হঠাৎ কেন বাড়ছে করোনার সংক্রমণ
হঠাৎ কেন বাড়ছে করোনার সংক্রমণ - ছবি : সংগৃহীত
দেশে করোনা সংক্রমণের হার ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৩০ ভাগ বেড়েছে৷ আর এক সপ্তাহে বেড়েছে শতভাগ৷ লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ এক দিনে হাজার ছাড়িয়েছে৷
পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওমিক্রনের জন্য ১৫ দফা নির্দেশনার পর বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নতুন নির্দেশেনা জারি করেছে৷
গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে এক হাজার ১৪০ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন সাত জন৷
এর আগের দিন বুধবার মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯২ জন৷মারা গেছেন তিন জন৷ ২৪ ঘন্টায় সংক্রমণ বেড়েছে ২৭.৮৮ ভাগ৷ মৃত্যু বেড়েছে দুই গুণেরও বেশি৷ এক সপ্তাহ আগে ৩১ ডিসেম্বর ২৪ ঘন্টায় মোট আক্রান্ত হন ৫১২ জন৷ মারা যান দুই জন৷ সেই বিবেচনায় এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে শতকরা ১০৩ ভাগ৷
ডিসেম্বরের ৬ তারিখে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার শতকরা এক ভাগে নেমে এসেছিলো৷ ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়া এবং কমার মধ্য দিয়ে এই ধারা অব্যাহত ছিলো৷ ১৮ ডিসেম্বরেও ছিলো শতকরা এক ভাগের কিছু বেশি৷ কিন্তু এরপর থেকে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে৷গত ২ জানুয়ারি শনাক্তের হার ছিলো শতকরা ২.৯১ ভাগ৷
বাংলাদেশে এপর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৮৯ হজার ৯৪৭ জন৷ মারা গেছেন ২৮ হাজার ৯৭ জন৷ এপর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি৷ ৩১.০২ ভাগ৷ পুরুষের মৃত্যুর হার শতকরা ৬৩.৯৫ ভাগ৷ সংক্রমণ আর মৃত্যু দুইটিতেই শীর্ষে আছে ঢাকা বিভাগ৷ এপর্যন্ত বাংলাদেশে ওমিক্রনে সনাক্ত বলে আক্রান্ত বলে সনাক্ত হয়েছেন ১০ জন৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওমিক্রন ঠেকাতে ৪ জানুয়ারি ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করে৷ আর তার দুই দিনের মাথায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ করোনার সংক্রমণ ঠোকাতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ১২-১৭ বছরের বেশি বয়সের শিক্ষার্থীদের সশরীরে স্কুলে যেতে হলে কমপক্ষে এক ডোজ টিকা দেয়া থাকতে হবে৷ করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে গণপরিবহণে ৫০ ভাগ যাত্রী পরিবহণের সিদ্ধান্ত আসতে পারে৷ ট্রেন ও বিমানে চড়তে হলে দুই ডোজ টিকা লাগবে৷ রোস্তোরায় খেতে, হোটেলে থাকতে, শপিংমলে যেতে টিকা লাগবে৷ আর সভা সমাবেশ ও জন সমাগমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে৷
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, টিকা কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে৷ আর বুস্টার ডোজের আওতা আরও বাড়ানো হচ্ছে৷ ফন্ট্রলাইনাররা সবাই বুস্টার ডোজ পাবেন৷
এর আগে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্বাচনের নতুন তফসিল না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ ঘরের বাইরে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরার জন্য বলেছে৷ এদিকে মানুষ ঘরের বাইরে মাস্ক না পরলে জেলা প্রশাসকদের আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ ভ্রাম্যমাণ আদালত আবার জোরদার করতে বলা হয়েছে৷
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান বলেন,‘‘আমরা করোনার ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি৷ কোলকাতা করোনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে৷ বিশ্বব্যাপী করোনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে৷ সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা আমাদের মানতে হবে৷ নয়তো আমরা বিপর্যয়ের মুখে পড়ব৷ করোনার যে ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেন টিকা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে৷ বাইরে মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে৷ স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নাই৷ আগামী দুই মাসে করোনা অনেক বেড়ে যেতে পারে৷’’
সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না৷ অন্যদিকে টিকার প্রতিও আগ্রহ কমে গেছে৷ এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন,‘‘মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য নির্দেশনা না মানার প্রবণতা আছে৷ কিন্তু সরকারেরও দায়িত্ব আছে৷ সরকারের দায়িত্ব হলো স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা৷ শুধু নির্দেশনা দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না৷ মহামারি সংক্রান্ত অনেক আইন আছে সেগুলো প্রয়োগ করতে হবে৷’’
তিনি আরো বলেন,‘‘যেকোনো উপায়ে জনসমাগম কমাতে হবে৷ নির্বাচন চলছে৷ বাণিজ্য মেলা চলছে৷ সেগুলো কীভাবে বিধিনিষেধের আওতায় আনা যায় তা সরকারকেই করতে হবে৷ আর রাজনৈতিক দলগুলো তো রাজা৷ তারা কারো কথা শোনে না৷ তারা সভা সমাবেশ করেই যাচ্ছে৷ এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷’’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এরইমধ্যে রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলেছে৷ যতদূর সম্ভব আলোচনা ও সভা অনলাইনে করতে বলেছে৷
বাংলাদেশে এপর্যন্ত করোনার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছন সাত কোটি ৬২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৮ জন৷ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন পাঁচ কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৩৩৯ জন৷ বুস্টার ডোজ পেয়েছেন দুই কোটি ৬২ লাখ ৪৭ জন৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে