ডায়াবেটিস মাপার যেসব ভুল করবেন না
ডায়াবেটিস মাপার যেসব ভুল করবেন না - ছবি সংগৃহীত
যখন আমাদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যায় সে অবস্থাকে সাধারণত আমরা ডায়াবেটিস বলে অভিহিত করে থাকি। রোগের কারণের ওপর ভিত্তি করে ডায়াবেটিস সাধারণত দুই প্রকার টাইপ। সেগুলো হলো টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু। এছাড়া মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে এক ধরনের ডায়াবেটিস হয় সেটিকে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলা হয়। যখন কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় তখন নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। কেননা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা অনুযায়ী খাবার ও জীবনযাপনের ধরন পাল্টাতে হয় এই সময়ে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা হরহামেশাই ইচ্ছে মতো ডায়াবেটিস বা রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করে থাকি। আপনি জানলে অবাক হবেন যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের ডায়াগনোসিস ভুল হয়। এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপের সময় আমরা সাধারণত কী ধরনের ভুল করে থাকি-
পুরাতন টেস্ট স্ট্রিপ ব্যবহার করা
সবচেয়ে বেশি করা ভুলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ভুল হলো পুরাতন টেস্ট স্ট্রিপ ব্যবহার করা। সাধারণত গ্লুকোমিটার এর সাথে ছোট্ট একটি স্ট্রিপ দেওয়া থাকে। স্ট্রিপ এর সাহায্যে রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করা হয়। তাই অনেকেই স্ট্রিপ এর মেয়াদ আছে কিনা সেটি পরীক্ষা না করেই ব্যবহার করে থাকেন। ফলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের ভুল ডায়াগনোসিস ডেকে আনতে পারে অনেক বড় ধরনের বিপদ। তাই আমাদের উচিত স্ট্রিপের মেয়াদ আছে কিনা সেটা দেখে এরপর গ্লুকোজ পরিমাপের কাজে ব্যবহার করা।
ডায়াবেটিস টেস্টের সময় সম্পর্কে যত্নশীল না হওয়া
অনেক বেশি আগে অথবা অনেক পরে ডায়াবেটিস টেস্ট করা হলে সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় খাবার পরপরই ডায়াবেটিস টেস্ট করা হয় কিন্তু এটি আসলে সঠিক পদ্ধতি নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে খাবার গ্রহণের দুই ঘণ্টা পর ডায়াবেটিস টেস্ট করা উচিত।
অনিয়মিতভাবে ডায়াবেটিস টেস্ট করা
যেহেতু আমাদের দেশের প্রায় বেশির ভাগ মানুষের বর্তমানে ডায়াবেটিস রয়েছে তাই এটি খুব সহসাই দেখা যায় যে আমরা ডায়াবেটিস নিয়মিত মাপার ব্যাপারে খুবই উদাসীন। দেখা যায় একদিন মাপা হয়েছে তো পরপর তিন দিন মাপা হয়নি অথবা এক দিন সকাল ৮টায় মাপা হলো আবার অন্য দিন সন্ধ্যা ৭টায়। এভাবে অনিয়ম করলে কখনোই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডায়াবেটিস মাপা। এতে করে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব।
নোংরা হাত দিয়ে স্ট্রিপ ধরা
ডায়াবেটিস টেস্টের ক্ষেত্রে দেখা যায় আমরা কোনো কাজ করছি কিন্তু হঠাৎ করে সেখান থেকে এসেই নোংরা হাত দিয়ে স্ট্রিপের মূল স্থানে হাত দেওয়ার পর সেটি গ্লুকোমিটার স্থাপন করি। কিন্তু এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো নোংরা হাত দিয়ে স্ট্রিপ ধরার কারণে গ্লুকোমিটারে স্ট্রিপ থেকে সঠিক ফলাফল যাচাই করা সম্ভব হয় না। এজন্য ডায়াবেটিস টেস্ট স্ট্রিপ ধরার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত।
সঠিক টেস্টিং কিট ব্যবহার করা
বাজারে বিভিন্ন ধরনের ডায়াবেটিস টেস্টিং কিট পাওয়া যায়। এগুলো ডায়াবেটিসের ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। তাই টেস্ট কিট কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই রোগীর অবস্থা বুঝে কিড নির্বাচন করতে হবে এবং সেগুলো দিয়ে রক্তের গ্লুকোজ নির্ণয় করতে হবে তাহলে সঠিক ফলাফল পাওয়া সম্ভব হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রক্তের গ্লুকোজ নিয়মিত পরিমাপ করা খুবই জরুরি। সুতরাং আমাদের সবার উচিত রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপের সময় উপরিউক্ত ভুলগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা। এতে করে আমরা যেমন গ্লুকোজের পরিমাণের সঠিক ফলাফল পাবো তেমনিভাবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়ন্ত্রিত জীবন ধারা মেনে চলার মাধ্যমে সুস্থ থাকতে পারবো। তাই আসুন সঠিকভাবে রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করি, সুস্থ-সবল জীবন গড়ি।
লেখক : শিক্ষার্থী, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ