পরনির্ভর ব্যক্তি ধনী হলেও ভিক্ষামুখীই থাকে
পরনির্ভর ব্যক্তি ধনী হলেও ভিক্ষামুখীই থাকে - ছবি : সংগৃহীত
পরনির্ভর ব্যক্তি কখনো কোনো সময়েই সচ্ছলতা ও সমৃদ্ধির সন্ধান পায় না। পরনির্ভরতার অভ্যাস তাকে ধীরে ধীরে ভিক্ষামুখী করে ফেলে। হয়তো সে দীনহীন ভিক্ষুকের মতো করুণার চাহনি দিয়ে হাত পাতে না।
তবে যাদের পরনির্ভরতা আছে তারা অনেকটা ভদ্র ভিক্ষুকের মতো হয়ে যায়; অনেক সময় তারা পেশাদারী ভিক্ষুকের চেয়েও বেশি বিরক্তিকর হয়ে উঠে। সারাজীবনে ওরা কারো কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারে না এবং জীবনভর পাওয়ার মানসিকতার কারণে, ওদেরও যে কাউকে দিতে হয়, এমন ধারণা তাদের বৈশিষ্ট্য থেকেই হারিয়ে যায়।
আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. ইসলাম গ্রহণ করার অপরাধে, মক্কার স্বজনদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে মদিনায় হিজরত করলেন। রাসুল সা. তাকে মদিনারই স্থায়ী বাসিন্দা ও সাহাবী সা'দ ইবনে আর-রাবিয়াহ রা.-. এর সাথে বন্ধুত্ব করিয়ে দেন।
ঘটনাস্থলেই সা'দ রা. তাকে বললেন, মদিনায় আমার দুটি প্রসিদ্ধ খেজুর বাগান আছে এবং সাথে আছে দু'জন স্ত্রী। আপনি আমার দুই স্ত্রীর যাকে সুন্দর লাগে বলুন তাকে তালাক দিয়ে দেই এবং যে বাগানটি পছন্দ করেন সেটি আপনাকে উপহার দেই।
এমন অপ্রত্যাশিত সংবাদে হয়তো একজন পরনির্ভর ব্যক্তির লোভের খায়েশ বহুগুণ বেড়ে যেত। কিন্তু আব্দুর রহমান রা. বললেন ভিন্ন কথা :
'তোমার পরিবার আর সম্পদের ওপর আল্লাহ'র রহমত বর্ষিত হোক, তুমি বরং আমাকে তোমাদের বাজারের পথটা দেখিয়ে দাও।'
তিনি আল্লাহর রাসুল সা.-এর মহান সাহাবি। মক্কার জীবনে প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ও নামকরা ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি কারো কাছে দায়বদ্ধ না হয়ে ওই দিনই ইয়াসরিবের 'কায়নুকা' বাজারে পাইকারি ঘি ও পনির কিনে খুচরা বিক্রি করে লাভের অর্থ দিয়ে অসচ্ছলতা দূর করেন এবং অল্প দিন পরেই তিনি বিয়ে করেন!
তিনি কখনো ভাবেননি, মক্কায় তার কত বড় ব্যবসা ছিল, আর আজকে তিনি অজানা অখ্যাত 'কায়ুনুকা' বাজারের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘি বিক্রি করছেন। তিনি আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেছিলেন এবং সম্ভাব্য সকল পথে নিজের রিজিকের তালাশ করেছেন।
পরে তিনি ঘোড়া ও ঘোড়ার জিনের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থকড়ির মালিক হয়ে যান। শেষ সময়ে তার এত সম্পদ হয়েছিল যার হিসাব করার মতো মানুষ পাওয়া যেত না। যুদ্ধে দান করার আহবান এলে তার দান করার ধরণ দেখে ঈর্ষান্বিত কিছু মানুষ বলাবলি করত, অচিরেই ইনি অহংকারে আক্রান্ত হবেন।
এমন সম্পদশালী মানুষটি এত সম্পদ কী করবেন দিশেহারা হয়ে, মদিনায় পণ্য আসার আগেই তা দান করে দিতেন। একদা পাঁচ থেকে সাত শ' উটের বিশাল একটি মালবাহী বাণিজ্য কাফেলা মদিনায় পৌঁছে। হজরত আয়েশা রা. তাকে দোয়া করেন। তিনি উটসহ সব মালামাল মানুষকে দান করে দেন।
তার মানে, ভাগ্য লুকিয়ে থাকে শ্রমের মধ্যে। বর্তমান সময়ে অনেক যুবক লেখাপড়া করেও, বিরাট ব্যবসা ফাদানোর জন্য পিতা, ভ্রাতা কিংবা আত্মীয় থেকে ধার কর্জ পায়নি বলে দোষারোপ করে সময় কাটায়। একেবারেই অনভিজ্ঞ মানুষ ব্যাংক লোন নিয়ে পরিবারকে পথে বসায়। মূলত যিনি কাজ জানে না তার হাতে কোটি টাকা থাকলেও, তিনি কখনো সফল হতে পারবেন না।
আর যিনি কাজ জানেন, তিনি সামান্য টাকাতেই নিজের ভাগ্য গড়তে পারেন। এক্ষেত্র আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. জীবন-দর্শন মুসলিম যুবকদের অন্যতম আদর্শ।
তাই চলুন কাজ করি, যেটা পাই সেটাই করি। কাজের মধ্যে সম্মান না খুঁজে বরং কাজের মধ্যেই ভাগ্য খুঁজি, কাজ নিয়েই বেঁচে থাকি। তবুও যেন পরনির্ভরশীল না হই, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তে নেই।