ইসরাইলের ঘাড়ে ইরানি প্রক্সির নিঃশ্বাস
ইসরাইলের ঘাড়ে ইরানি প্রক্সির নিঃশ্বাস - ছবি : সংগ্রহ
ইসরাইল বিশ্লেষক, ইয়েদিওথ আহরোনোথের আমোস শাভিত বিশ্বাস করেন, সামরিক পদক্ষেপ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই : ‘ইসরাইলের পক্ষ থেকে ইরানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক হুমকির দিকে কেউ খেয়াল রাখবে না।’ কিন্তু, তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমাদের কি বিনা দ্বিধায় একটি অপারেশন শুরু করা উচিত? অবশ্যই না, আমাদের অবশ্যই হাজার বার ভাবতে হবে, কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে এবং সমস্ত সমস্যাগুলো বিবেচনা করতে হবে- ঠিক যেমনটি শুরু করেছিলেন- তবুও দিনের শেষে আমাদের অবশ্যই এই সবুজ আলো দেয়ার লক্ষ্য রাখতে হবে, কারণ অন্য কেউ আমাদের জন্য কাজটি করবে না।’
বৃহত্তম ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ, খোলামেলাভাবে ইরান বিষয়ে বিতর্ক নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা করে। হারেৎজ এর সম্পাদকীয়তে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে আক্রমণ করা কার্যকরভাবে একটি যুদ্ধ শুরু করার সমতুল্য। এ ধরনের সিদ্ধান্তের প্রভাব সমগ্র ইসরাইলি জনসাধারণের জন্য নাটকীয় এবং বেদনাদায়ক হতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, সরকার এবং জনসাধারণের মধ্যে এবং জনসাধারণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এই ধরনের হামলার সম্ভাবনার বিষয়ে যে সীমিত সংলাপ চলছে তার বড় রকমের গুরুত্ব রয়েছে।’
ইসরাইল বিশ্লেষক ইয়োসি ইয়েহোশুয়া বিশ্বাস করেন, ‘হামলা করা হলে, ইসরাইলি বিমানবাহিনীর হাতে থাকা সমস্ত মডেলের অনেক ফাইটার জেট থাকতে হবে। সমস্ত অনুমান অনুসারে, এ ধরনের বায়বীয় অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা অপ্রত্যাশিত, এবং কার্যকর অনুমান অনুযায়ী একটি পরিষ্কার সঙ্কেত হলো, কতগুলো বিমান নিরাপদে তাদের ঘাঁটিতে ফিরবে না; তখন গাজায় একজন অপহৃত সৈন্যের সাথে নয়, বরং ইরানের হাতে বন্দী ১০ জন পাইলটের বিষয় নিয়ে আমাদের লড়াই করতে হবে। এর অর্থ এই নয় যে, সামরিক বিকল্পটি সম্পূর্ণরূপে বাদ দেয়া উচিত, তবুও এটি একটি শেষ অবলম্বন হিসেবে আসতে হবে, যখন আমরা সত্যিই আমাদের গলার ওপর তলোয়ার ধরা হয়েছে বলে অনুভব করব। এটি কোনোভাবেই সহজ কোনো মিশন হবে না।’
আরেকটি উপসাগরীয় দৈনিক, দ্য পেনিনসুলা এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, ‘ইরানে আক্রমণ করা একটি কঠিন কাজ হবে। এটি আরো দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তু এবং ইসরাইলি যুদ্ধবিমানকে সম্ভবত সিরিয়া, ইরাক বা সৌদি আরবের প্রতিকূল আকাশসীমা অতিক্রম করতে হবে সেখানে পৌঁছানোর জন্য...। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোও অনেক জায়গায় ছড়িয়ে আছে বলে মনে করা হয়, গভীর মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। ইরানের সামরিক বাহিনী সিরিয়া বা ইরাকের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী, অত্যাধুনিক বিমানবিধ্বংসী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ইসরাইলের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম শক্তিশালী মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত। প্রযুক্তিগতভাবে উচ্চতর বিমানবাহিনীর পাশাপাশি, ইসরাইলের দূরপাল্লার বোমারু বিমানের অভাব রয়েছে যা ইরানের দূরবর্তী, বিচ্ছুরিত এবং সুরক্ষিত স্থাপনায় দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।’
ইসরাইলের ঘাড়ে ইরানি প্রক্সির নিঃশ্বাস
ইরানের আনুষ্ঠানিক সমরশক্তির বাইরে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্সি-শক্তি। এর মধ্যে ‘হিজবুল্লাহ’ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হিজবুল্লাহর সাথে ইসরাইলের ২০০৬ সালে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে। গত মে মাসের হামাসের সাথে যুদ্ধের সময় হিজবুল্লাহ জড়িয়ে যাবার ভয়ে তেলআবিব দ্রুত যুদ্ধবিরতি করতে সম্মত হয়। হিজবুল্লাহকে দুর্বল করার জন্য ইসরাইল বৈরুতে ভয়ঙ্কর গুপ্ত হামলা করে লেবাননের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। অব্যাহতভাবে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরিতে ইন্ধন দিয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও হিজবুল্লাহর শক্তির বড়ভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে মনে করা কঠিন।
সিরিয়া গৃহযুদ্ধে সামরিকভাবে দুর্বল হয়েছে কিন্তু দেশটির বিভিন্ন স্থানে রয়েছেন ইরানের সামরিক কর্মকর্তারা। দুই বৃহৎ শক্তি, রাশিয়া ও চীনের সাথে এখন ইরানের বোঝাপড়া অনেক গভীর। ইসরাইলের ‘আয়রন ডোম’ হামাসের ঘরে বানানো রকেট মোকাবেলা করে তাদের জনগণের নিরাপত্তা বিধান করতে পারেনি। ইরানের শত শত ক্ষেপণাস্ত্র আয়রন ডোম ভেদ করে যখন বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে তখন দেশটির নাগরিকরা যার যার মূল দেশে দ্রুত সরে পড়তে শুরু করবে। এর মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে একেবারে ইসরাইলি পরমাণু স্থাপনার কাছে আঘাত করে তেহরান বার্তা দিতে চেয়েছে, তারা ইসরাইলের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।
এসব বিবেচনা ইসরাইলের নেতাদের রয়েছে বলে মনে হয় যার কারণে নেতানিয়াহু আমলের প্রান্তিক ভাবনা থেকে এখনকার নেতাদের নমনীয় হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ইরান আর ইসরাইলের সঙ্ঘাতের পার্থক্য হলো, ইরানে আঘাত করা হলে দেশটি অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আর ইসরাইলে ভেতর থেকে যে ক্ষয় আসা শুরু হয়েছে তাতে দেশটির ওপর যেকোনো বড় আঘাত বিশ্ব মানচিত্র থেকে তেলআবিবের মুছে যাবার কারণ হতে পারে।
mrkmmb@gmail.com