ইসরাইলের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালাবে ইরান!

মাসুম খলিলী | Dec 28, 2021 03:45 pm
পরমাণু স্থাপনা

পরমাণু স্থাপনা - ছবি : সংগ্রহ

 

ইসরাইলের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার হুমকির পাল্টা হিসেবে ইহুদি রাষ্ট্রটির দিমোনা ফ্যাসিলিটিতে বিস্ফোরণের হুমকি দিয়েছে ইরানের আইআরজিসি। গত ২৪ ডিসেম্বর ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর পরিচালিত একটি টুইটার অ্যাকাউন্টে ইসরাইলের পারমাণবিক স্থাপনা সমৃদ্ধ নেগেভ মরুভূমির দিমোনা শহরকে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। টুইট বার্তায় দিমোনা পারমাণবিক কেন্দ্রের পাশাপাশি জেরুসালেম, তেলআবিব এবং হাইফা আক্রমণ করার হুমকি দেয়া হয়েছে। জেরুসালেম পোস্ট পত্রিকায় এ খবর প্রকাশ করা হয়।
এর আগে আইআরজিসির অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৩ ডিসেম্বরের একটি টুইটে ঘোষণা করা হয় যে, ‘ইহুদিবাদী শাসনের মূর্খতার ঘটনায়, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান তেলআবিব এবং হাইফাকে ধ্বংস করতে আর প্রস্তুত নয়, তবে পবিত্র কুদসকে মুক্ত করতে সব কিছু করবে।’

গত ২৪ ডিসেম্বরের এক খবরে বলা হয়, ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডবাহিনী-আইআরজিসি তাদের সামরিক মহড়ার চতুর্থ ও শেষ দিনে একই সাথে বিভিন্ন ধরনের ১৬টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। ‘মহানবী সা:-১৭’ নামের এই মহড়ার শেষদিনে ইরানি সেনারা দীর্ঘ, মধ্য ও স্বল্প পাল্লার এসব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। ইরানের প্রেস টিভি জানিয়েছে, মহড়ায় ইমাদ, কদর, সিজ্জিল, জিলজাল ও জুলফিকার নামের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র শতভাগ নিখুঁতভাবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে সেগুলো ধ্বংস করেছে। একই দিনে ইরানের অ্যারোস্পেস ফোর্সের দশটি কমব্যাট ড্রোন একসাথে বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছে এবং কাক্সিক্ষত লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে।

আইআরজিসি ডেপুটি চিফ অব অপারেশন্স এবং এই মহড়ার মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস নিলফোরুশান বলেছেন, তার বাহিনীর এই মহড়া ইহুদিবাদী ইসরাইলের জন্য সরাসরি সতর্ক বার্তা বহন করছে। এর পাশাপাশি, ইরানের প্রতিবেশী এবং বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর জন্য রয়েছে শান্তির বার্তা।

চাইলেই কি সম্ভব?
কিন্তু, প্রশ্ন হলো ইসরাইল চাইলেই কি হামলা করতে পারবে? ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করার সময় তেলআবিব যে প্রধান সমস্যাটির সম্মুখীন হবে, তা হলো ইসরাইল থেকে ৭০০ মাইলেরও বেশি দূরত্ব, যার মূল লক্ষ্যগুলো ইসরাইল থেকে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ মাইলের দূরত্বের মধ্যেও রয়েছে। বেশির ভাগ অনুমান অনুসারে, ইসরাইল তাদের এফ-১৬ এবং এস-১৫ বিমান দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে একতরফাভাবে আক্রমণ করতে সক্ষম। ১৯৮১ সালে ইরাকের বিরুদ্ধে অপারেশন অপেরার মতো একটি বিরতিহীন অপারেশনে ইরানকে আঘাত করতে ইসরাইল সক্ষম বলে মনে করা হয়, যার যুদ্ধ পরিসর ছিল দুই হাজার মাইল।

২০১২ সালে ইসরাইলের জন্য ইরানে যাওয়ার জন্য তিনটি সম্ভাব্য রুট ছিল। উত্তর রুট, যা তুর্কি-সিরিয়ান সীমান্ত বরাবর ইরানে প্রবেশ করেছে; কেন্দ্রীয় রুট, যা সবচেয়ে বেশি সরাসরি কিন্তু গুরুতর কূটনৈতিক বাধা রয়েছে; এবং দক্ষিণ রুট, যা ইসরাইলি বিমানগুলোকে সৌদি আরবের ওপর দিয়ে ইরানে নিয়ে যাবে।

তখন, আইএএফের কাছে ইরানি স্থাপনা ধ্বংস করতে এবং নাতাঞ্জের সুরক্ষিত বাঙ্কারে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু যুদ্ধাস্ত্র ছিল, যা অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি হয়েছে অথবা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়েছে। অবশ্য, নাতাঞ্জ সবচেয়ে কঠিন লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে একটি। বলা বাহুল্য, ১০ বছর আগে এ নিয়ে লেখার পর থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ইসরাইল তার অস্ত্র এবং প্ল্যাটফর্মগুলোকে উন্নত করেছে, যেমন এফ-৩৫ যেটি গোপনে ইরানের আকাশসীমায় উড়তে এবং রাডার স্টেশনগুলোকে বের করে নিতে সক্ষম, যা নন-স্টিলথ হওয়ায় বিমানকে ঝুঁকি ছাড়াই বোমায় বোঝাই ফিউসিলেজসহ প্রবেশ করতে সক্ষম করবে।

রুট সম্ভাবনাও পরিবর্তিত হয়েছে। আজ সিরিয়ার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া ২০১২ সালের মতো নয়, যখন বাশার আসাদের একটি উন্নত সামরিক বাহিনী ছিল এবং ইসরাইল খুব কমই তার আকাশসীমায় প্রবেশ করে। ইরাকে তখনকার মতো আমেরিকা আর মোতায়েন নেই; এবং ‘আব্রাহাম চুক্তি’ ইসরাইল ও সৌদি আরবের মধ্যে গতিশীলতা পরিবর্তন করেছে। ইসরাইলের এল আল বিমানগুলো এখন খোলাখুলিভাবে সৌদি আরবের ওপর দিয়ে উড়ে। তার মানে, রিয়াদ আইএএফ ফাইটার জেটকে একই কাজ করতে দেবে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়।

তবে একই সাথে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য সক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে। জেরুসালেম তেহরানের বিরুদ্ধে একা যেতে পারে কি না তা বিবেচনা করার সময় লোকেরা প্রায়শই যা উপেক্ষা করে তা হলো, ইরানি প্রযুক্তিগত জ্ঞান। এটি কোনো বিদেশী উৎস থেকে পাওয়া নয়। এর অর্থ হলো ইসরাইল আক্রমণ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে সফল হলেও, তা পুনর্গঠনের জন্য ইরানের সাহায্যের প্রয়োজন হবে না- তেহরান নিজেরাই এটি করতে সক্ষম হবে।

অন্য প্রধান পার্থক্য হলো, ২০১২ সালে ইসরাইলের বিকল্পটি কার্যকর এবং বাস্তব ছিল। এয়ারফোর্স তীক্ষè ছিল এবং পাইলটরা প্রশিক্ষিত ছিল এবং তাদের লক্ষ্যগুলো জানত। কিন্তু তাদের কখনোই সবুজ আলো দেয়া হয়নি এবং সেই সামর্থ্য বদলে গেছে। এখনো আইডিএফের জেনারেলরা আত্মবিশ্বাসী যে, তারা কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী শক্তিশালী, আর ইরানকে এমন একটি আঘাত মোকাবেলা করতে হলে তার পারমাণবিক অগ্রগতি পিছিয়ে যাবে। কিন্তু এর পরিণতি কী হবে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেও একবার ইসরাইলি সংবাদপত্রগুলো এই খবর প্রকাশ করেছিল যে, তাদের সরকার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার পরিকল্পনা বিবেচনা করছে। তারপর ইরানিরা, তাদের পক্ষ থেকে, এই ধরনের হামলার সম্ভাবনার প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আরো কয়েকটি সরকার পরিকল্পনাটির সরাসরি নিন্দা করেছে। এরপর সামনে রয়েছে সর্বশেষ, হামাস-ইসরাইল ১১ দিনের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us