মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে?
মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে? - ছবি সংগৃহীত
বিভিন্ন রোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়াবেটিস (মধুমেহ) রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি কম বয়সের অনেকেই রয়েছেন আক্রান্তের তালিকায়। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যা নিয়ে সব থেকে বেশি চিন্তিত থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এবং তার সাথে একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগ থেকে যতটা দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল।
এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলেন অনেকে। ভাত বা শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন অনেকে। এর পাশাপাশি অনেকে আছেন যারা সম্পূর্ণ মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু এগুলো খেলে কি ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকা সম্ভব? জেনে নেয়া যাক…
তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে অতিরিক্ত চিনি বা শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ার জন্য ডায়াবেটিস রোগ হয় না। এর সাথে জড়িত রয়েছে আরো তিনটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশ সারা দেশে প্রায় প্রায় ৭০ মিলিয়ন সাধারণ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। এবং যদি অন্য দেশের তুলনায় দেখা যায় তাহলে ‘ডায়াবেটিস ক্যাপিটাল’ বলা যেতে পারে ভারতকে। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন জায়গায় যে প্রতি পরিবারের একজন করে মধুমেহ রোগে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যাবে। কিন্তু অনেকের কাছে অজানা রয়েছে কিভাবে ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকা সম্ভব? এই প্রতিবেদনে ডায়াবেটিস নিয়ে বিস্তারিত তথ্য রইল…
অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে কি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ডায়াবেটিস থাকে?
অতিরিক্ত শর্করাজাতীয় খাবার যেমন সোডা ওয়াটার বা প্রসেসড ফুড খেলে ডায়াবেটিস রোগের আশঙ্কা যে খুব বেড়ে যায় তা সম্পূর্ণ ভুল। এই ধরনের খাবার গ্রহণ করার ফলে ওবেসিটি বা স্থুলকায়তা বেড়ে যায়। আর স্থুলকায়তা বেড়ে গেলে মধুমেহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ডায়াবেটিস থাকে। বলা যেতে পারে, প্রসেসড ফুড, সোডা ওয়াটার বা শর্করাজাতীয় পানীয় সরাসরি ডায়াবেটিস রোগের জন্য দায়ী নয়। পাশাপাশি অনেকে ভাবেন, অতিরিক্ত মিষ্টি বা চিনি খেলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু তা সঠিক নয়। চিনি এবং ডায়াবেটিসের মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।
দ্বিতীয়ত, সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। এবং এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ইনসুলিন হরমোন। ইনসুলিন হরমোনের কম নিঃসারণ হওয়ার কারণে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ ইনসুলিনের অভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক থাকে না। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগ দেখা যায়। এবং হঠাৎ করে এই সমস্যা হয় না। দীর্ঘ দিন ধরে ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণের সমস্যা হলেই তবেই রক্তের শর্করার মাত্রা সমান থাকে না। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোনো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা যায়। মূলত জিনগত কারণেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ডায়াবেটিস থাকে।
ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীরা কি মিষ্টি খাবেন না?
অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তারা মিষ্টি বা অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার খেতে পারবেন না। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভুল। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এটা সম্পূর্ণ একটা ভ্রান্ত ধারণা। এই বিষয়ে তাদের পরামর্শ, সঠিক পরিকল্পনা করে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পারেন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তরা। তারা জানিয়েছেন, হয় তো ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত কেউ এক টুকরো কেক বা মিষ্টি খেলেন তাহলে তাকে অন্য রিচ খাবার বা যে খাবারে শর্করা থাকে সেই খাবার বর্জন করতে হবে। যেমন, এক্ষেত্রে ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। অথবা অন্য যে শর্করাজাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় থাকে সেগুলো খাওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। মিষ্টি বা অন্য শর্করা জাতীয় খাবার খেলে সেই শর্করা রক্তে মিশে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই মিষ্টি বা কুকিজ জাতীয় কোনো খাবার খেলে বাকি খাবার নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা করা উচিত। প্রয়োজনে কোনো ডায়াটেশিয়ানের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
জেসটেশনাল ডায়াবেটিস হলে কি সন্তানেরও ডায়াবেটিসের ডায়াবেটিস থাকে?
গর্ভধারণ অবস্থায় প্রায় ৯ শতাংশ নারী ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স থাকে এবং শরীরে জেসটেশনাল ডায়াবেটিস তৈরি হয়। কিন্তু এর ফলে যে সন্তানও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হবে এমনটা নয়। এর প্রতিকার সম্ভব। সঠিক সময়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব।
তবে যদি কোনো নারীর উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে ওই নারীর সন্তানের ইনসুলিন ক্ষরণের পরিমাণ বাড়ে। এর ফলে ওই সন্তানের ওজন বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও ওবেসিটি, শ্বাস,কষ্ট, এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে ওই সন্তান সারা জীবন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত থাকতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগের কারণে কি মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে?
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তারা অন্যদের তুলনায় একটু ভিন্ন হন। অল্পতেই রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় তাদের মধ্যে। শুধু তাই নয়, কোনো সাধারণ কারণে অবসাদগ্রস্ত দেখায় তাদের। এছাড়াও তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তার প্রবণতা থাকে। সঠিক ভাবে ঘুমও হয় না বলে বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গেছে।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পায়া যায় কিভাবে?
ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক আহার এবং শরীরচর্চা। এই তিনটি উপায়ে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীরা সুস্থ থাকতে পারেন।
কী কী খাওয়া প্রয়োজন?
একটি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির উচিত কোনো ডায়াটেশিয়ানের পরামর্শে খাবার গ্রহণ করা। কারণ, ওই ব্যক্তির কোন খাবার খাওয়া প্রয়োজন বা কোন খাবার খাওয়া উচিত নয় তা একমাত্র সঠিক ভাবে বলতে পারবেন একজন ডায়াটেশিয়ান। খাবারে সব পুষ্টিগুণ এবং সব কিছুর মাত্রা সমান থাকা প্রয়োজন। এর সাথে শাকসবজি এবং ফল খাওয়ার বিষয়ে জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।
এর সঙ্গে শরীরচর্চা করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতি দিন নিয়ম করে ব্যায়াম করতে হবে। পাশাপাশি হাঁটাহাঁটি এবং দৌড়ানোর অভ্যাস করতে হবে। চিকিৎসদের পরামর্শ, এই সব করার পাশাপাশি একজন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীর উচিত দৈনিক রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণে রাখা এবং রক্তচাপ পর্যবেক্ষণে রাখা। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে মধুমেহ রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
সূত্র : নিউজ ১৮