চীন-রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা : তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পদধ্বনি?

মাসুম খলিলী | Jan 04, 2022 03:32 pm
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পদধ্বনি?

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পদধ্বনি? - ছবি : সংগৃহীত

 

তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে চীন। ইউক্রেন নিয়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের সঙ্ঘাত ঘটতে পারে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। প্রাথমিকভাবে তাইওয়ান ও ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে চীন-রাশিয়ার সাথে দুটি যুদ্ধপরিস্থিতি হতে পারে। এ লড়াইকে অনেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিসাবেও চিহ্নিত করতে চাইছেন। আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানে হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর যে বৈশ্বিক ব্যবস্থা সেটি ভেঙে পড়া। চলমান এই বৈশ্বিক ব্যবস্থার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দু’টি দিকই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। জাতিসঙ্ঘ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থার গঠন ও কার্যধারাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা আবর্তিত।

আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর ব্রেটন উড ব্যবস্থা তথা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফকেন্দ্রিক যে ব্যবস্থা সেটি হলো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মূলে রয়েছে আমেরিকান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককেন্দ্রিক বৈশ্বিক মুদ্রা ডলার ও ব্রাসেলসকেন্দ্রিক বৈশ্বিক লেনদেন নিজস্ব ব্যবস্থা সুইফট। বলা বাহুল্য, বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় ব্যবস্থার ওপরই রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রাধান্য। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্যের মধ্যে তিনটি যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন ও ফ্রান্স একই ঘারানার হলেও ভেটো ব্যবস্থার কারণে একতরফা কোনো কিছু আমেরিকা ও তার মিত্ররা সেখানে করতে পারে না। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ও লোনব্যবস্থায় পশ্চিমাদের রয়েছে একতরফা প্রাধান্য। ডলার, ইউরো ও পাউন্ড হিসাবে করা হলে এই তিন মুদ্রায় বিশ্বের ৯০ ভাগ বাণিজ্য লেনদেন হয়। অন্য দিকে সুইফটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য লেনদেনের হার তার চেয়েও বেশি।

এই বাস্তবতার কারণে নবপর্যায়ের স্নায়ুযুদ্ধ শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসঙ্ঘের সংস্কারের রাজনৈতিক বিষয়ের চেয়েও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির প্রচেষ্টা বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। একের পর এক অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে আমেরিকান বিরোধী দেশগুলোকে চাপের মুখে ফেলার কারণে বিপদে পড়া যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলো আমেরিকান ডলার, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও সুইফট নেটওয়ার্কের বাইরে বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করতে শুরু করেছে। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ও বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হওয়ার কারণে বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বেইজিং। ক্রিমিয়া দখলকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অবরোধের শিকার রাশিয়া যোগ দিয়েছে এই প্রচেষ্টায়।

চীন ও রাশিয়া এর মধ্যে তাদের আন্তঃবাণিজ্যিক লেনদেন স্থানীয় মুদ্রায় করা শুরু করেছে। এই লেনদেনের জন্য দুটি দেশের অভ্যন্তরীণ লেনদেন নেটওয়ার্ককে সমন্বিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ববহ এক উদ্যোগ হলো ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি। চীনা মুদ্রা ইউয়ানকে ডিজিটাল করার মাধ্যমে এটিকে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ব্যবহার ছাড়াও চীন-রাশিয়া ব্রিকস নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে পশ্চিমাবলয় বিরোধী দেশগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল বিনিময় মুদ্রা ইউনিট তৈরির উদ্যোগে অংশীদার করতে চাইছে।

এই বিকল্প বৈশ্বিক মুদ্রা ও লেনদেন ব্যবস্থা আমেরিকান আধিপত্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার রাশ টেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে আগ্রাসী হয়ে ওঠার পেছনে মূল কারণ এটি বলে মনে করা হচ্ছে। এখন বৈশ্বিক অবস্থা এমন যে, পাশ্চাত্য বলয়ও আগের মতো বৈশ্বিক রাজনীতির দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাতে অভিন্ন ইউনিটের মতো ভূমিকা রাখতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার অকাস মিত্র্র যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া আর কানাডা-নিউজিল্যান্ড যতটা কাছাকাছি ততটা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দেখা যাচ্ছে না। এমনটি জার্মানি-ফ্রান্সের মতো ইউরোপের দুই নেতৃস্থানীয় শক্তিকে অনেক ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার সাথে বিশেষ সম্পর্কে আবদ্ধ হতে দেখা যাচ্ছে। ন্যাটো নিরাপত্তা জোটও এখন আগের মতো সংহত অবস্থায় নেই। এর বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us