পুরুষের যেসব কারণে হয় বন্ধ্যত্ব : প্রতিকার যেভাবে
পুরুষের যেসব কারণে হয় বন্ধ্যত্ব : প্রতিকার যেভাবে - ছবি : সংগৃহীত
জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ফজল নাসের বলছেন, তাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে পুরুষরা বন্ধ্যত্বের সমস্যা নিয়ে অনেক দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যান।
কেননা সন্তান না হলে শুরুতেই স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়। পুরুষদের বন্ধ্যত্বের মূল কারণগুলো কী জানালেন তিনি :
* একটা কারণ এজোস্পার্মিয়া, অর্থাৎ বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু নেই। তার নালির কোথাও বাধা সৃষ্টি হয়েছে তাই শুক্রাণু মিলতে পারছে না। শুক্রাণু তৈরি হওয়ার যে স্থান অণ্ডকোষ, কোনো কারণে সেটি তৈরিই হয়নি।
* অনেক সময় শুক্রাণু থাকে কিন্তু পরিমাণে কম থাকে।
* আবার শুক্রাণুর পরিমাণ ঠিক আছে কিন্তু মান ঠিক নেই। যার ফলে সে ডিম ফার্টিলাইজ করতে পারে না।
* এছাড়া টেস্টোস্টেরন হরমোনও 'সিক্রেশন' হতে হবে।
* প্রজনন অঙ্গে কোনো ধরনের আঘাত
* অস্ত্রোপচারের কারণে সৃষ্ট বাধা
* প্রজনন অঙ্গে যক্ষ্মা
* ডায়াবেটিস
* ছোটবেলায় মাম্পস
* এমনকি মাথায় চুল গজানোর ওষুধও পুরুষদের সন্তান ধারণের অক্ষমতার উৎস।
পুরুষদের জন্য কিছু চিকিৎসার কথা বলছিলেন চিকিৎসক ফজল নাসের :
* ওষুধ দিয়ে শুক্রাণু বাড়ানো যেতে পারে।
* স্বাভাবিক হচ্ছে প্রতি মিলিতে চল্লিশ থেকে ১২০ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকার কথা। যদি সংখ্যাটা ১০ মিলিয়নের নিচে নেমে যায়, তাহলে কৃত্রিম গর্ভধারণে যেতে হবে।
* যদি পুরোপুরি 'অবস্ট্রাকশন' হয়ে থাকে যে, শুক্রাণু আসছে না, তাহলে দেখতে হবে অণ্ডকোষটা সক্রিয় আছে কিনা।
* অণ্ডকোষ সক্রিয় থাকলে সেখান থেকে সুঁই দিয়ে শুক্রাণু নিয়ে এসে টেস্টটিউব পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেয়া যায়।
* পৃথিবীর ভালো কেন্দ্রগুলোতেও অবস্ট্রাকশনের সার্জারি সফল হওয়ার হার মোটে ২৫ শতাংশ এবং এটি খুবই ব্যয়বহুল, বিবিসিকে বলেন নাসের।
ধৈর্য, ব্যয় ও শারীরিক কষ্ট
বিশ্বব্যাপী পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় সাফল্যের হার কম। নারী পুরুষ দুজনের জন্যই বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। এক সপ্তাহের ডোজেই এটি সেরে যায় না। তাই এক্ষেত্রে ধৈর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এটি প্রায়ই ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। বিশেষ করে টেস্টটিউব পর্যন্ত যদি বিষয়টি গড়ায়।
বেসরকারি পর্যায়ে এর খরচ দুই থেকে আড়াই লাখ। কিন্তু এটি একবারে সফল নাও হতে পারে।
আর বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা অনেক কষ্টকর। ঢাকায় একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদক ফারিহা আফসানা কান্তা সন্তানহীন হওয়ার সামাজিক যতরকম হয়রানি সবকিছুই সামাল দিয়েছেন।
কিন্তু এখন এর চিকিৎসায় কতটা শারীরিক কষ্টের শিকার হয়েছেন সেটি বর্ণনা করে তিনি বলছিলেন, "হরমোন ইনজেকশনে অসময়ে ব্লিডিং হয়। দেখা যায় আমার পিরিয়ডের সময় না কিন্তু আটদিন দশদিন ধরে চলে। পেটে অসম্ভব ব্যথা হয়। চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়"।
'এছাড়া ওষুধ খেতে হয় ইনজেকশনের ডেটের সাথে হিসেব করে। সেটার হিসেব মেলানো। মাসিকের দ্বিতীয় দিনে ঔষধ খেতে হবে। মিস হয়ে গেলে ওই মাসের কোর্সটা আর হয় না। ভুল হওয়ার ভয়, কিছুদিন পর পর সময় বের করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া এটা খুব স্ট্রেসফুল।'
তার কাছে ইদানীং মনে হয় যতটা না নিজের জন্য সন্তান নেবার চেষ্টা করছেন তার চেয়ে বোধহয় সামাজিক চাহিদা পূরণ করাটাই এখন প্রধান কারণ।
ফারিহা আফসানা কান্তা, কিশোরগঞ্জের মোহাম্মদ আবুল কালাম আর বাউফলের সেই মনমরা নারী - সবার শারীরিক ও সামাজিক সমস্যা একই রকম না হলেও অন্তত একটি জায়গায় যেন সবার মিল রয়েছে।
আর তা হলো একটি সন্তান প্রাপ্তির জন্য নিঃসন্তান দম্পতিরা বহুদূর পর্যন্ত যেতে প্রস্তুত।
সূত্র : বিবিসি