আফগানিস্তানে নতুন চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব

আমির হামযা | Nov 10, 2021 03:03 pm
আফগানিস্তানে নতুন চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব

আফগানিস্তানে নতুন চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব - ছবি সংগৃহীত

 

আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহার হওয়ার সাথে সাথে সেখানে তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকার বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাতে নিজেকে না জড়িয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠন ও জাতিগঠনে মনোনিবেশ করবে বলে তালেবান নীতি প্রণেতাদের বক্তব্যে এখনো পর্যন্ত তাই মনে হচ্ছে। তবে তালেবানের দুই দশকের যুদ্ধ যেহেতু আমেরিকা ও ন্যাটো বিরোধী ছিল সেহেতু কৌশলগতভাবে চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও ইরানের অধিকতর নিকটবর্তী হতে পারে। অবশ্য মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি কাতারের মধ্যস্থতা এবং একটি চুক্তিতে সম্পন্ন হওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলোর তালেবান সরকারের সাথে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণে আগ্রহী হতে পারে।

বিশ্বরাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেব আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সরে এসেছে। নতুন ডকট্রিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ ইসলাম নয় বলেই তাদের অনুমান। মার্কিন নীতি বিশ্লেষক ও উপদেষ্টাদের বক্তব্যেও সেই ইঙ্গিতই মিলছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মার্কিন কৌশলগত বিন্যাসে চীন ও রাশিয়াই হচ্ছে ওয়াশিটনের প্রধান প্রতিপক্ষ; যদিও প্রতিপক্ষ হিসাবে সক্ষমতা বিচারে মস্কোর বৈশ্বিক নেতৃত্বে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জের সামর্থ্য যতটা, এর চেয়ে চীনের অর্থনৈতিক ও অন্য সব ক্ষমতা উল্লেখ করার মতো। আফগানিস্তানে দীর্ঘ সময় কাজ করা সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী, ইয়েলের জ্যাকসন ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ফেলো বরি স্টুয়ার্ট বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অগ্রাধিকার এখন আর আফগানিস্তানের মতো জায়গায় নয়, বরং চীনের সম্প্রসারণের মোকাবেলায় নিবেদিত। চীন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র যে, প্রতিপক্ষ করতে যাচ্ছে সেটি জানে। যুক্তরাষ্ট্র যা সবচেয়ে বেশি ভয় পায় তা হলো চীনের ধারাবাহিক বিকাশের ক্ষমতা। চীনের অর্থনৈতিক শক্তি ধীরে ধীরে মার্কিন সমান্তরালে চলে যাচ্ছে; এমনকি অতিক্রম করতে পারে। সেই সাথে চীনের সামরিক শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে ক্রমবর্ধমান। বেইজিংয়ের এ গতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আধিপত্য খর্ব করার প্রবণতা তৈরি করেছে।

ভারতের শিরপীড়া

অবিশ্বাস্য দ্রুততায় কাবুলে তালেবানের বিজয়ে হতচকিত হয়ে পড়েছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চাদপসরণে আফগানিস্তানে প্রভাবকের আসনে বসতে যাচ্ছে চীন ও পাকিস্তান। এই দু’রাষ্ট্র ছাড়াও কাবুলের তালেবান শাসকশ্রেণীর নির্ভরতা বেড়েছে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের ওপর। ভারত অখ-তা ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থে আফগান পরিস্থিতির ওপর সর্বদা তীক্ষè নজর রাখছে । পাকিস্তান ও চীনের সাথে তালেবানের সুসম্পর্ককেও ভারত বিবেচনায় রাখে। ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে আফগানিস্তান নিয়ে ভারত উৎসাহী হয়ে ওঠে। দিল্লির প্রত্যাশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখবে। তাই যুক্তরাষ্ট্রসমর্থিত হামিদ কারজাই ও আশরাফ গনি সরকারকে দিল্লিø সামরিক, অর্থনৈতিক, গোয়েন্দা তথ্য ও রসদ সরবরাহ করে গত ২০ বছর। কাবুলে পূর্ণ দূতাবাস ছাড়াও কান্দাহার, হেরাত, জালালাবাদ ও মাজার-ই-শরিফে ভারতের কনস্যুলেট স্থাপন করে কার্যক্রম বাড়ায়। মর্কিন বাহিনীর দোসর হওয়ায় আফগানিস্তানে ভারতের সরব উপস্থিতি তালেবান পছন্দ করেনি। এছাড়া পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে কৌশলগত কারণে আফগানিস্তানে প্রভাব বাড়িয়েছিল ভারত। ২০ বছরে নয়াদিল্লি-কাবুলের যে কূটনৈতিক-বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা এখন ধাক্কা খেয়েছে। ভারতের সাবেক স্পেশাল ফোর্স অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পিসি কাটোচ মনে করেন, আফগানিস্তানে স্থিতাবস্থা আনতে সক্ষম হবে যুক্তরাষ্ট্র, এই ভেবে ভারত বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু তালেবান ফের ক্ষমতায় আসায় ভারতের তিন বিলিয়ন ডলার রীতিমতো ঝুঁকিতে পড়েছে। ভারতের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ ও আশঙ্কা, তালেবানের সহায়তায় ভারতীয় জম্মু-কাশ্মিরের আন্দোলনকারীরা যদি অধিকার আদায়ের সংগ্রাম জোরদার করে, তাহলে কাশ্মির সঙ্কট পুরো ভারতকে অস্থির করে তুলতে পারে। সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক জিতেন্দ্রনাথ মিশ্র বিবিসিকে বলেন, দিল্লিøর জন্য সহজ কোনো বিকল্প নেই। যা আছে তা হলো খারাপ বিকল্প বা আরো খারাপ বিকল্প। ত্রিপক্ষীয় ভূরাজনৈতিক স্বার্থে পাকিস্তান, চীন ও আফগানিস্তান এক বিন্দুতে এলে ভারতকে মাশুল গুনতে হবে।

দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব

আফগানিস্তান-উত্তর বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারে আমেরিকা ও এর মিত্রদের সাথে চীন-রাশিয়া বলয়ের যে লড়াইয়ের আলামত স্পষ্ট হচ্ছে তাতে সবচেয়ে বড় ঝাঁকুনিতে পড়তে পারে এশিয়া, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া। এই লড়াই শেষ পর্যন্ত কী রূপে হাজির হয়; তাই দেখার বিষয়। তবে অনুমেয়, নতুন বৈশ্বিক আধিপত্য বিস্তারে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের নামে মুসলিম জাহানে অস্থিরতা ও ধ্বংস করার কৌশলের সম্ভবত পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে। বরং ভারসাম্য স্থাপনকারী শক্তি হিসাবে দু’পক্ষের কাছে কদর বাড়বে মুসলিম দেশগুলোর। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে একটি বড় পরিবর্তন আসন্ন বলেই মনে হয়।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us