নিজের পায়েই কুড়াল মেরেছেন কোহলি!
নিজের পায়েই কুড়াল মেরেছেন কোহলি! - ছবি সংগৃহীত
ভারতীয় ক্রিকেটেরএকদিনের দলের অধিনায়ক থেকে অপসারিত হয়েছেন বিরাট কোহলি ৷বিরাটকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত বোর্ডের৷বিসিসিআই সূত্রে খবর, অধিনায়কত্ব ছাড়ার জন্য বিরাটকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়েছিল৷বিরাট দায়িত্ব না ছাড়ায় শেষপর্যন্ত সরানো হয় তাকে৷একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সফল বিরাট৷তবুও এই ভাবেই দায়িত্ব থেকে সরানো হলো তাকে ৷
এক দিনের ক্রিকেটে ৯৫টি ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে ৬৫টিতে জয়, ২৭টি হার। অধিনায়ক বিরাট কোহলির জয়ের শতকরা হার ৭০.৪৩।ভারত এখনও পর্যন্ত যে দু’জনের অধিনায়কত্বে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেই কপিল দেব এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির থেকে জয়ের শতাংশের বিচারে অনেকটা এগিয়ে কোহলি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন কোহলিকে সরে যেতে হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই ৷ বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন, হয়তো আইসিসি ট্রফি জয়ের ভাগ্য কোহলির যথেষ্ট খারাপ ৷ যার জন্যই টি২০ বিশ্বকাপের পর টি২০ এবং ওয়ান ডে সব ফর্ম্যাটের অধিনায়কের পদ থেকেই সরানো হল বিরাটকে ৷
এক দিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলির ব্যাটিং গড় ৭২.৬৫। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডেভিলিয়ার্স— ৬৩.৯৪।
অধিনায়ক হিসেবে এক দিনের ক্রিকেটে বিরাট কোহলির শতরান ২১। এমন রেকর্ড খুব কম ক্রিকেটারের রয়েছে ৷ তা সত্ত্বেও সময়টা এখন সত্যি খারাপই যাচ্ছে কোহলির ৷টি টোয়েন্টির পাশাপাশি এখন ওয়ান ডে ক্রিকেটেও টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক পদে রোহিত শর্মা ৷
বিরাটকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর পিছনে কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। তবে বিরাট কোহলি নিজেই কার্যত নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছেন।
১) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে থেকেই জল্পনা চলছিল, পারফরম্যান্স ভালো না হলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের দুই ফরম্যাট থেকেই অধিনায়কত্ব যাবে বিরাটের। ঘটলও সেটা।
২) সাম্প্রতিক কালে সাদা বলের ক্রিকেটে তার নেতৃত্বে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স আহামরি নয়। বড় কোনো টুর্নামেন্ট বিশেষত আইসিসি-র কোনো টুর্নামেন্টে সাফল্য পাননি কোহলি। তাই এবার রোহিতের উপরই ভরসা রাখতে চলেছে বোর্ড।
৩) বর্তমান বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে কোহলির সম্পর্ক যে তেমন ভালো নয়, সেটা অনেকদিন আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এভাবে যে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হবে, সেটা হয়তো ভাবতেই পারেননি টিম ইন্ডিয়ার পোস্টার বয়।
৪) কোহলির স্বেচ্ছাচারিতাটাও একটা বড় কারণ। ইংল্যান্ডের ঘরের মাঠে তাদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে না খেলানোটা মোটেও ভালো ভাবে নেননি বোর্ড কর্তারা। কোহলিকে একেবারে তাই সরিয়ে না দিয়ে, একটু একটু করে তার ক্ষমতা কেড়ে নিলো বোর্ড। দু'টি ফর্ম্যাটের নেতৃত্ব তার থেকে কেড়ে নিয়ে তাকে কিন্তু সতর্ক করল বোর্ড।
৫) ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমের পরিবেশও অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল। কোহলির পছন্দের এবং অপছন্দের কারা, সেই বিভাজনটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। মোদ্দা কথা, কোহলির নেতৃত্বে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে বিভাজন নীতি মাথাচারা দিয়ে উঠেছিল। সবচেয়ে বড় কথা, সব প্লেয়ারের কাছে কোহলির গ্রহণযোগ্যতা সমান ছিল না। এবং তার কাছে কোনো সমস্যা নিয়ে প্রয়োজনে প্লেয়াররা পোঁছতেও পারতেন না। সতীর্থদের সাথে সব সময়ে একটা বড় দূরত্ব রেখে চলতেন কোহলি।
৬) কোহলি'র নেতৃত্বে একাধিক এমন ঘটনা রয়েছে যেখানে ক্রিকেটাররা দু'টি ম্যাচে ব্যর্থ হলেই দলে নিজেদের জায়গা পাওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। তারা কার্যত ভয়ে ভয়ে থেকে পারফর্ম করতেন। যার ফলে খোলা মনে না খেলতে পারার ফলে সব সময় সেরাটা দেয়া সম্ভবও হতো না। কোহলির নেতৃত্বে এ রকম বড় উদাহরণ হল কুলদীপ যাদব। দুরন্ত প্রতিভা থাকার পরেও কুলদীপ নিজেও বুঝতে পারেননি, তার ভুলটা কোথায় ছিল। শুধু একা কুলদীপ নন, এ রকম বহু ক্রিকেটার রয়েছেন, যারা জানেনই না তাদের আসলে দলের মধ্যে ভূমিকাটা কী!
৭) বিরাটের স্বেচ্ছাচারিতার পাশেই রোহিত শর্মা আবার জুনিয়রদের পাশে দাঁড়াতেন সব সময়ে। প্রয়োজনে বাইরে ঘুরতে যেতেন বা হোটেলে গিয়ে এক সঙ্গে ডিনার করতেন। ব্যর্থ হলে আশ্বস্ত করতেন। রোহিতকে অধিনায়ক বাছার পিছনে এটা অন্যতম বড় কারণ।
সূত্র : নিউজ ১৮ ও হিন্দুস্তান টাইমস