দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে যাবে ভারত!
বিরাট কোহলি - দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে যাবে ভারত!
প্রথম দুই ম্যাচ শেষে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা চলমান টেস্ট সিরিজে ১-১ সমতা বিরাজ করছে। তবে কেপটাউনে সিরিজে তৃতীয় ও শেষ টেস্ট দক্ষিণ আফ্রিকাই জিতবে বলে জানান দেশটির সাবেক পেসার ভারনন ফিলান্ডার। একই সাথে ভারতের বিপক্ষে সিরিজও জয় নিশ্চিত করবে প্রোটিয়ারা।
সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দারুণ এক জয়ের স্বাদ পায় ভারত। দাপট দেখিয়ে ১১৩ রানে ম্যাচ জিতে নেয় টিম ইন্ডিয়া। তবে জোহানেসবার্গে জয়ের হাসি ফুটে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় প্রোটিয়ারা। এতে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা আনে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম যে ম্যাচে ভারত জিতেছিল, তাতে অধিনায়কত্ব করেছিলেন বিরাট কোহলি। আর গত ম্যাচে তিনি ইঞ্জুরির কারণে খেলতে পারেননি। তবে এই টেস্টে তিনি খেলবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সিরিজে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই আত্মবিশ্বাসই শেষ টেস্ট ও সিরিজ জিততে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন ফিলান্ডার।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না কেপটাউনে দুই দলের মধ্যে খুব বেশি প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা হবে। শেষ টেস্ট ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সব দিক দিয়েই খুব শক্তিশালী দেখাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার শুধু একটি জয় দরকার ছিল, যা তারা শেষ ম্যাচেই পেয়ে গেছে। একটি জয় আপনাকে একটি দল হিসাবে আত্মবিশ্বাস এবং গতি এনে দেবে। সিরিজ জয়ের দারুণ সুযোগের বিষয়টি তাদের দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ করবে।’
ভারত দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের ভালো সুযোগ হাতছাড়া করেছে উল্লেখ করে ফিলান্ডার বলেন, ‘দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের জয়ের যথেষ্ট সুযোগ ছিল। কিন্তু ভারত সুযোগ হেলায় হারিয়েছে। ভারতের ব্যাটসম্যানরা তেমন পারফরমেন্স করতে পারেনি। যে কারণে দ্বিতীয় টেস্টে হারতে হয়েছে।’
দ্বিতীয় টেস্ট হারে ভারতের মনোবল ভেঙ্গে গেছে বলে জানান ফিলান্ডার। এজন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের কৃতিত্ব দিচ্ছেন তিনি। সেই সাথে দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাট করা অধিনায়ক ডিন এলগারের প্রশংসাও করেছেন ফিলান্ডার, ‘দারুণভাবে সফর শুরু করলেও, সেটি ধরে রাখতে পারেনি ভারত। এজন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। তারা ভারতের ব্যাটারদের বড় ইনিংস খেলতে দেয়নি। আবার এমন কঠিন পিচে এলগার, দারুণ এক ইনিংস খেলেছে। যা দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে সমতা আনতে সহায়তা করে। পরের টেস্টে বোলার ও ব্যাটাররা আরো ভালো করবে। কারণ তাদের আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বেড়ে গেছে।’
আগামীকাল কেপ টাউনে শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট।
বোল্টের তোপে ১২৬ রানে অলআউট বাংলাদেশ
নিউজিল্যান্ডের বাঁ-হাতি পেসার ট্রেন্ট বোল্টের বোলিং তোপে ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১২৬ রানে অলআউট হয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ। মাত্র দুই টাইগার ব্যাটার ডাবল ফিগারে পা রাখতে পারেন। বোল্ট ৫ উইকেট নেন। এর আগে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫২১ রান করে নিউজিল্যান্ড। এতে প্রথম ইনিংস থেকে ৩৯৫ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড।
আগের দিনই ব্যাট হাতে নেমে বড় স্কোরের পথ তৈরি করে রেখেছিলো নিউজিল্যান্ড। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম লাথামের অপরাজিত ১৮৬ ও ডেভন কনওয়ের অপরাজিত ৯৯ রানের কল্যাণে ১ উইকেটে ৩৪৯ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করেছিলো নিউজিল্যান্ড।
দ্বিতীয় দিনের প্রথম বলেই এবাদত হোসেনকে বাউন্ডারি মেরে তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন কনওয়ে। ১৪৯ বলে তিন অংকে পা রাখেন তিনি। রান আউটের ফাঁদে পড়ে ১০৯ রানে থামেন কনওয়ে। ১৬৬ বল খেলে ১২টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরি করা কনওয়ে। দ্বিতীয় উইকেটে লাথামের সাথে ৩৪৩ বলে ২১৫ রান করেন কনওয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি এটি নিউজিল্যান্ডের।
এরপর বিদায়ী টেস্ট সিরিজ খেলতে নামা রস টেইলরকে নিয়ে ডাবল-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন লাথাম। ১০১তম ওভারে তাসকিন আহমেদের বলে চার মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন লাথাম। এজন্য ৩০৫ বল মোকাবেলা করেন তিনি। ২০১৮ সালে ওয়েলিংটনে শ্রীলংকার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল-সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন লাথাম।
৪টি চারে দারুনভাবে শুরু করা টেইলরকে ২৮ রানে আটকে দেন প্রথম টেস্টের হিরো এবাদত। এরপর হেনরি নিকোলসকেও খালি হাতে বিদায় দেন এবাদত। ড্যালি মিচেলকে বিদায় করেন শরিফুল ইসলাম। ৩ রান করেন মিচেল। ফলে প্রথম সেশনেই ৪ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
ষষ্ঠ উইকেটে ৭৮ বলে ৭৬ রান যোগ করেন লাথাম ও ব্লান্ডেল। মারমুখী মেজাজে ছিলেন ব্লান্ডেল। ১২৪তম ওভারে প্রথম বল করতে এসে ১০ রান দেন মোমিনুল। ১২৬তম ওভারেও আক্রমনে ছিলেন মোমিনুল। প্রথম তিন বলে দু’টি ছক্কা ও একটি চার মারেন লাথাম। এতে আড়াইশতে পা রাখেন লাথাম। তবে ঐ ওভারের চতুর্থ বলে লাথামকে শিকার করেন মোমিনুল। ৫৫২ মিনিট উইকেটে থেকে ৩৭৩ বলে ২৫২ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন লাথাম। নিজের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস খেলার পথে ৩৪টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন লাথাম।
লাথামের আউটের কিছুক্ষণ পরই ৬ উইকেটে ৫২১ রানে নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষনা করে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ কিউইদের। ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন ব্লান্ডেল। এই ইনিংসে বল হাতে এবাদত-শরিফুল ২টি করে ও মোমিনুল ১টি উইকেট নেন।
দ্বিতীয় সেশনে ব্যাট হাতে নেমে মহাবিপদেই পড়ে বাংলাদেশ। সাউদি-বোল্টের তোপে চা-বিরতির আগে ১১ রানে ৪ উইকেট হারায় টাইগাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোল্টের ডেলিভারিতে খোঁচা দিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন সাদমান।
৫ বল খেলে সাউদির বলে বোল্ড হন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাইম। অভিষেকে বাংলাদেশের ২৫তম ব্যাটার হিসেবে খালি হাতে ফিরেন নাইম। দেশের শততম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে এ ম্যাচ খেলতে নেমেছেন তিনি। এরপর বোল্টের সুইংয়ের সামনে হার মেনে স্লিপে ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৪ রান করেন তিনি। আর রানের খাতা খোলার আগেই সাউদির ফুল লেংথের বলে বোল্ড হন টাইগার অধিনায়ক।
৩৭ বলে ১১ রানে ৪ উইকেট পতনের পর পরিস্থিতি সামাল দিয়ে চা-বিরতিতে যান লিটন দাস ও ইয়াসির আলি। চা-বিরতির পর ফিরে দ্বিতীয় বলে লিটনকে ফেরত পাঠান বোল্ট। উইকেটে পেছনে ক্যাচ দেন ৮ রান করা লিটন।
২৭ রানের মধ্যে ৫ ব্যাটারের বিদায়ে মহা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে একটি ভালো জুটি অপেক্ষায় ছিলো টাইগাররা। দলের অপেক্ষার অবসান ঘটান ইয়াসির ও উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান। ষষ্ঠ উইকেটে ১০৭ বলে ৬০ রান যোগ করেন তারা।
দলীয় ৮৭ রানে নুরুলকে লেগ-বিফোর আউট করেন সাউদি। রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট রক্ষা করতে পারেননি নুরুল। ৬টি চারে ৬২ বলে ৪১ রান করেন নুরুল।
এরপর মেহেদি হাসান মিরাজ উইকেটে টিকে থাকতে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু বোল্টের সুইংয়ে বোল্ড হন মিরাজ। এই উইকেট নিয়ে টেস্টে ৩শ উইকেট পূর্ণ করেন বোল্ট।
বোল্ট-সাউদি উইকেট নিলেও, কাইল জেমিসন ছিলেন উইকেট শূন্য । অবশেষে তাসকিন আহমেদকে তুলে প্রথম উইকেট নেন জেমিসন। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে এক প্রান্ত আগলে রাখা ইয়াসির হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন। ৩ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পান ইয়াসির । তবে অর্ধশতকের পর জেমিসনের বলে আউট হন ইয়াসির। ৭টি চারে ৯৫ বলে ৫৫ রান করেন ইয়াসির। ইয়াসির ও নুরুলই দু’অংকের কোটা স্পর্শ করতে পারেন।
শেষ ব্যাটার শরিফুলকে বোল্ড করে ইনিংসে পঞ্চম উইকেট পকেটে ভরেন বোল্ট। ৭৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে নবমবারের মত পাঁচ উইকেট নিলেন বোল্ট। ৪১ দশমিক ওভারে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ১২৬ রানে। এরপরই দিনের খেলার ইতি ঘটে।
নিউজিল্যান্ডের বোল্ট ৪৩ রানে ৫, সাউদি ২৮ রানে ৩ ও জেমিসন ৩২ রানে ২ উইকেটে নেন।
সূত্র : বাসস