শাপলা ফোটা সাতলা বিল
সাতলা বিল - ছবি সংগৃহীত
সানির বাবা ব্যাংকে চাকরি করেন। এ জন্য তারা শহরে বাস করে । বাবা তেমন ছুটি পায় না বললেই চলে। তার উপরে সানির স্কুলের লেখাপড়ার চাপ। তাই গ্রামে তেমন একটা যাওয়া হয় না। এ বছর তালপিঠা খাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা ভাদ্র মাসে গ্রামে মামার বাড়ি বেড়াতে গেলো। ছোট মামা সানিকে নিয়ে শাপলার বিল দেখাতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো। শুনেই সানি যাওয়ার জন্য উৎফুল্ল হয়ে উঠলো।
শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। তাই সানির শাপলা ফুল খুব পছন্দ।
সানি মামার কাছে জানতে চাইলো ----
মামা শাপলার বিলটি কোথায়?
মামা বললেন শোনো ----
বর্ষাকালে আমাদের দেশে বিলে ঝিলে শাপলা ফোটে। তার মধ্যে অন্যতম একটি স্থানের নাম হলো সাতলার বিল। বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায় সাতলা গ্রামের বিলগুলো স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামে পরিচিত।
মামা সাতলার বিলে কি শাপলা চাষ করে?
না শাপলা চাষ করার দরকার হয় না। এখানে কবে থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়েছে এ তথ্য পাওয়া না গেলেও জানা যায় এখানে লাল, সাদা আর বেগুনি এই তিন ধরনের শাপলা জন্মে। তবে লাল শাপলা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সাতলা গ্রামের প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমিতে শাপলা জন্মে। এক পলকে মনে হবে, লাল শাপলার কোনো চাদর। পুরো বিলজুড়ে বিছানো শাপলা। তাই গ্রামটির নামই হয়ে গেছে ‘শাপলা বিল’। সবাই এই নামে ডাকে উত্তর সাতলা গ্রামটিকে। সাতলা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামে প্রাকৃতিকভাবেই এই শাপলার অবারিত রঙিন রূপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। রূপসী বাংলার এই রূপের প্রশংসা এখন গ্রাম ছাড়িয়ে দেশ-দেশান্তরে। সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফুল ফোটে। আর ওই বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে জেলা ছাড়িয়ে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। শিগগিরই এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
এই বিলের চারপাশে গাঢ় সবুজের পটভূমিতে এ যেন বাংলার এক মুখরিত ‘লাল স্বর্গ’।
মামার কথা শুনে সানি বেশ কৌতূহলী হয়ে ওঠে। সানির মনের মাঝে এক কল্পনার জগৎ তৈরি হয়।
অবশেষে সাতলার বিল দেখার জন্য রওনা দিলো তারা।
দূরত্ব কমার সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব। আগাছা আর লতাপাতায় ভরা বিলে ফুটন্ত কোটি কোটি লাল শাপলা সত্যিই সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিলের লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনোমুগ্ধকর এ বিলের শাপলা দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণ পিপাসু প্রকৃতিপ্রেমীরা। বিল দেখতে আসা অনেক লোকের সাথে দেখা হলো সানিদের। সানি এটাও জানতে পারলো এ বিলের শাপলাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বিজ্ঞাপনচিত্র। ফলে দিন দিন দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে সাতলার ‘শাপলার বিল’।
মামা কবে থেকে এখানে শাপলা ফোটে ?
ঠিক কত বছর ধরে বিলে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে সঠিকভাবে সে তথ্য কেউ দিতে পারেনি। তবে স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, তাদের জন্মের পর থেকেই এ বিলে এভাবে শাপলা ফুটতে দেখছেন তারা। বছরের অধিকাংশ সময় জলমগ্ন থেকেই এ বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙের তিন ধরনের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলার আধিক্য বেশি।
মামার সাথে নৌকায় চড়লো সানি। বিলের যত ভেতরে এগোতে থাকে ততই লালের আধিক্য। একপর্যায়ে মনে হলো শাপলার রাজ্যে হারিয়ে গেছে ওরা।
সানি আজ এ কথাটাও জানতে পারলো যে শাপলার বিল শুধু সৌন্দর্য নয়। বিল থেকে শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ওইসব এলাকার অসংখ্য পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখাকার বাসিন্দাদের অনেকেই এই বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। এদের কেউ শাপলা তুলে, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে ওই এলাকার কয়েক শ’ পরিবার। এখানে ডিসেম্বর মাসে শুরুর দিকে শীতের মৌসুমে যখন পানি কমে যায় তখন সব শাপলা মরে যায়। ওই সময় কৃষকরা এখানে ধান চাষ করেন। তবে একই সাথে ধান ও শাপলার এই সহাবস্থান আর কোথাও আছে কি না সন্দেহ।
সাতলার বিলে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে আত্মতৃপ্তি অনুভূত হলো সানির। আর মনে মনে ভাবলো
এই তো আমার বাংলাদেশ। এই তো আমার সুখের ঠিকানা।