নতুন সমীকরণে চীন-মিয়ানমার
নতুন সমীকরণে চীন-মিয়ানমার - ছবি : সংগ্রহ
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বহুদিন ধরে জাতিগত রাখাইন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সে দেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনী লড়াই করছে। নির্যাতন ও হত্যার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধ রাখাইন জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা এখন হাতেগোনার অবস্থানে। ছয় দশক ধরে বিভিন্ন নামে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ও বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করে নেইপিদোর সেনাপতিরা এখন প্রচ্ছন্নভাবে এক শক্তিশালী প্রতিবেশীর দিকে আঙুল তুলেছে। অভিযোগ করেছে যে, তারা দেশটির কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সহায়তা দিচ্ছে। অবশ্যই সেনারা প্রকাশ্যে সে দেশের নাম উচ্চারণের সাহসও করে না। তারা জানে, অভিযোগ অনেকটা ভিত্তিহীন। আরো অবাক করার বিষয় হলো, মিয়ানমারের সামরিক কমান্ডার-ইন-চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। যেমন সিরিয়ার বাশার আল আসাদ তার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পূর্ব ও পশ্চিমের অনেক দেশের মদদ চেয়েছেন।
অনেকে মনে করেন, জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের মন্তব্য চীনকে লক্ষ্য করে করা হয়েছিল। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা তাতমাদাও সন্দেহ করছে যে, চীন দুই দেশের সীমান্তে সক্রিয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও রাখাইনের আরাকান সেনাবাহিনী বা এ এ-কে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। একজন সামরিক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এ এ বা আরাকান সেনাবাহিনী এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা, এআরএসএ উভয়ই উত্তর রাখাইনে অবস্থান করছে।
আরসা ও আরাকান আর্মির এজেন্ডা সম্পূর্ণ পৃথক। বলা হয়েছে, আরসা উপমহাদেশের বিভিন্ন উগ্রবাদী ও ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং বিদ্রোহীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। ইরাবতি পত্রিকা জানিয়েছে, আরসা ও রোহিঙ্গাদের কিছু উগ্রবাদী বিছিন্ন দল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং সহানুভূতিশীলদের কাছ থেকে এবং পশ্চিমের কিছু দেশ থেকে তহবিল এবং রাজনৈতিক সমর্থন পেয়েছে। যদিও কোনো দেশের নাম স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
সামরিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ক্রমাগত ভারী ফ্রন্টলাইন লড়াই নেইপিদোর সামরিক সদর দফতরে প্রভাব ফেলছে। রাখাইন বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের অভাব নেই এবং তারা অত্যাধুনিক বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা হিট অ্যান্ড রান গেরিলা যুদ্ধে অভ্যস্ত। উল্লেখ্য, সিপিবি, কমিউনিস্ট পার্টি অব বার্মার তরুণ সদস্যরা একসময় চীনের কাছ থেকে রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন পেয়েছিল।
চীন মিয়ানমারের চলমান জাতিগত সঙ্ঘাতে শান্তি স্থাপনে ভূমিকা পালনের প্রস্তাব দিয়েছে। সিনিয়র তাতমাদাও নেতারা এখন গোপনীয়ভাবে বলছেন যে, চীনকে বিশ্বাস করা উচিত নয়, বেইজিং মিয়ানমারের কিছু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন করে চলেছে, একই সাথে শান্তি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে। মিডিয়ায় মিয়ানমারের সেনা অধিনায়কদের এমন মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
২০১৭ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং স্টেট কাউন্সেলর দাও অং সান সু চিকে বলেন যে, চীন মিয়ানমারকে শান্তি অর্জনে সহায়তা অব্যাহত রাখবে এবং দেশগুলোর যৌথ সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানানোর কাজও করবে। পরে পুরো মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ ও সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হওয়ায় চীনসহ আসিয়ান দেশগুলো সেনাপ্রধানকে সতর্ক বার্তা পাঠাতে থাকে।
নর্দার্ন অ্যালায়েন্স-বার্মা বা এনএবি নামে পরিচিত জাতিগত বিদ্রোহী জোট মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের কাছে মায়ো নামে পরিচিত গ্যারিসন শহর আক্রমণ করেছে, সামরিক একাডেমিসহ চীন-মিয়ানমার বাণিজ্য পথেও আক্রমণ চালিয়েছে।
তিনটি বিদ্রোহী দল, পালাউং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং আরাকান আর্মি, এ এ এসব হামলা চালায় এবং এ তিনটি দলই চীনাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং তাদের নেতারা প্রায়ই ইউনান প্রদেশে এবং চীনা সীমান্ত এলাকার অন্যান্য স্থানে যান ও অবস্থান করেন।
বিভিন্ন সময় বিদ্রোহীদের কাছ থেকে তাতমাদাউ যেসব অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে তার সবগুলো চীনের তৈরি। বৈধ বা অবৈধভাবে বিদ্রোহীরা এসব সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। এশিয়ানবিষয়ক চীনা বিশেষ দূত সান গুওজিয়াংকে মিয়ানমার সেনাপ্রধান অভিযোগ আকারে বিষয়টি জানান। আরো জানা যায়, আরাকান আর্মি দূর নিয়ন্ত্রণ ডিভাইসের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম আধুনিক ডিভাইসসহ উন্নত ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করে, যা মিয়ানমার থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। মিয়ানমার অভিযাগ করে যে, এগুলো কেবল পাশের দেশ থেকেই সংগ্রহ করা সম্ভব।
এ অবস্থায় জেনারেল মিন অং হ্লাইং রাশিয়া ও ভারতের প্রতি আরো ঝুঁকে পড়ে। সেনাপ্রধান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাথে আলোচনা করেন এবং তাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নীত করার উপায় এবং সীমান্ত নিরাপত্তা ও সীমান্তে বিদ্রোহবিরোধী অভিযান নিয়ে আলোচনা করেন এবং নেইপিদো ও নয়াদিল্লির মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হন। রাশিয়ার সাথে মিয়ানমারের সামরিক চুক্তি রয়েছে যার অধীনে আধুনিক যুদ্ধবিমান ও অস্ত্র পেয়ে থাকে। তা ছাড়া মিয়ানমার ইসরাইল ও পাকিস্তান থেকেও অস্ত্র সংগ্রহ করে।
মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের সীমান্ত বরাবর ঘাঁটি থেকে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে লড়াই করা গোষ্ঠীগুলোর অন্যতম হলো আসামি ও মেইতি বিদ্রোহীরা। মিয়ানমার সেনারা এদের ২২ জনকে ধরে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে।
২০১৯ সালে ভারত থেকে মিয়ানমার তাদের প্রথম সাবমেরিন পায়। এটি রাশিয়ার তৈরি কিলো শ্রেণীর ডিজেল-বৈদ্যুতিক আক্রমণ সাবমেরিন। নয়াদিল্লি মিয়ানমারের সেনা অফিসারদের প্রশিক্ষণ এবং ভারতের সামরিক একাডেমিতে পড়ার অনুমতি দিতে সম্মত হয়। চীন থেকে কোনো সাবমেরিন না কেনার সিদ্ধান্তও হয়।
উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ড ও অন্যান্য রাজ্য আসাম, মিজোরামের স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াইরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভারতে বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে। অস্ত্র চোরাচালানসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় তারা জড়িত। সুবিধা পাওয়ার এরা জন্য ইসলামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করে থাকে।
এ ধরনের গোষ্ঠীগুলোকে উৎখাত করা সহজ নয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে পারে, কিন্তু দুর্গম স্থানে থাকায় বিদ্রোহীদের নির্মূল করা সম্ভব হবে না। এ দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সম্পদশালী ভারতীয় বিদ্রোহীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ শিবির খুলছে এবং বিদেশে বিদ্রোহী ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করছে বলে মিডিয়া প্রতিবেদন ছাপিয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারতের সাথে সম্পর্কের এই শক্তিশালীকরণ লাদাখের হিমালয় অঞ্চলে দুই এশীয় পরাশক্তির সাম্প্রতিক সহিংস সঙ্ঘাতের পটভূমিতে ফিরে আসে, যা দক্ষিণ এশিয়ার একটি নতুন ভূরাজনৈতিক ফ্ল্যাশপয়েন্ট হয়ে দেখা দিয়েছে।
মিয়ানমারের জন্য বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান, যা হিংস্রভাবে গোষ্ঠী দমনপীড়ন দিয়ে শুরু হয়ে মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করছে, এখন একটি ভূরাজনৈতিক অভিশাপের মধ্য দিয়ে চলছে এবং দেশটি তার দুই শক্তিশালী প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হাবুডুবু খাচ্ছে।
চলতি বছর ৭ মে, ২০২১ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন করে। গত ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের পর এটি মিয়ানমার বিনিয়োগ কমিশনের বড় আকারের প্রকল্প। এটি মিয়ানমারে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এজেন্ডার একটি মূল অংশ। চলমান সঙ্কট সত্ত্বেও মিয়ানমারে চীন প্রকল্পগুলো নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চীনের ব্যাপক স্বার্থ তীব্র সমালোচনা এবং এমনকি সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে; কারণ সামরিক সরকারবিরোধী আন্দোলনের অনেকেই দাবি করেছে যে চীন ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থান সম্পর্কে অবগত ছিল বা সম্ভবত সমর্থন করেছিল! সু চি রোহিঙ্গা বিষয়ে তদন্তে জাতিসঙ্ঘ কফি আনান টিমকে সাফ বলে দিয়েছিলেন ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উচ্চারণ না করতে। কমিশন শর্ত মেনে নিয়েছিলেন। কি ঘৃণা ও গোষ্ঠীবিদ্বেষ অং সান সু চির মনে লালিত হয়েছে! তারই নির্দেশে ইয়াঙ্গুন ও নেইপিদোতে ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী’ প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে প্রতিদিন মিছিল করেছে। তারাই আজ নিজেরা গোষ্ঠীগত বিদ্বেষে পুড়ছে, নিজেও জেলে সাজা ভোগ করছে।
অভ্যুত্থানের প্রায় সাথে সাথে চীন সামরিক জান্তার সাথে কাজ শুরু করে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে বেইজিংয়ের দীর্ঘকাল ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। রাশিয়ার পাশাপাশি চীন অভ্যুত্থানের নিন্দা জানাতে বা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রচেষ্টার বিরোধিতাও করেনি।
তবে অভ্যুত্থানের জন্য চীনা সমর্থনের বেশির ভাগ অভিযোগ এখন পর্যন্ত ভিত্তিহীন। চীনবিরোধী তাইওয়ানের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, চীনা সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের আগে প্রায় ১২ হাজার সৈন্যকে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় নিয়ে এসেছিল। তবে এটি চীনের রুটিন কাজ বলে চীনের সরকারি পত্রপত্রিকা বলেছে। কেননা লাদাখ, ভুটান, অরুণাচল প্রদেশ অঞ্চলে চীনের ব্যাপক সেনা কার্যক্রম প্রায় সারা বছরই চলমান থাকে।
অর্থনীতির আরেক ফ্যাক্টর গ্যাস ও তেলের পাইপ লাইনটি বেশ অর্থবহ। বঙ্গোপসাগরে সুই গ্যাস উৎপাদন প্ল্যান্ট থেকে গ্যাস ও তেল মিয়ানমারের বিভিন্ন পয়েন্ট হয়ে চীনে যাবে।
এই সমান্তরাল পাইপলাইনগুলো মিয়ানমারে চীনের বৃহত্তম বিনিয়োগগুলোর একটি। চীন মিয়ানমার, পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের উপকূলে কিয়াউকফিউ থেকে চীনের ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কিলোমিটার লম্বা এবং প্রতি বছর ২২ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল এবং ১২ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সঞ্চালন করবে। এতে উভয় দেশ লাভবান হবে। পেন্টাগন এক নতুন প্রতিবেদনে বলেছে, চীন সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণের আওতা বাড়ানোর জন্য মিয়ানমারসহ এক ডজন দেশে অবকাঠামো স্থাপন করতে চাইছে। ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সামরিক ও নিরাপত্তা উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কেনিয়া, সিচেলিস, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা ও তাজিকিস্তানের অবস্থান বিবেচনা করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্লোবাল পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) একটি লজিস্টিক নেটওয়ার্ক মার্কিন সামরিক অভিযানে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অভিযান পরিচালনা করতে সহায়তা করতে পারে।
পেন্টাগন বলেছে যে, চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পগুলো পিএলএ-এর বিদেশী বন্দরগুলোতে প্রবেশের জন্য সামরিক সুবিধা তৈরি করছে। ফলে ভারত মহাসাগর, ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মতো দূরবর্তী জলসীমায় তার নৌবাহিনী মোতায়েনের জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তা স্থাপন করা সম্ভব হবে।
চীন মিয়ানমারে কিয়াউকফিউ স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এসইজেড) গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করছে, যা ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি বাড়িয়ে তুলবে। এসইজেডের উন্নয়ন দক্ষিণ এশিয়ায় তার পদচিহ্ন সম্প্রসারণে বেইজিংয়ের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।
চীনকে ভারত মহাসাগরে সরাসরি প্রবেশাধিকার প্রদান এবং মালাক্কা প্রণালীকে উপেক্ষা করার জন্য তার তেল আমদানির অনুমতি দেয়া, কিয়াউকফিউ বন্দর চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরের (সিএমইসি) একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা বিআরআইর একটি অংশ।
বিআরআইর অংশ হিসেবে ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সিএমইসি চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংকে মিয়ানমারের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর সাথে সংযুক্ত করবে। রাখাইন প্রদেশের কিয়াউকফিউ এসইজেডের সাথে পূর্ব থেকে ইয়াঙ্গুন এবং পশ্চিমে শাখা করার আগে এটি প্রথমে মধ্য মিয়ানমারের মান্দালয়ের সাথে সংযুক্ত হবে। বাণিজ্যিক অবকাঠামো, পিএলএ লজিস্টিক সুবিধা এবং অবস্থানরত বাহিনীর সাথে ঘাঁটিগুলোর এক্সেস সুরক্ষিত করার জন্য চীনা সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ‘বিভিন্ন স্থান বিবেচনা’ এবং ‘অনেক দেশে পৌঁছানোর’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চীন২০১৭ সালে জিবুতিতে প্রথম ঘাঁটি খোলে।
জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং ও ইয়াং নেইপিদোতে গিয়েছিলেন। ইয়াং এক অদ্ভুত মানুষ। তিনি সাধারণত তার বিদেশ ভ্রমণে একটি নির্দিষ্ট কাজ করেন। কাজ সমাধা করেন নতুবা তার বিপরীত ঘুঁটি চালিয়ে দেন।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে সেটিকে ‘অত্যন্ত ভুল’ বলে বর্ণনা করেছে। তারা বলেছে, মার্কিন প্রতিবেদনে ‘তথাকথিত চীনা সামরিক হুমকি’ অতিমাত্রায় অনুমান করা হয়েছে এবং চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি এবং সামরিক কৌশলের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার