প্রেসবায়োপিয়া বা চালশে বয়সজনিত দৃষ্টিসমস্যা
প্রেসবায়োপিয়া বা চালশে বয়সজনিত দৃষ্টিসমস্যা - ছবি : সংগ্রহ
প্রেসবায়োপিয়া কি?
এটি হলো চোখের স্বাভাবিক একটি অবস্থা যখন কাছের বস্তুকে দেখতে অসুবিধা হয়। এটি বয়সজনিত একধরনের দৃষ্টি সমস্যা যা সাধারণত চল্লিশ বছর বয়সে বা তার কাছাকাছি বয়সে পরিলক্ষিত হয়। এটিকে অনেকেই চালশে বা চালসেও বলে থাকেন। এটি একবার শুরু হলে তার স্বাভাবিক অবস্থায় আর ফিরে যায় না।
দূরের বস্তুকে দেখার সময় চোখ তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফোকাস করতে পারলেও কাছের বস্তুকে ফোকাস করতে একোমোডেশন বা অতিরিক্ত পাওয়ারের প্রয়োজন হয়। জন্মের পরপর শিশুর চোখে একোমোডেটিভ পাওয়ার রিজার্ভ প্রায় ১৪ ডাইঅপ্টারের মতো থাকে। ডাইঅপ্টার হলো লেন্স বা চোখের রিফ্রেক্টিভ পাওয়ারের একক। চোখে বিদ্যমান প্রাকৃতিক লেন্স এই একোমোডেশনের কাজটি সহজেই সম্পাদন করে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বয়সজনিত কারণেই এই একোমোডেটিভ বা রিজার্ভ পাওয়ার হ্রাস পেতে থাকে এবং বয়স চল্লিশের কোঠায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে এই রিজার্ভ প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে তখন কাছের বস্তুকে ফোকাস করতে অসুবিধা হয় অর্থাৎ কাছের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। এটিই হলো প্রেসবায়োপিয়া বা চল্লিশা। কাছের বস্তুকে ভালোভাবে দেখতে বা ফোকাস করতে তখন অতিরিক্ত প্লাস পাওয়ারের চশমা বা রিডিং গ্লাস ব্যবহার করতে হয়ে। এটি বয়সের সাথে স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।
উপসর্গ
ষ কাছের ছোট লেখা বা সূক্ষè বস্তু ইত্যাদি ঝাপসা দেখায়। সমস্যাটি ধীরে ধীরে অনুভূত হয়।
ষ মাথা ব্যাথা হতে পারে,
ষ আই স্ট্রেইন- চোখ চবালাপুড়া, চোখ চুলকানো, চোখে ব্যথা ইত্যাদি দেখা দেয়।
ষ প্রাথমিক অবস্থায় বস্তকে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু অধিকতর দূরত্বে দেখতে পারলেও একসময় তা-ও সম্ভব হয়ে উঠে না।
চিকিৎসা- এটি নিরাময়যোগ্য নয়। সমাধান হিসাবে গ্লাস বা চশমা ব্যবহার করতে হয়। কাছের বস্তকে দেখার জন্য চশমার গ্লাস বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
রিডিং গ্লাস- যাদের দূরের জন্য কোনো পাওয়ার লাগে না কেবল কাছের জন্য একটু পাওয়া হলেই চলে। এটিকে বলা হয় রিডিং চশমা। গ্লাসে একটি পাওয়ার থাকে কাছে ফোকাস করার জন্য।
বাইফোকাল- যাদের দূরে এবং কাছে দেখার জন্য আলাদা আলাদা পাওয়ার লাগে তাদের জন্য একই চশমায় গ্লাসের উপরে নিচে দু’টি পাওয়ার সন্নিবেশিত চশমা ব্যবহার করতে হয়। দূরে জন্য একটি সেগমেন্ট বা ফোকাল সিস্টেম এবং কাছের জন্য আলাদা সেগমেন্ট বা ফোকাল সিস্টেম প্রয়োজন হয়। একই গ্লাসে দুইটি সেগমেন্ট বা ফোকাল সিস্টেম সন্নিবেশিত থাকে বিধায় এটিকে বলা হয় বাই ফোকাল চশমা। দুইটি সেগমেন্টের মধ্যে একটি ডিমারকেশন লাইন থাকে যা বাইর থেকে বুঝা যায়। উপরের সেগমেন্টটি দূরে দেখার জন্য এবং নিচের সেগমেন্টটি কাছে দেখার জন্য।
প্রগ্রেসিভ বা কনজিকিউটিভ বাইফোকোল- কাছে বলতে টেবিলে পড়াশোনা, ফাইলপত্র ইত্যাদি দেখা। কম্পিউটারের স্ক্রিন বা গাড়ির সাইড মিরর ইত্যাদির দূরত্ব একটু বেশি। এটিকে বলা যায় ইন্টারমিডিয়ারি ডিস্টেন্স বা মধ্যমানের দূরত্ব। এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি দুই এর অধিক দূরত্ব বা মাল্টিপুল ডিস্টেন্স। এর জন্য প্রয়োজন মাল্টিফোকাল গ্লাস। সবার উপরের সেগমেন্ট দিয়ে দূরের বস্তু; মাঝামাঝি সেগমেন্ট দিয়ে ইন্টামিডিয়েট ডিস্টেন্স বা মাঝামাঝি দূরত্ব এবং নিচের সেগমেন্ট দিয়ে কাছের দূরত্বে দেখা হয়। প্রোগ্রেসিভ বা মাল্টিফোকাল গ্লাসে পাওয়ার এমনভাবে উপর থেকে নিজে ব্লেন্ড করা থাকে যা বাইর থেকে বুঝা যায় না অর্থাৎ কোনো ডিমার্কেশন লাইন থাকে না।
চালশে বা প্রেসবায়োপিয়া কোনো অসুখ নয়। এটি বয়সের স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। চালসে হলে চশমা ব্যবহার করতে হবে। প্রথম দিকে একটু অস্বস্তি হলেও সময়ে এটি মানিয়ে যায়।
লেখক : এমবিবিএস, এফসিপিএস (চক্ষু) এমএস (চক্ষু)
চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন
কনসাল্টেন্ট- আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, আদাবর, ঢাকা ও সাবেক সহযোগী অধ্যাপক- জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল