মোদির নতুন চাল ডিজিটাল ব্যাংক!
মোদির নতুন চাল ডিজিটাল ব্যাংক! - ছবি সংগৃহীত
ব্যাংক হবে ডিজিটাল। অর্থাৎ কোনো শাখা থাকবে না। এমন দিনও আসছে। আর তার কারিগর স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার নরেন্দ্র মোদি নিজেই জানিয়েছেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে সব লেনদেন হবে ডিজিটাল মাধ্যমে। ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ ডিজিটাল ব্যাংকের পথে হাঁটছে ভারত। আর আগামী দিনে এটাই হবে স্বাভাবিক একটা চিত্র।’ মোদি বলেছেন, ফিনান্সিয়াল টেকনোলজিকে এমন এক হাই প্রোফাইল আধুনিকতায় পৌঁছে দিতে হবে, যা অর্থনীতিতে নতুন বিপ্লব আনবে। অর্থাৎ, মোদির ডিজিটাল ভারত নতুন এক আশঙ্কার জন্ম দিতে চলেছে। একদিকে প্রযুক্তির সাথে দূর-দূরান্ত সম্পর্ক না থাকা আম জনতার ভোগান্তি, আর অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর কর্মী সঙ্কোচন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের মধ্যেই আরো একবার সিঁদুরে মেঘ।
২০১৬ সালে ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট বাতিলের নায়ক নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার ইনফিনিটি ফোরামের একটি সম্মেলনে নোটহীন ডিজিটাল অর্থনীতির জয়গান গেয়েছেন। জানিয়েছেন, গত বছর এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। গোটা দেশে এটিএম থেকে যত টাকা তোলা হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি আর্থিক লেনদেন হয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে। অর্থাৎ অনলাইনে। সুতরাং আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নোটকে টপকে গিয়েছে ডিজিটাল পেমেন্ট। মোদির কথায়, আর্থিক লেনদেনের এক দীর্ঘ বিবর্তন দেখেছে ভারত। শুরু হয়েছিল পণ্যের আদানপ্রদান থেকে। এরপর ধাতু, তারপর কয়েন এবং শেষে নোট। চেক থেকে আর্থিক লেনদেন বদলে গিয়েছে কার্ডে। এই লম্বা জার্নির সাফল্যের নবতম উদাহরণ হতে চলেছে ডিজিটাল ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ডিজিটাল ব্যাংক আজ বাস্তব। এটাই হবে আগামী দিনের স্বাভাবিক একটি চিত্র। অর্থাৎ কোনো ফিজিক্যাল ব্যাংক শাখা থাকবে না। ব্যাংক হবে ডিজিটাল। যেকোনো আর্থিক লেনদেন হবে ডিজিটাল মাধ্যমে। এভাবে মোদি বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, ভবিষ্যতে কোনো ব্যাংক শাখায় যাওয়ার প্রয়োজনই পড়বে না! কারণ ব্যাংক শাখা বলেই আর কিছু থাকবে না। সবই হবে ডিজিটাল।
প্রশ্ন উঠছে এই সম্ভাবনার বাস্তবায়ন নিয়ে। এখনও ১৩৫ কোটি ভারতবাসীর মধ্যে কতজন নিত্যদিনের প্রতিটি কেনাকাটা বা আর্থিক লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে করে? ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য সবার আগে কী দরকার? ইন্টারনেট ডেটা। সেটা ভারতের সর্বত্র আজও সহজলভ্য নয়। বয়স্ক ও দরিদ্র—এই দুই শ্রেণি সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়ে অনলাইন পেমেন্টে। ভারতীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিপুল সংখ্যার মানুষই অবসরপ্রাপ্ত ও প্রবীণ প্রজন্মের। তাদের পক্ষে ব্যাংকের সম্পূর্ণ ডিজিটাল পরিষেবার সাথে আদৌ কি মানিয়ে নেয়া সম্ভব? একইসাথে ব্যাংকের বেসরকারিকরণ নিয়ে আন্দোলনে নামা অল ইন্ডিয়া ব্যাংক কর্মী ও অফিসারদের সংগঠনের আশঙ্কা, শাখাহীন ব্যাঙ্কের বাস্তবায়নে সবার আগে হবে কর্মী সঙ্কোচন। প্রতিটি কাজই যদি ডিজিটাল মাধ্যমে হয়, তাহলে আর শাখায় পর্যাপ্ত ব্যাংককর্মীর প্রয়োজনই হবে না। অর্থাৎ আগামী দিনে ব্যাংকিং সেক্টরের চাকরির সুযোগও কমবে।
শুক্রবার এই সম্মেলনে গরিবের জন্য জনধন অ্যাকাউন্টের সাফল্যকে মোদি তুলে ধরেছেন কৃতিত্ব হিসেবে। গত সাত বছরে ৪৩ কোটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এবং ৬৯ কোটি রুপে কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। একদিকে মোদি চাইছেন ডিজিটাল ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা। আর তাঁর চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখেই রিজার্ভ ব্যাংক প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় ডিজিটাল কারেন্সির। প্রস্তুতিপর্ব প্রায় শেষ।
সূত্র : বর্তমান