আফগান সমীকরণ
আফগান সমীকরণ - ছবি সংগৃহীত
আফগানিস্তান হলো মালভূমির ওপর অবস্থিত এমন একটি ভূ-বেষ্টিত দেশ যার চারপাশে রয়েছে ইরান, পাকিস্তান, চীন, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান। প্রাচীন শিলালিপি থেকে জানা যায়, ৫০ হাজার বছর আগ থেকে দেশটিতে মানুষের বসবাস। বর্তমান বিশে^র চলমান ঘটনার গরম ইস্যু আফগানিস্তান। দুনিয়ার যেকোনো সচেতন মানুষমাত্রই এখন দেশটি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। তারা অবাক হয়ে জানতে চাইছে, এ কোন জাতি যারা সমরে, সাহসে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। দুই দশক পর সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারে কাবুলে ফের ক্ষমতায় ফিরেছে তালেবান। মার্কিন মদদপুষ্ট প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পালিয়ে বেঁচেছেন। তবে পালানোর সময় নিয়ে গেছেন অঢেল টাকা-কড়ি। তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারে লুণ্ঠিত সম্পদ না ধরায় কিছু ফেলেও দিতে হয়েছে। তার ভবিষ্যৎ আছে না! অথচ সেখানকার আশি শতাংশের বেশি জনগোষ্ঠী দরিদ্র। তাদের দু’বেলা দু’টি রুটি জোগাড় করাই কষ্টসাধ্য।
দারিদ্র্য নিয়ে আফগানিস্তানের তালেবান অর্থমন্ত্রী কারি দীন মোহাম্মদ হানিফ বলেছেন, তাদের সরকার আগের সরকারের মতো বিশ্বের কাছ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা চায় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ২০ বছর ধরে পুরোনো ব্যবস্থায় সমর্থন জুগিয়েছে। কিন্তু সেটা ব্যর্থ হয়েছে। জটিল অর্থনীতি চালানোর অভিজ্ঞতা হানিফের নেই। তালেবানের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কাজে জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন আফগানিস্তান ও কাতারে। তবে প্রথম তালেবান আমলে হানিফ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। হানিফ তার বক্তব্যে ঠিক জায়গাটাই ধরেছেন। হামিদ কারজাই ও আশরাফ গনির আমলে শত বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সত্ত্বেও তারা আফগানদের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাদের শাসন এবং মার্কিন দখলদারির ২০ বছর পরও এখন তিনজন আফগানের মধ্যে একজনের খাবার জোটে না। ৭২ শতাংশ মানুষ সেখানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, ৬৫ শতাংশ বিদ্যুৎ-সুবিধা পায় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে কোনো কাজেই আসেনি।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী গুটিয়ে নেয়ার বিষয়টি চার দশক আগের ভিয়েতনামের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেখানেও একই অবস্থা হয়েছিল মার্কিন বাহিনীর। নাইন-ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ওসামা বিন লাদেন লুকিয়ে থাকায় তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। ২০০১ সালে তালেবানের বিরুদ্ধে উত্তর-পুবের বাদাখশান প্রদেশ থেকেই মার্কিন বিমান হামলা শুরু হয়েছিল। যেমন ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেন বিপুল মানববিধ্বংসী অস্ত্র মজুদ করেছেন এই অজুহাতে ইরাকে হামলা চালিয়ে পুরো দেশ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। পরে প্রমাণিত হয়, ইরাকে সেরকম কোনো বিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না। আসলে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদ লুণ্ঠণ এবং সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য পোক্ত করাই ছিল ইঙ্গ-মার্কিন চক্রের লক্ষ্য।
আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র পাততাড়ি গোটানোয় বিশ্বরাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত বহন করে। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন মিত্র ভারত বেকায়দায় পড়বে, তা অনুমেয়। আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর পরিস্থিতি কোন দিকে এগোয়, তা নিয়ে রয়েছে বিশ্ববাপী কৌতূহল। কিন্তু অনস্বীকার্য যে, আফগানিস্তানের পরিবর্তনটা অনেক দিন ধরেই অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। সাত-আট বছর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বোধোদয় হয়, আফগানদের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য; সেখানে বেশি দিন টিকে থাকা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে মার্কিন প্রশাসন। যদিও যোগাযোগটা গত দুই বছরে জোরালো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বুঝে গিয়েছিল, তালেবানের হাতে ক্ষমতা দিয়ে যেতে হবে।
ইতিহাসের পাতা থেকে
কেউ আফগানিস্তানে ঢুকতে চাইলে সেটা বেশ সহজ। কিন্তু যখন বেরিয়ে আসতে চাইবেন তখন খুব কঠিন হয়ে যাবে। এমন কথা বলেছিলেন বিশ্ববিজয়ী গ্রিক বীর আলেকজান্ডার। কথাটা তিনি বলেছিলেন, যারা গায়ের জোরে আফগানদের পদানত করতে চান তাদের উদ্দেশে। আলেকজান্ডার কথাটি বলেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০ অব্দে। সেই সময়ে আফগানিস্তান ছিল পারস্য সাম্রাজ্যের অংশ। পারস্য সম্রাট তৃতীয় দারিয়ুসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আলেকজান্ডার আফগানিস্তানে ঢুকেছিলেন। তার হাতে দারিয়ুসের বিশাল বাহিনী পরাস্ত হয়েছিল। পরে ভারত আক্রমণ করে ব্যর্থ হন। আরো পরে পারস্যের পূর্বপ্রান্তের প্রদেশ আফগানিস্তানে একটি গ্রিক রাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তানের অংশ মিলিয়ে প্রতিষ্ঠিত সেই রাষ্ট্রের নাম ছিল ব্যাক্ট্রিয়া। আলেকজান্ডারের অন্যতম সেনাপতি যার নাম একটি বিস্ময়বাক্যের মধ্যে (সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!) এখনো মানুষের মুখে মুখে আছে সেই সেলুকাসের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্ট্রিয়ায় গ্রিকরা পরবর্তী তিনশ’ বছর শাসন জারি রাখে। তবে যত বড় বীরই দেশটি দখল করতে গেছেন তাদের প্রায় কেউই অক্ষত ফিরতে পারেননি। সেই আলেকজান্ডারের সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত অসংখ্য বহিঃশক্তি আফগানিস্তান দখল করেছে এবং বা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আলেকজান্ডার যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন তা কেউই মনে রাখেননি।
আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন বিদেশী শক্তি টিকে না থাকার পেছনের কারণ হলো ভেতরের শক্তির পাশাপাশি বাইরের শক্তির কারণে বহিরাগত কারো পক্ষে সেখানে দীর্ঘদিন দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। আফগানিস্তানের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে, একটা সময় যখন এখানের অধবাসীরা জরথুস্ট্রীয় ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল, তখনো কিন্তু বড় একটা শান্ত ছিল না। উপজাতিদের মধ্যে সব সময় কলহ-বিবাদ লেগেই থাকত। সেই কলহের মীমাংসা নিয়ে আবার সংঘর্ষ। কিন্তু একটি বিষয় পরিষ্কার আফগানরা বিদেশী শক্তির বা দখলদারি বা অন্যের কর্তৃত্ব মেনে নেয়নি।
একসময় আফগানিস্তানে আসে ইসলাম। ইসলামের মিশ্র অর্থনীতি ও অন্যান্য বিধিনিষেধে আফগানরা মানিয়ে নিলেও, বিশ্বরাজনীতির যে দখলদারি আগ্রাসন, তাকে কোনোভাবেই স্বীকার করেনি। দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, সেই টানেই বারবার বিদেশী শাসক এসেছেন, আফগানরা তাদের একত্রিত হয়ে তারিয়েছে। পুনরায় নিজেদের মধ্যে সাংঘর্ষিক জীবন অতিবাহিত করেছে।
ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখা যায়, ব্রিটিশরা ১৮৩৯-১৮৪২ সালে এখানে পর্যুদস্ত হয়েছে, এর আগে মুঘল শক্তি। আফগানিস্তান জয় করার প্রধান বাধা তিনটি- এক, আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থা- ইরান, মধ্য এশিয়া ও ভারতের মধ্যবর্তী অঞ্চল আফগানিস্তান বহুবার আক্রান্ত হয়েছে। এ দেশে বসবাসকারী উপজাতিরা বিদেশী শক্তির পক্ষে বিরাট প্রতিকূলতার সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয়ত, বারংবার আক্রমণের মুখে পড়ে এ এলাকার লোকজন আইনের শাসন কী তা জানে না, প্রতিটি গ্রাম এমনকি প্রতিটি বাড়িও যেন এক একটি দুর্গে রূপ নিয়েছে। মারণাস্ত্রের ব্যবহার তাই এদের কাছে স্বাভাবিক। তৃতীয়ত, আফগাননিস্তানের যে চেহারা, তাতে উপজাতিদের এক ধরনের স্বাতন্ত্র্য রয়েছে, যা বিদেশী শক্তির বিজয় ও শাসনকে দুরূহ করে তোলে প্রতিনিয়ত। আফগানিস্তানের চারপাশের পর্বতগুলো খুবই উঁচু, যার মধ্যে রয়েছে হিন্দুকুশ, পূর্ব দিকে পামির, এ ছাড়া রয়েছে কারাকোরাম, তিয়েনমান, কুনলুন এবং হিমালয়। প্রাকৃতিক এই রক্ষাকবচও আফগানদের চরিত্র বদলে দিয়েছে।
ইতিহাসে দেখা গেছে, শেষ পর্যন্ত আফগানরা হারে না। ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে দেশটি ছিল পারস্যের উপনিবেশ। তখন প্রধান ধর্ম ছিল জরথুস্ট্রবাদ। কিন্তু সেই উপনিবেশ বেশি দিন টেকেনি। যেমন টেকেনি আলেকজান্ডারের রাজত্ব ও মৌর্য সাম্রাজ্যের মেয়াদ। এর বহু পরে আসে আরবরা। সেটা অষ্টম শতক। আফগানিস্তান তখন ছোট ছোট রাজ্য হলেও খুব দুর্গম। আরবরা গান্ধারের জুনবিলদের জয় করতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়, এটি ছিল তাদের বিজয়ের প্রথম বড় বাধা। জুনবিল উপজাতিদের বিরুদ্ধে বিশ হাজার সৈন্য পাঠানো হলেও ফিরে আসে মাত্র পাঁচ হাজার সৈনিক। আফগানিস্তানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে সময় লাগে প্রায় দুশো বছর। পারস্যের অধিবাসী ইয়াকুব ইবন আল লাইস অবশেষে কাবুল জয় করেন। ওই সহস্রাব্দের শেষে গজনির সুলতান মাহমুদের আগে পর্যন্ত হিন্দু শাহী সাম্রাজ্য কাবুল শাসন করেছে। এরপর মোঙ্গলরা বামিয়ান উপত্যকায় প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে, চেঙ্গিস খাঁর পৌত্র নৃশংসভাবে খুন হন। সেটা ত্রয়োদশ শতক। সেই ক্রোধে মোঙ্গলরা বামিয়ানের মূল বাসিন্দাদের নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে। এখনকার যে হাজার সম্প্রদায় সেখানে বাস করে, তাদের বেশির ভাগ মঙ্গোল রক্তের উত্তরসূরি। মোঙ্গল সাম্রাজ্য দুর্বল হলে আফগানিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
এরপর আসেন বাবর। ভারত বিজয়ের আগে বাবর আফগানিস্তান শাসন করেন দু’দশক। ১৭৩৮ সাল পর্যন্ত হিন্দুকুশের বেশির ভাগ অঞ্চল মুঘল নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে মুঘল শাসনও ছিল সব সময় টলমল। তারপর আসেন নাদির শাহ, এর এক দশক পরে আহমদ শাহ দুররানি। নাদির শাহর মৃত্যুর পর আহমদ শাহ দুররানি আধুনিক আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। মুঘলদের আফগানিস্তান গজনি থেকে বামিয়ান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর পর পারস্যের সাফাভিদ সাম্রাজ্য আফগানিস্তান আক্রমণ করে। যুদ্ধরাজ আফগানদের সাথে সাফাভিদেরও বিস্তর লড়াই করতে হয়েছে।
সাফাভিরা দেশটিতে ইসলামের শিয়া ধারার পথ প্রশস্ত করে। এক্ষেত্রে পশতুনরা ছিল অগ্রগামী। আফগান বিদ্রোহের ফলে শেষমেশ সাফাভি সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং যুদ্ধবাজ নাদির শাহর উত্থান ঘটে, তার পর আহমদ শাহ দুররানি। তার পর ব্রিটিশ ও রুশরা বুঝেছিল, আফগানিস্তাকে যুদ্ধে পরাজিত করা গেলেও সেখানে শাসন করা অসম্ভব। আফগান উপজাতিদের লড়াই, তাদের দুর্গ, গেরিলাশক্তি প্রভৃতি বিদেশী শক্তিকে পর্যদুস্ত করার পক্ষে যথেষ্ট ছিল এবং আছে। আফগানরা সারা জীবন যুদ্ধ করতে পারে কিন্তু বিদেশীদের পক্ষে কার্যত তা অসম্ভব। এখানকার স্থানীয় শক্তিই শেষ বিচারে জললাভ করে, সেটি ভালো না খারাপ সে প্রশ্ন অবান্তর। এর মানে যদি হয় আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতায় তালেবানকে মেনে নেয়া, তবে আফগানদের বড় অংশ ঠিক তাই-ই চায়। কারণ তারা জানে এর বিকল্প হচ্ছে এক অনন্ত যুদ্ধ।
এর সঙ্গে ইসলামকে গুলিয়ে ফেলা বা ইসলামবিদ্বেষ প্রচার একেবারেই ভিত্তিহীন। ফলে উগ্রবাদের উত্থানে আফগানিস্তানের এমন অবস্থা, এ সরলীকরণ আদৌ ধোপে টেকে না। আফগানরা এমন এক জাতি, যাদের যুগ যুগ ধরে সারা জীবন আক্রমণের সাথে বাস করতে হয়েছে। হাল আমলে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মানচিত্রে সব চেয়ে শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে হিরোশিমা নাগাসাকি থেকে লিবিয়, ইরাকসহ আরো একাধিক দেশের মতো আফগানিস্তানকেও ধ্বংস করে গেছে। আফগানিস্তানকে অবশেষে তালেবানের কাছে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। বলা যায় বাধ্য হয়েছে। এর আগে রাশিয়া যখন দেশটিতে দখলদারি কায়েম করে, তখন তালেবানকেই মার্কিনিরা সহযোগিতা করে।
ভূরাজনীতিতে মেরুকরণ
আফগানিস্তানে তালেবানের ফিরে আসায় ভূরাজনীতিতে নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা পারে। এর প্রভাব আগামী দিনে দৃশ্যমান হবে। এমনিতেই প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগর ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিযোগিতা এবং করোনা-উত্তর সার বিশ্ব টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। কাবুলের পটপরিবর্তন এতে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে। ভৌগোলিক ও ভূরাজনৈতিক তিনটি কেন্দ্রের নিরিখে বিষয়টি বিশ্লেষণের দাবি রাখে। প্রথমটি আফগানকেন্দ্রিক মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া। যেখানে আছে ভারত ও পাকিস্তান। অন্যটি মিয়ানমার, চীন, ভারত ও বাংলাদেশ মিলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। শেষটি বঙ্গোপসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর ঘিরে। প্রথম কেন্দ্রে যদি ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা বাড়ে এবং আফগানিস্তানে তালেবান স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বেড়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। আবার ইয়েমেন, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানে সঙ্ঘাত বাড়লে স্বভাবতই ওই প্রভাব পড়বে। সঙ্ঘাত তৈরি হলে রেশ বাইরে গিয়ে পড়বে। সবশেষে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরকে যে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে, এর প্রমাণ যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে ত্রিদেশীয় নিরাপত্তা জোট। আফগানিস্তান থেকে সরার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র জোটটি করেছে। কোয়াড কিংবা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে যেভাবে চীনকে প্রতিরোধের কথা বলেনি, ত্রিদেশীয় জোটে সরাসরি তা বলেছে। এখন চীন কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাই অবলোকন করার বিষয়।
আফগানিস্তানের পরিবর্তনে তুরস্কের কথা বলতে হয়। মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের বিকল্প যে তুরস্ক হতে চায়, তা দিবালোকের মতো সত্য। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তইয়ব এরদোয়ান নিপীড়িত মুসলিম প্রসঙ্গে কাশ্মীর, উইঘুর ও রোহিঙ্গাসহ সবার কথা বলেছেন। আফগানিস্তানে সৈন্য মোতায়েন করতে চাইলে সে পারে। তবে অর্থনৈতিক সহায়তায় তুরস্ক পিছিয়ে। আবার তুরস্ক ও চীন যদি এক হয়, সেখানে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারে। তালেবানের কাছে তুরস্ক বেশি গ্রহণযোগ্য। তবে আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলে ভারত উদ্বিগ্ন। তালেবানের প্রত্যাবর্তন ভারতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।
নতুনরূপে চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব
আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহার হওয়ার সাথে সাথে সেখানে তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকার বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাতে নিজেকে না জড়িয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠন ও জাতিগঠনে মনোনিবেশ করবে বলে তালেবান নীতি প্রণেতাদের বক্তব্যে এখনো পর্যন্ত তাই মনে হচ্ছে। তবে তালেবানের দুই দশকের যুদ্ধ যেহেতু আমেরিকা ও ন্যাটো বিরোধী ছিল সেহেতু কৌশলগতভাবে চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও ইরানের অধিকতর নিকটবর্তী হতে পারে। অবশ্য মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি কাতারের মধ্যস্থতা এবং একটি চুক্তিতে সম্পন্ন হওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলোর তালেবান সরকারের সাথে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণে আগ্রহী হতে পারে।
বিশ্বরাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেব আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সরে এসেছে। নতুন ডকট্রিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ ইসলাম নয় বলেই তাদের অনুমান। মার্কিন নীতি বিশ্লেষক ও উপদেষ্টাদের বক্তব্যেও সেই ইঙ্গিতই মিলছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মার্কিন কৌশলগত বিন্যাসে চীন ও রাশিয়াই হচ্ছে ওয়াশিটনের প্রধান প্রতিপক্ষ; যদিও প্রতিপক্ষ হিসাবে সক্ষমতা বিচারে মস্কোর বৈশ্বিক নেতৃত্বে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জের সামর্থ্য যতটা, এর চেয়ে চীনের অর্থনৈতিক ও অন্য সব ক্ষমতা উল্লেখ করার মতো। আফগানিস্তানে দীর্ঘ সময় কাজ করা সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী, ইয়েলের জ্যাকসন ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ফেলো বরি স্টুয়ার্ট বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অগ্রাধিকার এখন আর আফগানিস্তানের মতো জায়গায় নয়, বরং চীনের সম্প্রসারণের মোকাবেলায় নিবেদিত। চীন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র যে, প্রতিপক্ষ করতে যাচ্ছে সেটি জানে। যুক্তরাষ্ট্র যা সবচেয়ে বেশি ভয় পায় তা হলো চীনের ধারাবাহিক বিকাশের ক্ষমতা। চীনের অর্থনৈতিক শক্তি ধীরে ধীরে মার্কিন সমান্তরালে চলে যাচ্ছে; এমনকি অতিক্রম করতে পারে। সেই সাথে চীনের সামরিক শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে ক্রমবর্ধমান। বেইজিংয়ের এ গতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আধিপত্য খর্ব করার প্রবণতা তৈরি করেছে।
ভারতের শিরপীড়া
অবিশ্বাস্য দ্রুততায় কাবুলে তালেবানের বিজয়ে হতচকিত হয়ে পড়েছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চাদপসরণে আফগানিস্তানে প্রভাবকের আসনে বসতে যাচ্ছে চীন ও পাকিস্তান। এই দু’রাষ্ট্র ছাড়াও কাবুলের তালেবান শাসকশ্রেণীর নির্ভরতা বেড়েছে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের ওপর। ভারত অখ-তা ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থে আফগান পরিস্থিতির ওপর সর্বদা তীক্ষè নজর রাখছে । পাকিস্তান ও চীনের সাথে তালেবানের সুসম্পর্ককেও ভারত বিবেচনায় রাখে। ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে আফগানিস্তান নিয়ে ভারত উৎসাহী হয়ে ওঠে। দিল্লির প্রত্যাশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখবে। তাই যুক্তরাষ্ট্রসমর্থিত হামিদ কারজাই ও আশরাফ গনি সরকারকে দিল্লিø সামরিক, অর্থনৈতিক, গোয়েন্দা তথ্য ও রসদ সরবরাহ করে গত ২০ বছর। কাবুলে পূর্ণ দূতাবাস ছাড়াও কান্দাহার, হেরাত, জালালাবাদ ও মাজার-ই-শরিফে ভারতের কনস্যুলেট স্থাপন করে কার্যক্রম বাড়ায়। মর্কিন বাহিনীর দোসর হওয়ায় আফগানিস্তানে ভারতের সরব উপস্থিতি তালেবান পছন্দ করেনি। এছাড়া পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে কৌশলগত কারণে আফগানিস্তানে প্রভাব বাড়িয়েছিল ভারত। ২০ বছরে নয়াদিল্লি-কাবুলের যে কূটনৈতিক-বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা এখন ধাক্কা খেয়েছে। ভারতের সাবেক স্পেশাল ফোর্স অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পিসি কাটোচ মনে করেন, আফগানিস্তানে স্থিতাবস্থা আনতে সক্ষম হবে যুক্তরাষ্ট্র, এই ভেবে ভারত বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু তালেবান ফের ক্ষমতায় আসায় ভারতের তিন বিলিয়ন ডলার রীতিমতো ঝুঁকিতে পড়েছে। ভারতের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ ও আশঙ্কা, তালেবানের সহায়তায় ভারতীয় জম্মু-কাশ্মিরের আন্দোলনকারীরা যদি অধিকার আদায়ের সংগ্রাম জোরদার করে, তাহলে কাশ্মির সঙ্কট পুরো ভারতকে অস্থির করে তুলতে পারে। সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক জিতেন্দ্রনাথ মিশ্র বিবিসিকে বলেন, দিল্লিøর জন্য সহজ কোনো বিকল্প নেই। যা আছে তা হলো খারাপ বিকল্প বা আরো খারাপ বিকল্প। ত্রিপক্ষীয় ভূরাজনৈতিক স্বার্থে পাকিস্তান, চীন ও আফগানিস্তান এক বিন্দুতে এলে ভারতকে মাশুল গুনতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব
আফগানিস্তান-উত্তর বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারে আমেরিকা ও এর মিত্রদের সাথে চীন-রাশিয়া বলয়ের যে লড়াইয়ের আলামত স্পষ্ট হচ্ছে তাতে সবচেয়ে বড় ঝাঁকুনিতে পড়তে পারে এশিয়া, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া। এই লড়াই শেষ পর্যন্ত কী রূপে হাজির হয়; তাই দেখার বিষয়। তবে অনুমেয়, নতুন বৈশ্বিক আধিপত্য বিস্তারে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের নামে মুসলিম জাহানে অস্থিরতা ও ধ্বংস করার কৌশলের সম্ভবত পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে। বরং ভারসাম্য স্থাপনকারী শক্তি হিসাবে দু’পক্ষের কাছে কদর বাড়বে মুসলিম দেশগুলোর। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে একটি বড় পরিবর্তন আসন্ন বলেই মনে হয়।
দারিদ্র্য জয়ে প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদ
ক্রমাগত ৩০ বছর যুদ্ধ, সঙ্ঘাত, অস্থিতা ও দুর্নীতির কারণে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙে পড়েছে। খাদ্যসঙ্কটে এক কোটি ৪০ লাখ আফগান নাগরিক। তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো খরা দেখা দিয়েছে, এতে ৪০ শতাংশের বেশি ফসল নষ্ট হয়েছে, ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট প্রকট, বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ আফগান। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতে, ৩৪টি প্রদেশের সবগুলোতে ৯৩ শতাংশ পরিবারের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য নেই। গড়পড়তা আফগানদের দৈনিক উপার্জন দুই ডলারের বেশি নয়। পুষ্টিহীনতায় ভুগছে পাঁচ বছরের নিচের অর্ধেক শিশু।
তালেবানপূর্ব বিদেশী তাবেদার সরকারগুলো এমন মানবিক বিপর্যয়ের জন্য মূলত দায়ী। বিশেষ করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও বহুজাতিক বাহিনী। সাম্রাজ্যবাদী ও আগ্রাসী শক্তি আফগানিস্তানকে স্বনির্ভর হতে দেয়নি। বিদেশী সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল করা হয়েছে। দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন দাউদ খান, নুর মুহাম্মদ তারাকি, হাফিজুল্লাহ আমিন, বাবরাক কামাল, নাজিবুল্লাহ, হামিদ কারজাই ও আশরাফ গনি। মানবিক বিপর্যয় প্রতিরোধে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের আহ্বানে সম্প্রতি আফগানিস্তানের জন্য সহযোগিতা কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এ অর্থ জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে ব্যয় করা হবে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান পুনর্গঠনে অর্থনৈতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং। আফগানিস্তানকে সহায়তায় পাকিস্তান ইরান তাজিকিস্তান উজবেকিস্তান এবং তুর্কমিনিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এসব দেশ আফগানিস্তানের প্রতিবেশী এবং চীনের মিত্র হিসেবে পরিচিত। চীনের অর্থায়নে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে নির্মীয়মাণ এক হাজার কোটি ডলারের গোয়াদার বন্দর, ভূ-রাজনীতি এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের দিক বিবেচনায় চীনের এখানে কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। ইউরেশিয়া অঞ্চল হলো চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের প্রধান শরিক। এ ছাড়া ওয়াখান করিডোর হয়ে স্থলপথে আফগানিস্তানের ওপর দিয়ে ইরান যাওয়ার পরিকল্পনাও আছে চীনের।
তালেবান যদি ১৪টি জাতিগোষ্ঠী সমন্বয়ে দেশ পরিচালনায় সফলতা দেখাতে পারে, রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা, সুশাসন ও জননিরাপত্তা ফিরে আসে তবে এক ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের উত্তোলনযোগ্য যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে এগুলোর প্রযুক্তিভিত্তিক সদ্ব্যবহারের পথ খুলে যাবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসতে আগ্রহী হবে। আফগানিস্তান অর্থনৈতিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মিলনস্থল পার্বত্য এ দেশে খনিজ সম্পদ আফগান অর্থনীতির মেরুদণ্ডে পরিণত হতে পারে আগামী দিনগুলোতে। তবে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী ছাড়া কাবুলের একারপক্ষে খনিজসম্পদ আহরণ করা সম্ভব নয়।
শেষ কথা
সম্পূর্ণ নিজস্ব শক্তি-সামর্থ্য, সম্মুখযুদ্ধে দখলদারদের পরাস্ত করে আফগানিস্তানে বিজয়ী হয়েছে তালেবান। এ বিজয় নিঃসন্দেহে গর্বের। তবে তালেবানের বিজয়ে সাধারণ একটি উদ্বেগ হলো আবার ২০ বছর আগের মতো গোঁড়া অবস্থানে ফিরে যায় কি না দেশটি। কিন্তু তালেবান দৃশ্যত আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি মেনে চলতে প্রস্তুত বলেই মনে হয়। এর প্রতিফলন ঘটেছে কাবুলে উপস্থিতির দিনেই তালেবানের উপপ্রধান মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের ঘোষণায়। একটি কথা স্বীকার করতেই হয়, তালেবান বিশ্বজুড়ে আদর্শবাদীদের দেখাচ্ছে, ধৈর্য ধরো, কৌশলী হও, বাস্তববাদী হও। তবেই চূড়ান্ত বিজয় আসবে। যেহেতু তালেবান রাজনৈতিক কোনো আন্দোলন নয়, আদর্শিক লড়াই। তাই এর একধরনের বৈশ্বিক আবেদন আছে। তবে আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া তালেবানের ক্ষমতায় টিকে থাকা খুব সহজ হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে আফগানিস্তানের কী হবে? হতে পারে ওয়াখান করিডোর দিয়ে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে চীন ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির সুফলের বিষয়টি বেইজিং বিবেচনায় নেবে। আবার তালেবান যেভাবে বলছে, শরিয়াহর মধ্যে থেকে জাতিরাষ্ট্র গঠন হতে পারে। মার্কিন বিখ্যাত পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষা মতে, আফগানিস্তানের ৯৯ শতাংশ মানুষ শরিয়াহ আইন চায়। কোনো দেশের মানুষ নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছায় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবে, এটাই আন্তর্জাতিক বিশ্বের স্বীকৃত রীতি। আফগানরা সেই অধিকারবলে ইসলামকে নিজেদের আদর্শ হিসেবে নিলে কারো কিছু বলার নেই। তবে এতে পুরনো জায়গায় গিয়ে ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়তে পারে। সঙ্গত কারণে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা নিয়ে আপাতত কিছু বলা মুশকিল।