নারীরা কেন বন্ধ্যাত্বে থাকে, চিকিৎসা কী
নারীরা কেন বন্ধ্যাত্বে থাকে - ছবি : সংগৃহীত
নারীরা প্রধানত কী কারণে সন্তান ধারণে অক্ষম হয়ে থাকেন সে সম্পর্কে ধারণা দিলেন ডা. সেলিনা আক্তার :
প্রেগন্যান্সির জন্য জরুরি পলিসিস্টিক ওভারি, যার মাধ্যমে একটা করে ওভাম আসার কথা, সেটা আসে না।
* জরায়ুর কিছু সমস্যা থাকে যা জন্মগত হতে পারে আবার অসুখের কারণে হতে পারে।
* জন্মগত সমস্যার কারণে হয়ত ডিম আসছে না, তার টিউব ব্লক, জরায়ু যেটা আছে সেটা বাচ্চাদের মতো।
* আরো কিছু অসুখ আছে, যেমন : ওভারিয়ান চকলেট সিস্ট, এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণে হতে পারে।
হরমোনের কারণেও হতে পারে। যেমন থাইরয়েডের সমস্যার কারণে হতে পারে।
* আর যৌনবাহিত রোগের কারণে মেয়েদের প্রজনন অঙ্গগুলোর ক্ষতি করে। সেজন্য বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
পুরুষের যেসব কারণে বন্ধ্যত্ব
জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ফজল নাসের বলছেন, তাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে পুরুষরা বন্ধ্যত্বের সমস্যা নিয়ে অনেক দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যান।
কেননা সন্তান না হলে শুরুতেই স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়। পুরুষদের বন্ধ্যত্বের মূল কারণগুলো কী জানালেন তিনি:
* একটা কারণ এজোস্পার্মিয়া, অর্থাৎ বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু নেই। তার নালির কোথাও বাধা সৃষ্টি হয়েছে তাই শুক্রাণু মিলতে পারছে না। শুক্রাণু তৈরি হওয়ার যে স্থান অণ্ডকোষ, কোনো কারণে সেটি তৈরিই হয়নি।
* অনেক সময় শুক্রাণু থাকে কিন্তু পরিমাণে কম থাকে।
* আবার শুক্রাণুর পরিমাণ ঠিক আছে কিন্তু মান ঠিক নেই। যার ফলে সে ডিম ফার্টিলাইজ করতে পারে না।
* এছাড়া টেস্টোস্টেরন হরমোনও 'সিক্রেশন' হতে হবে।
* প্রজনন অঙ্গে কোনো ধরনের আঘাত
* অস্ত্রোপচারের কারণে সৃষ্ট বাধা
* প্রজনন অঙ্গে যক্ষ্মা
* ডায়াবেটিস
* ছোটবেলায় মাম্পস
* এমনকি মাথায় চুল গজানোর ওষুধও পুরুষদের সন্তান ধারণের অক্ষমতার উৎস।
বন্ধ্যাত্ব যেভাবে সামাজিক নিগ্রহের উৎস
জন্মগত ত্রুটি অথবা কোন অসুখ যে কারণেই হোক না কেন, নারী ও পুরুষ সমস্যা যারই হোক না কেন, সন্তান ধারণে অক্ষমতা বাংলাদেশে বিবাহিত দম্পতিদের জন্য সামাজিক ও পারিবারিক নিগ্রহের উৎস।
তুলনামূলকভাবে এর শিকার নারীরা বেশি হন। অনেক সময় পুরুষের সমস্যা হলেও।
৫৫ বছর বয়সী কিশোরগঞ্জের মোহাম্মদ আবুল কালাম একসময় জেনেছেন তার নিজের ও স্ত্রী দু'জনেরই সন্তান ধারণে জটিলতা রয়েছে।
কিন্তু তারপরও তার স্ত্রীকেই নিগ্রহ সহ্য করতে হয়েছে। আবুল কালাম বলছিলেন, সন্তান ধারণে অক্ষমতা কিভাবে নিজের ও তার স্ত্রীর মানসিক কষ্টের কারণ ছিল।
'সামাজিকভাবে আমাকে কেউ কিছু বলে নাই কিন্তু আমার স্ত্রীকে বলত। বিশেষ করে আমার মা-বাবা। ও তখন কষ্ট পেত। আমি জানি আমার মধ্যে কমতি আছে কারণ ডাক্তার বলেছে।'
'বিষয়টা একান্তই কষ্টের যে আমার সাথে একই সময়ে বিয়ে করলো তাদের বাচ্চা হইছে, তারা বাচ্চা নিয়ে আনন্দ ফুর্তি করছে কিন্তু আমরা করতে পারছি না। এটা কষ্টদায়ক ছিল বিশেষ করে আমার স্ত্রীর জন্য। আমার স্ত্রীর কথাতেই কিন্তু আমি ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। তা নাহলে কিন্তু যেতাম না। একটা সন্তানের জন্য ও যতটুকু ব্যাকুল হয়েছিল আমাকে যে সে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে।'
এই ব্যাকুলতার উৎস ঠিক কতটা আসলে নিজের জন্য চাওয়া? নাকি সম্ভবত সামাজিক নিগ্রহ থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষাই এর কারণ?
বাংলাদেশের সমাজে সন্তানহীনদের বাঁজা, আটকুঁড়ে এসব নামে ডাকা হয়।
ঘুম থেকে উঠে সন্তানহীন কারো মুখ দেখলে, কোন শুভ কাজে এমন কেউ উপস্থিত থাকলে অমঙ্গল হবে বলে মনে করার একটি সংস্কৃতি এখনো রয়েছে।
সন্তানহীনদের জন্য চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে গবেষণা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা।
তিনি বলছেন, এর পেছনে রয়েছে সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য পরবর্তী প্রজন্ম রেখে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
'সমাজ চায় যে সমাজকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সবার বড় দায়িত্ব হচ্ছে সমাজকে টিকিয়ে রাখতে হবে। টিকিয়ে রাখতে হলে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম লাগবে। পরবর্তী প্রজন্ম না থাকলে যেকোনো প্রজাতি এনডেনজার্ড হয়ে পড়বে। সামাজিকভাবে এই দায়িত্ব বর্তায় যে আর একটি প্রজন্ম রেখে যেতে হবে। আর সেটি হতে হলে বাচ্চা হতে হবে।'
'আমাদের এখানে যেহেতু বিয়ের মধ্য দিয়ে বাচ্চা হয়, আমাদের এখানে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, সামাজিকভাবে ওই ধারনা তৈরি হয়ে আছে যে বিয়ে হলেই বাচ্চা হবে। বাচ্চা হওয়াটা পৃথিবীর সব সমাজেই গুরুত্বপূর্ণ', বিবিসিকে বলছিলেন অধ্যাপক সুলতানা।
তিনি বলছেন, সন্তান ধারণে অক্ষম নারী পুরুষের সন্তানের জন্য ব্যাকুলতার আর একটি কারণ বার্ধক্যে তাদের দায়িত্ব কে নেবে সেই দুঃশ্চিন্তা।
সূত্র : বিবিসি