আমেরিকা এখন বুড়ো সিংহ

গৌতম দাস | Dec 04, 2021 03:57 pm
আমেরিকা এখন বুড়ো সিংহ

আমেরিকা এখন বুড়ো সিংহ - ছবি সংগৃহীত

 

গত ১৯৪৫ সালকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে একটা ভালো ‘জংশনের বছর’ বলা যায়। এই জংশন হলো, একদিকে দুনিয়ায় বিশ্বযুদ্ধে ভেঙে পড়া পুরোনা রাজনৈতিক অর্ডার মানে ওর অবশিষ্ট নিয়ম শৃঙ্খলাগুলো ক্রমশ সে ত্যাগ করছে আর অন্যদিকে নতুন এক অর্ডারে দুনিয়া নিজে চলতে শুরু করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল অর্ডার বা এই নয়াবিধি ‘ব্যবস্থা’ শুরু হচ্ছে জাতিসঙ্ঘকে কেন্দ্রে রেখে মূলত এবং অন্তত তিনটা বহুরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে নিয়ে। এই বিগত অর্ডারটাকে যদি বলি কলোনি যুগ বা কলোনি ক্যাপিটালিজমের কাল তবে, নতুন যা গড়ে উঠছে তা আমেরিকান নেতৃত্বে এক গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম যদিও কমিউনিজম এটা সরাসরি স্বীকার করতে চায়নি। কেবল জাতিসঙ্ঘ গঠনের সময়ে নিজের ভেটো সদস্যপদটা ঠিকঠাক বুঝে নিয়ে বাকি ব্যাপারে পরোক্ষে আমেরিকা যা করে করুক, মেনে নিয়েছিল। আর অন্যদিকে, এক বিশাল গ্লোবাল বাণিজ্য বিনিময় ব্যবস্থা চালু করতে বহুরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এদের জন্ম হোক; তা আমেরিকা গড়ে তুলুক এটা ইউরোপ মনেপ্রাণে চেয়েছে।

আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক জন্মের টানা ২২ দিনের জন্মসভার হোটেলে বসবাসে সোভিয়েত ইউনিয়নও আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত থেকেছে; অংশ নিয়েছে। কিন্তু ১৯৪৫ সাল থেকে এরা কার্যকর হয়ে গেলে তখন আর সদস্যপদ রাখেনি। আবার কোনো বাধাও দেয়নি। কেন কী হয়েছিল, কেন সোভিয়েত ইউনিয়নের এমন সিদ্ধান্ত তা প্রকাশ্যে, স্টালিন তখনো জীবিত ও ক্ষমতাসীন- তা সত্ত্বেও কোথাও তিনি জানাননি। লিখিত কিচ্ছু নেই। তবে আমেরিকা তার নয়া গ্লোবাল অর্ডার নিয়ে ঠিকই এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পঁচাত্তর বছর পরে আমেরিকা এখন এক বুড়া সিংহ যার যৌবন কেটেছে ‘রুস্তমি’ করে। সে চেয়েছে জানলেই তখন অনেক কিছু হয়ে যেত।

চলতি শতক বা দুহাজার সাল থেকে আমেরিকার অর্থনৈতিক সক্ষমতা যে ঢলে পড়ছে তা আর লুকিয়ে রাখা যায়নি। আর এর বিপরীতে চীনের উত্থান এবং সমৃদ্ধ ও প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে চীন সেই নেতৃত্বের জায়গা নিতে উঠে আসা, সেটাও স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল।

মজার কথা হলো, ওবামা আমল পর্যন্ত যত প্রেসিডেন্ট তারা কেউ স্বীকার করেননি, চীন উঠে আসছে, আমেরিকা বুড়া সিংহ হচ্ছে। এই বাস্তব সত্যটা স্বীকার না করাটাই যেন আমেরিকান সব প্রশাসনের অফিশিয়াল অবস্থান। একমাত্র ব্যতিক্রম দেখা যায় জিবিগনিউ ব্রেজনিস্কি যিনি চীন-আমেরিকা সম্পর্ককে প্রথম (১৯৭৮) পারস্পরিক স্বীকৃতির রূপ দিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন, তার বেলায়। যখন তিনি ছিলেন (১৯৭৭-৮১) প্রেসিডেন্ট কার্টারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (ঘঝঅ)। তিনি খোলাখুলি চীনা উত্থান প্রসঙ্গে নিজের বইয়ে লিখেছেন। এমনকি ওবামাও আমেরিকান নেতৃত্ব আরো বজায় থাকবে কিনা এ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠে গেছে তা স্বীকার করে সেবার উলটা দাবি করে বেড়াতেন যে, আমেরিকাই আরো নেতৃত্বে থেকে যাবে। এই প্রসঙ্গে বিশেষ করে ২০১১ সালে ওবামার আয়ারল্যান্ড সফরে দেয়া বক্তৃতায় এমন জোরদার দাবি উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু কেন চীনের গ্লোবাল নেতৃত্বে উত্থান বা আমেরিকান বুড়া সিংহ হয়ে যাওয়ার স্বীকার-অস্বীকার নিয়ে কথা তুলছি?

কারণ, উপরে উল্লেখিত ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনে এবারের ‘সাউথ এশিয়া ব্রিফে’ কুগেলম্যানের সাথে যৌথভাবে লেখা একটা আর্টিকেল ছাপা হয়েছে। ওতে সহলেখকের নাম আনু আনোয়ার, জন্স হপকিন্স ইউনির যিনি পিএইচডি প্রার্থী।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us