সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস : কেন হয়, কী করবেন
সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস - ছবি : সংগ্রহ
ঘাড়ে ব্যথার নানাবিধ কারণ রয়েছে। যেমন- যেকোনো ধরনের আঘাত লাগা, পজিশনাল অর্থাৎ ঘাড়ের নড়াচড়ার কারণে ব্যথা, হাড়ের ইনফেকশন, অস্টিওপরোসিস, টিউমার, অস্টিও-ম্যালেসিয়া বা ভিটামিন ডি-এর অভাব, সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস ইত্যাদি। তবে সাধারণত ঘাড়ে ব্যথা সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিসের জন্য বেশি হয়। যাদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি তাদের মধ্যেই এ রোগ বেশি দেখা যায়। সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস ঘাড়ের দুই হাড়ের মধ্যবর্তী তরুণাস্থি র বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনের ফলে হয়ে থাকে।
উপসর্গ : ঘাড়ের ব্যথা হওয়া, ঘাড় নড়াতে না পারা এবং ঘুরালেই ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়া, ঘাড়ের মাংসপেশি কামড়ানো, ঘাড়ের ব্যথাসহ হাতের আঙুল ঝিনঝিন করা, ঘাড়ে ব্যথাসহ হাত বা হাতের আঙুল অবশ অবশ ভাব হওয়া, ঘাড়ের পিছনের ব্যথা মাঝে মাঝে শরীরের অন্যস্থানে ছড়িয়ে যায়- যেমন কাঁধে, হাতে অথবা মাথার পিছনের দিকে।
এ রোগের চিকিৎসা, প্রতিকার ও উপদেশ
সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস রোগটি ভালো হওয়ার রোগ নয় ভালো থাকার রোগ। তাই এ রোগের চিকিৎসায় রোগীর সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। এ রোগে ভালো থাকতে হলে-
ব্যথা উপশমকারী ওষুধ যেমন- ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম, আইবুপ্রোফেন, নেপরোকসিন ইত্যাদি গ্রুপের- ওষুধ ভরা পেটে খাওয়া যেতে পারে। ব্যথা বেশি হলে অথবা পেপটিক আলসার থাকলে পায়ুপথে কিংবা মাংসপেশিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যায়। অনেক সময় রোগীকে মাংসপেশি শিথিলকরণ ওষুধ যেমন- ডায়াজিপাম দেয়া হয়ে থাকে।
সব ক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট মাত্রায় সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
সার্ভাইক্যাল কলার : ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা থাকা অবস্থায় ঘাড়কে বিশ্রাম দেওয়া একান্ত জরুরি। ঘাড়ে প্রচণণ্ড ব্যথা অবস্থায় সার্ভাইক্যাল কলার ব্যবহার করে ঘাড়কে বিশ্রাম দিতে হবে। কলার রাতে ঘুমের সময় ও ব্যয়াম করার সময় খুলে ফেলা উচিত।
সার্ভাইক্যাল ট্রাকসন : সাধারণত কম ওজন দিয়ে সার্ভাইক্যাল ট্রাকসন শুরু করতে হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৬-১২ কে, জি ওজনের ট্রাকসন দেয়া হয়। অব্যশ্য রোগীর ওজন, বয়স, এবং পুরুষ/মহিলা ভেদে কম বেশি হয়। সার্ভাইক্যাল ট্রাকসন দেওয়ার সময় রোগীর কোনো অসুবিধা হলে অবশ্যই ট্রাকসন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এজন্য বলা হয়ে তাকে রোগী যতটুকু ওজনে আরামবোধ করেন ততটুকু ওজন দিয়ে শুরু করা উচিত এবং এ আরামবোধ ধরে রেখেই আস্তে আস্তে ওজন বাড়ানো উচিত।
থার্মো থেরাপি : ডিপহিট জাতীয় চিকিৎসা এ রোগে প্রয়োগ করা হয়। যেমন- সর্ট ওয়েভ ডায়াথারপি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমিও আল্ট্রাসাউনড থেরাপি।
ব্যায়াম : থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ যেমন-আইসোমেট্রিক নেক্ মাসল্স স্ট্রেনদেনিং এক্সারসাইজ, সোল্ডার ইলিভেসন এক্সারসাইজ ইত্যাদি করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
এসব থেরাপি ও ব্যায়াম কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন। কারণ সকল ক্ষেত্রে থেরাপি ও ব্যায়াম দেয়া যাবে না।
এ রোগে ভালো থাকার জন্য কিছু পরামর্শ-
ষ চলাফেরা করার সময় সবর্দা কলার ব্যবহার করুন।
ষ ছোট নরম একটা বালিশ রোল করে ঘাড়ে সার্পোট দিন।
ষ যেকোনো এক কাত হয়ে শোয়া থেকে উঠবেন।
ষ নিচু হয়ে ঝুঁকে কোনো কাজ করবেন না।
ষ চেয়ারে বসার সময় ঘাড় ও পিট সোজা রেখে বসবেন।
ষ সোজা হয়ে গোসল করবেন।
ষ টিউবওয়েল চাপবেন না।
ষ ঘাড় সোজা রেখে দাঁড়িয়ে রান্না করবেন, প্রয়োজন হলে চেয়ারে বসবেন।
ষ ঘাড় পিছনের দিকে বাকিয়ে কোনো কাজ (যেমন উপরের দেওয়ালের ময়লা পরিষ্কার করা, গাল সেভ করা ইত্যাদি) করবেন না।
ষ আধ শোয়া অবস্থায় শুয়ে কোনো কাজ যেমন- খবরের কাগজ পড়া, টিভি দেখা ইত্যাদি পরিহার করুন।
ষ গাড়িতে চড়ার সময় সামনের আসনে বসবেন, কখনো দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
ষ কলার পরা অবস্থায় নিজে গাড়ি চালাবেন না।
ষ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।
ষ ব্যথা থাকা অবস্থায় মালিশ ও ব্যায়াম করবেন না।
রোগী এসব পরামর্শ মেনে চললে এবং চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তিনি অবশ্যই সুস্থ হবেন। সুস্থ থাকা অবস্থায়ও এসব উপদেশ মেনে চললে ঘাড়ে ব্যথা হতে দূরে থাকা সম্ভব। তাই আসুন আমরা সবাই এগুলো মেনে চলি এবং ঘাড়ে ব্যথা এড়িয়ে চলি।
লেখক : বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ