ভারতের হাতে এবার স্করপিন গোত্রের সাবমেরিন, টার্গেট চীন!
ভারতের হাতে এবার স্করপিন গোত্রের সাবমেরিন, টার্গেট চীন! - ছবি সংগৃহীত
ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি বাড়াতে এবার হাজির স্করপেন গোত্রের ডুবোজাহাজ (সাবমেরিন) আইএনএস ভেলা। বৃহস্পতিবার নৌবাহিনীর নুতন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলো এই ডুবোজাহাজকে। সরকার পরিচালিত মঝগাঁও শিপবিল্ডার্স লিমিটেড এই জাহাজটি তৈরি করেছে। এটি ভারতের স্করপেন গোত্রের চতুর্থ ডুবোজাহাজ।
এর আগে ২০১৭-তে আইএনএস কালভারি, ২০১৯-এ আইএনএস খান্ডেরি এবং ২০২১-এ আইএনএস করঞ্জ-কে নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পঞ্চম ডুবোজাহাজ আইএনএস ভাগির-এর প্রস্তুতি পর্ব চলছে।
ভারতীয় বিশ্লেষকেরা বলছেন, সমুদ্রের নিজেদের শক্তি বাড়াতে একের পর এক ঘাতক ডুবোজাহাজের অন্তর্ভুক্তিকরণ হচ্ছে নৌবাহিনীতে। বিশেষ করে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যেভাবে একটা টানাপড়েনের আবহ তৈরি হয়েছে এবং চীন তাদের প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে অত্যাধুনিক এবং ঘাতক ডুবোজাহাজ আইএনএস ভেলার নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
ভেলা নতুন নাম নয়। এর আগেও এই নামে নৌবাহীনীর একটি ডুবোজাহাজ ছিল। ১৯৭৩-২০১০ পর্যন্ত নৌবাহিনীর সদস্য ছিল সেই ডুবোজাহাজ। এ বার সেই নামেই এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত আইএনএস ভেলা-কেই নুতন রূপে হাজির করা হয়েছে। আগের ডুবোজাহাজটি ছিল রাশিয়ার ফক্সট্রট গোত্রের। কিন্তু নতুন রূপের আইএনএস ভেলা স্করপেন গোত্রের। এক সঙ্গে আট জন নৌ-আধিকারিক এবং ৩৫ জন সেনা বহনের ক্ষমতা রয়েছে এই জাহাজের। এই জাহাজটিতে রয়েছে সি৩০৩ অ্যান্টি টর্পেডো কাউন্টারমেসার সিস্টেম। এক সাথে১৮টি টর্পেডো বহন করতে পারে। শুধু তাই নয়, আইএনএস ভেলাতে রয়েছে জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
লক্ষ্য গ্রহাণু, মহাকাশে ডার্ট ‘ছুড়ে দিল’ নাসা
‘৩,২,১... লিফ্ট অফ’ — ঘোষিকার কথা শেষ হতে না-হতেই গতকাল রাতের অন্ধকারে আকাশের বুক চিরে মহাশূন্যে পাড়ি দিলো নাসার ‘ডার্ট’। কোনও গ্রহ, উপগ্রহ এর গন্তব্য নয়। বরং আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের ‘ছোড়া’ এই ‘ডার্ট’ সোজা গিয়ে আছড়ে পড়বে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা একটি গ্রহাণুতে। বদলে দেবে তার গতিপথ। অভিযানের নাম— ‘ডার্টমিশন’।
কিন্তু কেন এমন অভিযান?
কোটি কোটি বছর আগের কথা। পৃথিবীতে তখন রাজত্ব করত ডাইনোসরেরা। হঠাৎই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তারা। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান, এ সময়ে একটি গ্রহাণু আছড়ে পড়েছিল পৃথিবীতে। তাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল প্রাগৈতিহাসিক প্রজাতিটি। আবার যদি এমন কিছু হয়? ভবিষ্যতে ফের যদি কোনো গ্রহাণু আছড়ে পড়ে পৃথিবীর মাটিতে! এমন কিছু ঘটলে, এখনো পর্যন্ত তাকে প্রতিরোধ করার কোনো ক্ষমতা বিজ্ঞানীদের জানা নেই। এই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই নতুন অভিযানে নামল আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। পুরোটাই এখন পরীক্ষামূলক অভিযান। নাসার এ ধরনের পরীক্ষা এই প্রথম। নিশানায় থাকা গ্রহাণুটির উপর আছড়ে পড়ে তার গতিপথ বদলে দেবে নাসার মহাকাশযানটি।
মঙ্গলবার ক্যালিফর্নিয়ার ভ্যাডেনবার্গ মহাকাশ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ইস্টার্ন স্ট্যানডার্ড টাইমে রাত ১টা ২৩ মিনিটে ‘ফ্যালকন ৯’ রকেটে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে ‘ডার্ট’ বা ‘ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডায়রেকশন টেস্ট’ স্পেসক্রাফ্ট। ঘণ্টায় প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার গতিবেগে চলা গাড়ির আকারের মহাকাশযানটি আছড়ে পড়বে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা একটি গ্রহাণুতে। তার এই প্রবল ধাক্কায় বদলে যাবে গ্রহাণুটির চলার পথ। একে বারে ‘কাইনেটিক ইমপ্যাক্ট’। পৃথিবীর নিরাপত্তায় বেছে নেওয়া হয়েছে এই প্রতিরক্ষা পদ্ধতি।
এ প্রায় যুদ্ধ ঘোষণা। নাসা টুইট করেছে— ‘ডাইমরফোস গ্রহাণু : আমরা আসছি তোমার খোঁজে।’ তাদের ডার্টের লক্ষ্য হল ডাইমরফোস। ৫২৫ ফুট চওড়া ডাইমরফোসের উপরে আছড়ে পড়বে ডার্ট। তার পর কক্ষপথ থেকে সামান্য সরিয়ে দেবে তাকে। এই ডাইমরফোস আবার প্রদক্ষিণ করছে তার থেকে বহু বড় গ্রহাণু ডিডাইমসকে (২৫০০ ফুট ব্যাস)। দু’টি গ্রহাণু একত্রে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। বলা হয়, ডিডাইমসের ‘মুনলেট’ (উপগ্রহের মতো) হল ডাইমরফোস।
এই দুই গ্রহাণু অবশ্য পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর নয়। সবটাই করা হচ্ছে পরীক্ষামূলক ভাবে। তবে এরা ‘নিয়ার আর্থ অবজেক্টস’ গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে। পৃথিবীর চারপাশে ৩ কোটি মাইলের মধ্যে কোনও মহাজাগতিক পদার্থ চলে এলেই তাকে এই গোষ্ঠীতে ফেলা হয়। সেখানে এই দুই গ্রহাণু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে পৃথিবীর থেকে ৬৮ লক্ষ মাইল বা ১ কোটি ১০ লক্ষ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসবে। তখন তাদের উপরে হামলা চালাবে ডার্ট। পৃথিবী থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্র ও প্ল্যানেটারি রেডার মারফত নজর রাখা হবে গোটা পর্বে।
এই পরীক্ষাটি করে দেখা হবে, যদি ভবিষ্যতে কোনো গ্রহাণু বা মহাজাগতিক পদার্থ পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, এই প্রযুক্তিতে তাকে সফল ভাবে প্রতিরোধ করা যাবে, কি না। নাসার শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী টমাস জুবারচেন বলেন, ‘বিপদকে কী করে রাস্তা থেকে হটানো যায়, তার পদ্ধতি শেখার চেষ্টা করছি আমরা।’