশ জনগণের আগমনের ওপর টিকে আছে। রাশিয়া কর্তৃক কোনো প্রকার অবরোধ তুর্কি পর্যটন ব্যাবসাকে পথে বসিয়ে দিতে সক্ষম। এছাড়াও তুর্কি কৃষি পণ্যের অন্যতম বাজার হলো রাশিয়া।
সামরিক দিক থেকে ও রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল তুরস্ক। বিভিন্ন সমরাস্ত্র ক্রয় ছাড়াও সিরিয়া, লিবিয়া, আজারবাইজানে তুরস্কের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে রুশ মৌনসম্মতির কোনো বিকল্প নেই।
অর্থাৎ বলা যায়, আগামী দিনগুলোতে ইউরোপ আর এশিয়ার বুকে ছড়ি ঘোরাতে রাশিয়ার সামনে আর কোনো বাধা নাই। এখন দেখার বিষয়, এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ লিডার ভ্লাদিমির পুতিন এই ছড়ি ঘুরানোর ক্ষেত্রে তার পূর্ববর্তী রুশ সাম্রাজ্য বা সোভিয়েত ইউনিয়নকে টক্কর দিতে সক্ষম হবে কি না। উরাল পর্বতমালা পেরিয়ে রুশ আধিপত্য এখন ভূমধ্যসাগরের উষ্ণ জলভূমি ছাপিয়ে একদিকে বলকান অন্যদিকে ককেশাস পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়েছে।
জর্জিয়া, ইউক্রেন, মলদোভা, বেলারুশ, আর্মেনিয়া, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, লিবিয়ার পর কাজাখস্তানে রুশ সৈন্য অবতরণ বিশ্ব রাজনীতির জন্য এক নতুন প্রেক্ষাপটই বটে। আর তাই বলাই যায়, চারদিকে রুশ সামরিক বাহিনীর দুর্দান্ত আক্রমণ বার্তা দিচ্ছে এক নব্য রুশ সাম্রাজ্যের! আর নতুবা এক গ্রেটার সোভিয়েত ইউনিয়নের।