১০০ কিলোমিটার বেগে ভারতে আঘাত হানবে জাওয়াদ!
১০০ কিলোমিটার বেগে ভারতে আঘাত হানবে জাওয়াদ! - ছবি : সংগৃহীত
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ নিয়ে বুধবার দিল্লিতে গুরুত্বপূ্র্ণ বৈঠক করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সংকট মোকাবিলা কমিটি। বিভিন্ন রাজ্য প্রশাসনের তরফে এই ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা নিয়ে ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবার নেতৃত্বে এই দিন বৈঠক হয়।
এই কমিটির অলোচনায় কেন্দ্রীয় মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল জানান, একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরের উপরে। ৩ ডিসেম্বর এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আকার নেবে। সেটি অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল অতিক্রম করবে ৪ ডিসেম্বর, সেই সময় এটির হাওয়ার গতি থাকবে, ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। পাশাপাশি বিপুল বৃষ্টি ও সমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলে এই প্রাকৃতির দুর্যোগ দেখা দেবে। ঘূর্ণিঝড় মূলত প্রভাব ফেলবে শ্রীকাকুলাম, বিশাখাপত্তনম ও বিজয়নগরমে। এ ছাড়া এর প্রভাব পড়বে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। দক্ষিণবঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হতে পারে এই দুর্যোগের প্রভাবে।
এই কমিটির বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মুখ্যসচিব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। সেখানে তারা ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি আটকাতে কী ব্যবস্থা প্রশাসনিক স্তরে নেয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। যে রাজ্যগুলিতে ক্ষয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে আপাতত ৩২টি দল পাঠিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এ ছাড়া প্রয়োজনে আরো অতিরিক্ত দল পাঠাতে হতে পারে বলে খবর। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে নৌবাহিনীকেও।
আলোচনায় ক্যাবিনেট সচিবের পক্ষ থেকে ক্ষয় ক্ষতি এড়াতে যথেষ্ট ব্য়বস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। যে অঞ্চলে এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেই অঞ্চলে যাতে যতটা সম্ভব ক্ষয়ক্ষতি হয় ও প্রাণহানী এড়ানো যায়, তার ব্যবস্থাও করতে বলা হয়েছে। সম্ভাব্য গতিপথের এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে মানুষদের। পাশাপাশি, মৎস্যজীবীরা যাতে এই সময়ে কোনো মতেই সমুদ্রে না যান, সে বিষয়েও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ কানাডার সাসকাচোয়াল ইউনিভার্সিটির গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, গ্রিন হাউজ গ্যাস বৃদ্ধির ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে খুবই দ্রুত গতিতে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী জলবায়ুতে পরিবর্তনের প্রমাণ আছে। উল্লেখ্য, জলবায়ুর পরিবর্তনে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়, প্রশান্ত মহাসাগরে টাইফুন আটলান্টিক মহাসাগর ও মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চলে হ্যারিকেনের সৃষ্টি হচ্ছে এবং বিজ্ঞানীদের কাছে এর প্রমাণ রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনেই ঝড় হচ্ছে এটা আগের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট প্রমাণ রেখে যাচ্ছে প্রকৃতিতে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আগে শুধু ওমানের পূর্ব উপকূলেই আঘাত করত। এ বছরই প্রথম আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় ওমানের উত্তর উপকূলে আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে শক্তিশালী কোনো ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে সংঘটিত হয়নি। অধিকন্তু ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার নজির নেই বললেই চলে কিন্তু সে ঘটনাই ঘটতে যাচ্ছে।’
মোস্তফা কামাল বলেন, ডিসেম্বরের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি যদি আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল নির্দেশিত পথেই চলে তাহলে এটা ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করতে পারে। সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি নজির হয়ে থাকবে আবহাওয়া বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে ঘূর্ণিঝড়টির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে।’
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়টির সৃষ্টি নিশ্চিত করেছে আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি যে দশায় রয়েছে তাকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে ইনভেস্ট। ভারত মহাসাগরীয় এলাকার দেশগুলো এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে জাওয়াদ। এর নম্বর দেয়া হয়েছে ৯৪ ডব্লিউ। এটি গতকাল বুধবার দুপুর নাগাদ ১২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছিল। দুপুর পর্যন্ত সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
সূত্র : নিউজ ১৮ ও অন্যান্য