সাকিবকে নিয়ে যা বললেন পাপন
সাকিবকে নিয়ে যা বললেন পাপন - ছবি সংগৃহীত
নিউজিল্যান্ড সফরে সাকিব আল হাসান ছুটি আবেদন করেছিলেন এবং সেটা মঞ্জুর হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সাকিব আল হাসান বিভিন্ন সিরিজে নিয়মিতই ছুটি চেয়ে আসছেন ২০১৭ সাল থেকে।
তাই প্রায় ৩৫-বছর বয়সী সাকিবকে বিশ্রাম দিয়ে খেলানোর কথা ভাবছেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, সাকিব আল হাসানকে বিশ্রাম দিয়ে খেলানো নিয়ে আলাদাভাবে ভাবছে না বোর্ড।
তবে নিয়মিত ছুটির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান।
সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পাপন বলেন, যে কেউ যদি ছুটি চায় আমাদের কোনো আপত্তি নাই।"
আমরা আগাম জানতে চাই হঠাৎ একটা সিরিজের আগ মুহূর্ত হলে আমাদের জন্য সমস্যা। কারো যদি বিশ্রাম লাগে সেটা যাতে জানানো যায়, বলেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট।
সাকিব আল হাসান নিউজিল্যান্ড সফরের সময় পারিবারিক কারণে ছুটি নিয়েছেন এবং বোর্ড চেষ্টা করেছে সাকিব যাতে ছুটির আপিলটা বাতিল করে।
কিন্তু সাকিবের ছুটিটা দরকার তাই শেষ পর্যন্ত ছুটি নেয়ার পক্ষেই ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক এবং সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নিউজিল্যান্ড সফর থেকে নাম সরিয়ে নিতে চান এবং পারিবারিক কারণে ছুটি চাইছেন এই খবর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরই জানা গেছে।
এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথে নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, সেখানে সাকিব আল হাসানের নাম ছিল, এর কিছুক্ষণ পরেই সাকিব আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেট বোর্ডের কাছে ছুটি চান।
গত শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাকিবের ছুটির বিষয়টা তিনি জানেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়নি তাই তাকে দলে রাখা হয়েছে।
সাকিব আল হাসানের অভিষেকের পর বাংলাদেশ ৮২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে ২৩টি টেস্ট নানা কারণে মিস করেছেন তিনি।
ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ রিফাত এমিলের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ক্যারিয়ারের প্রথম ১০ বছরে সাকিব মিস করেছেন ৭টি টেস্ট ম্যাচ। শেষ পাঁচ বছর অর্থাৎ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১৬টি টেস্ট ম্যাচ মিস করেছেন সাকিব।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন মুশফিকুর রহিম (৭৭), তামিম ইকবাল (৬৪) ও সাকিব আল হাসান (৫৯)।
সাকিব টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক এবং সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক। সাকিব ২১৫টি টেস্ট উইকেট নিয়েছেন।
বাংলাদেশের হয়ে আর কোনো ক্রিকেটার ২০০ উইকেটও পাননি।
এমনকি সাকিব সরাসরি কখনো বলেননি যে তিনি টেস্ট খেলতে চাননি, তবে ২০১৭ সাল দক্ষিণ আফ্রিকা সফর, ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ড সফর, ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সফর এবং এবারে ২০২২ সালের শুরুতে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজের এই সফরে ছুটি চাইছেন।
এ বিষয়ে বোর্ডও খোলামেলা কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়।
সাকিব আল হাসান এখন পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে আছেন, তিনি তার সাম্প্রতিক ছুটি চাওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে কোনও কথাই বলেননি।
নাজমুল হাসান পাপন শনিবার বলেছিলেন, সাকিব বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার। তিনি না থাকা মানে দুজন ক্রিকেটার নেই।
'দেখি কী ব্যাখ্যা, কারণ তো একটা দিতে হবে।'
'আনুষ্ঠানিকভাবে সে কিছু বলেনি, অনানুষ্ঠানিকভাবে আমাকে খবর দিয়েছে । আমি বলেছি না, আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে, তারপরে দেখব,' শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন পাপন।
আনুষ্ঠানিক চিঠিতে সাকিব লিখেছেন 'ফ্যামিলি রিজনস', কিন্তু কী সেই কারণ সেটাই জানতে চাইবেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট।
এমনটা নিয়মিতই হচ্ছে, এর আগে সাকিব আল হাসান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলবেন না বলে চিঠি দিয়েছিলেন এবং তখন এটা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।
তিনি শ্রীলঙ্কার সাথে আসন্ন টেস্ট সিরিজে অংশ না নিয়ে ভারতের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আইপিএল খেলতে যাবেন ছুটি নিয়ে, এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এমন খবর বের হওয়ার পর থেকেই সাকিব আল হাসানের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়।
কিন্তু ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকফ্রেঞ্জিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিলেন, তিনি ক্রিকেট বোর্ডের কাছে ছুটি চেয়ে যে চিঠি লিখেছেন সেখানে কোথাও উল্লেখ করেননি যে তিনি টেস্ট খেলতে চান না।
তিনি তখন বলেছিলেন, 'আমি যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। আমি নিশ্চিত তারা লেটারটি পড়েনি।'
'আমি আমার লেটারে কোথাও উল্লেখ করিনি যে টেস্ট খেলতে চাই না।'
সরাসরি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান আকরাম খানের নাম নিয়েই সাকিব বলেছিলেন, "আকরাম ভাই বারবার বলেছেন, আমি খেলতে চাই না, খেলতে চাই না, খেলতে চাই না।"
সাকিব আল হাসান ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে নিয়মিত পড়ছে।
সাকিব যেমন নিয়মিত বিরতিতেই ছুটি চাচ্ছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উর্ধ্বতন ব্যক্তিরা এটা নিয়ে সরাসরি সাকিবের সাথে আলোচনা না করেই গণমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন।
যেমন, এবারই সাকিব মৌখিকভাবে ছুটি চাওয়ার পরেও নিউজিল্যান্ড সফরের দলে রাখা হল তাকে।
এটা নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক প্যানেলের সদস্য হাবিবুল বাশারের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়। কিন্তু তিনি বলেছেন, বোর্ড থেকে কোনও বিষয়ে কথা বলায় বারণ আছে।
সমর্থকরা শুধু সাকিবকে 'মাঠে' চান
ঢাকার ক্রিকেট ভক্ত সাদিয়া সেতু মনে করেন, সাকিব যদি চান এখন বেছে খেলতে, কিংবা সামনে বড় টুর্নামেন্টের প্রতি মনোযোগ দিতে, সেটা ঠিক আছে, কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত হিসেবে তিনি চান সাকিব খেলুন।
'সাকিব যদি খেলে এমনিই দলের মনোবল চাঙ্গা হয় সে না থাকলে দলটা অসম্পূর্ণ লাগে।'
নিয়মিত ক্রিকেট দেখেন আমিনুল আনন্দ। তার মতে, 'একজন ভক্ত হিসেবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে মাঠে খেলতে দেখাটা সবসময়ই উপভোগ্য। কিন্তু যেহেতু খেলাটা একটা প্রফেশন, এবং প্রফেশন থেকে যে কেউ ছুটি চাইতেই পারে।'
এই ক্রিকেট অনুসরণকারীর মতেও, সাকিব না থাকাতে দলের শক্তিমত্তা অনেক কমে যাবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করলে এসব বিরতি যেকোনো খেলোয়াড়কে পুরোদ্যমে, আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি