যেসব অভ্যাসে হার্টের অসুখ বাড়ে
যেসব অভ্যাসে হার্টের অসুখ বাড়ে - ছবি : সংগ্রহ
হৃদপিণ্ড বা হার্ট যেমন আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, তেমনই সমীক্ষায় দেখা গেছে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। তাই হার্টের যত্ন নেওয়া যে কতটা জরুরি তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিলেও আমরা অনেক সময়ই হার্টের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করি৷ আধুনিক জীবনের কর্মব্যস্ততা, মানসিক উদ্বেগ, জীবনযাপনের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ইত্যাদি কারণে আজকাল অল্প বয়সীরাও হৃদরোগের শিকার হচ্ছেন।
সঠিক লাইফস্টাইলের কারণে শুধু যে হৃদরোগ হয় নয়, একইসাথে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেসার, স্থূলতাসহ একাধিক রোগের প্রার্দুভাব দেখা যায়। আর এই সব লাইফস্টাইল ডিজিজের হার্টের সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে কার্ডিও-ভাসকুলার এক্সারসাইজ, কম-কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার এবং বেশ কিছু লাইফস্টাইল পরিবর্তন করলে সহজেই হৃদয়ের যত্ন নেয়া যায়৷ আসলে সময় থাকতে অনেকেই বুঝতে পারেন না যে জীবনধারার ছোট ছোট ভুল থেকে তারা হার্টের কত বড় বিপদ ডেকে আনছেন। তাই হৃদরোগের মতো মারণ রোগ প্রতিরোধে প্রথমেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তাহলে হার্টের ঝুঁকি এড়াতে কোন কোন অভ্যাস নিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়া দরকার জেনে নেয়া যাক।
শারীরিকভাবে সচল না থাকা
প্রয়োজন অনুযায়ী দৈনন্দিন ভিত্তিতে শারীরিকভাবে সচল না থাকার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। হয় তো যে ওয়ার্ক আউট করা হচ্ছে, তা খুব একটা উপভোগ করা যাচ্ছে না কিংবা ভুল পদ্ধতিতে ঘাম ঝরানোয় উপকার মিলছে না। কারো আবার ঘন্টার পর ঘন্টা কাজের চাপসহ বিভিন্ন ব্যস্ততায় দিনের শেষে আর ওয়ার্ক আউট করার মতো এনার্জি থাকে না। কিন্তু হার্ট ভালো রাখতে হলে অবশ্যই সারাদিন শারীরিকভাবে সচল থাকতে হবে। তবে প্রথমেই ঘন্টার পর ঘন্টা জিমে গিয়ে ওজন তোলার প্রয়োজন নেই।
বরং ধীরে ধীরে নিজের ওয়ার্কআউট রুটিন শুরু করলেই ভালো। এমনকি মধ্য গতিতে হাঁটলেও হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কাজ হবে। প্রতিদিন কুড়ি মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো অথবা খেলাধুলা করা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো কাজ করে এবং এটি কোলেস্টেরল কমাতে, ব্লাড প্রেসার এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে প্রতিদিন ২০ কিংবা ৩০ মিনিট ব্যায়াম মানে যে টানা এক্সারসাইজ করতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে চাইলে কেউ সারাদিনে সময় ভেঙে ভেঙে এক্সারসাইজ করতে পারেন। আবার শুধু দৈনিক নির্দিষ্ট সময় এক্সারসাইজ করেই যথেষ্ট নয়, আসল কথা হল সারাদিন নিজেকে শারীরিক সচল রাখতে হবে। তবেই হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
ধূমপান
'ধূমপান স্বাস্থ্যে পক্ষে ক্ষতিকর।' পথে-ঘাটে, টিভি-রেডিওতে, বিজ্ঞাপনে এমনকি সিগারেট বিড়ির প্যাকেটে এই বার্তা দিলেও আদৌ কতটা ফলপ্রসূ হয়! ধূমপানের ক্ষতির কথা জেনেও অনেকেই এই আসক্তি ছাড়তে পারে না৷ যা ধীরে ধীরে বিদপজ্জনক হৃদরোগের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে শুধু হার্টের নয়, ধূমপান করলে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের প্রবল ক্ষতি হয়। যেখানে হৃদরোগে মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ দায়ীও ধূমপান।
আসলে কার্বন মনোক্সাইড হলো সিগারেটের একটি প্রধান উপাদান যা স্বাস্থ্যকর ব্লাড কাউন্ড কমিয়ে দেয় এবং কোলেস্টেরল বাড়ায়। এছাড়া হার্টের শিরা এবং ধমনীতে ব্লকেজ দেখা যায়। যা থেকে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া, স্ট্রোক, হার্ট অ্যার্টাকের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। তাই একদিনে না হলেও ধীরে ধীরে ধূমপান বর্জন করা চেষ্টা করতে হবে। সেক্ষেত্রে কম সিগারেট থেকে হয়েতো কিছুটা লাভ হবে তবে সম্পূর্ণরূপে ধূমপান বর্জন করাই হৃদরোগের ঝুঁকি এড়ানোর একমাত্র সঠিক সমাধান।
মানসিক চাপ
পেশাগত থেকে ব্যক্তিগত যেকোনো জায়গাতে স্ট্রেস বর্জিত জীবন প্রায় অলীক কল্পনা। বলতে গেলে, দুশ্চিন্তা দিন দিন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে যে শারীরিক সুস্থতার দৃড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা শরীরের খুবই খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই চিকিৎসকদের মতে, হার্ট ভালো রাখতে গেলে মানসিকভাবে ভালো থাকা জরুরি। কারণ অতিরিক্ত স্ট্রেস হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং যা থেকে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়।
এটি আর্টারির ক্ষতি করতে পারে এবং যেকোনো সময়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে। আবার মানসিক চাপের মোকাবিলা করতে মানুষ মদ্যপান করে, ধূমপান করে এবং অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলে। আর এই সবকিছুই হার্টের আরো ক্ষতি করে। তাই স্ট্রেসের মাত্রা কখনোই বাড়তে দেওয়া চলবে না। বিভিন্নভাবে মন ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্ট্রেস ম্যানেজের জন্য এক্সারসাইজ খুব ভালো উপায়। নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে শরীর শান্ত থাকে এবং শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যান্য কার্যকরী উপায় যেমন- ধ্যান করা, গান শোনা, বই পড়া এবং পরিবার ও পোষ্যর সঙ্গে সময় কাটালে মন ভালো থাকে।
জাঙ্ক ফুড
ওয়ার্ক ফর্ম হোম হোক বা সারা সপ্তাহ অফিস করে সপ্তাহান্তে নাইট আউট, কিংবা ওয়েব সিরিজ দেখার সময়, মুখরোচক খাবার ছাড়া যেন ঠিক চলে না! আর এইসব মুখরোচক খাবার মানেই তো বিভিন্ন ধরনের জাঙ্কফুড। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার দিকে নজর দিলেই দেখা যাবে যে এমন কিছু অস্বাস্থ্যকর, প্রক্রিয়াজাত খাবার আমরা ঘন ঘন খেয়ে থাকি যা হার্টের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।
কিন্তু বার্গার, পিৎজা হোক কিংবা চিপস, যেকোনো জাঙ্ক ফুডে অতিরিক্ত নুন বা অ্যাডেড সুগার থাকে৷ তাই এগুলি বেশি খেলে ব্লাড প্রেশার এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে কিছু ক্ষেত্রে নিয়মিত জাঙ্ক ফুডের ক্ষতিকর প্রভাব ধূমপানের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। তাই হার্ট ভালো রাখতে রোজকার খাদ্যতালিকার খাবারের পুষ্টিগত উপাদান দেখে নিতে হবে এবং বাইরে খেতে হলেও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
মদ্যপান
শুধু ধূমপান নয়, অ্যালকোহলও মানুষের হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণ। কারণ অ্যালকোহলও শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর এই ট্রাইগ্লিসারাইড হলো এক ধরনের অস্বাস্থ্যকর চর্বি যা বেড়ে গেলে শরীরের ক্ষতি হয় এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়৷ আবার অ্যালকোহল খাওয়ার আরো খারাপ প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্টারি ব্লকেজ এবং ওজন বেড়ে যাওয়া।
সূত্র : নিউজ ১৮