আফ্রিকার হর্নে গৃহযুদ্ধ : নেপথ্যে কারা
আফ্রিকার হর্নে গৃহযুদ্ধ : নেপথ্যে কারা - ছবি সংগৃহীত
সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইথিওপিয়ার বৃহত্তম রাজ্য ওমরোর অধিবাসী আবি আহমদ নিজেই এক সময় টিপিএলএফ-প্রধান সরকারের অংশ ছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি রাজনৈতিক সংস্কারের নামে ইথিওপিয়ায় প্রভাবশালী এই গোষ্ঠীকে নিরাপত্তা বাহিনীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বিদায় করার কাজ শুরু করেন। এটি টাইগ্রিয়ান নেতৃত্বকে ক্ষুব্ধ করে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে, টাইগ্রিয়ানরা আবি আহমেদের আঞ্চলিক সংসদীয় নির্বাচনের বিরোধিতা করে। এর কয়েক সপ্তাহ পরে, ইথিওপিয়ার আইন প্রণেতারা টাইগ্রে অঞ্চলের জন্য অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেন। এর ফলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এর জের ধরে গত বছর নভেম্বরে টিপিএলএফ বাহিনী টাইগ্রেতে ফেডারেল সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। গোষ্ঠীটি বলে যে, এই আক্রমণের কারণ হলো টাইগ্রেতে হামলার প্রস্তুতি নিতে কয়েক দিন আগে ফেডারেল বাহিনীর প্রতিবেশী অঞ্চলে অবতরণ। সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণের কয়েক ঘণ্টা পরে প্রধানমন্ত্রী আবি টাইগ্রিয়ান নেতৃত্ব এবং এর নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামরিক আক্রমণের নির্দেশ দেন।
আবি টাইগ্রের দক্ষিণে আমহারা থেকে মিলিশিয়া যোদ্ধাদের নিয়ে তার বাহিনী শক্তিশালী করেন। তারা বেসামরিক লোকদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে পশ্চিম টাইগ্রেতে প্রবেশ করে। তারপর ইথিওপিয়ার এক সময়ের বৈরী প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সৈন্যরা আবির বাহিনীর সাথে লড়াই করার জন্য উত্তর থেকে টাইগ্রেতে প্রবেশ করে। ফেডারেল বাহিনী এবং তাদের মিত্ররা দ্রুত টাইগ্রের আঞ্চলিক রাজধানী মেকেলে এবং অন্যান্য শহরের নিয়ন্ত্রণ দখল করে নেয়। কিন্তু টিপিএলএফ ও এর সশস্ত্র সমর্থকরা গ্রামীণ এবং পার্বত্য এলাকায় পালিয়ে গিয়ে এক পর্যায়ে পাল্টা আঘাত হানে। জুন মাসে ইথিওপিয়ান সামরিক বাহিনী বড় পরাজয়ের সম্মুখীন হয়। তখন টাইগ্রে থেকে ফেডারেল বাহিনী প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় এবং এর কয়েক হাজার সৈন্য বন্দী হয়।
টাইগ্রিয়ানদের অগ্রযাত্রার সময় অন্য একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ওরোমো লিবারেশন আর্মি তাদের বাহিনীতে যোগ দিলে তাদের সম্মিলিত শক্তির সামনে ইথিওপিয়ান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি ইউনিট পিছু হটে।
চলমান এই গৃহযুদ্ধে টাইগ্রে ডিফেন্স ফোর্সেস (টিডিএফ), ইথিওপিয়ান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (ইএনডিএফ), ইথিওপিয়ান ফেডারেল পুলিশ, আঞ্চলিক পুলিশ এবং প্রতিবেশী আমহারা এবং আফার অঞ্চলের জেন্ডারমেরি বাহিনীর সাথে ইরিত্রিয়ান ডিফেন্স ফোর্সেস (ইডিএফ) এর সাথে লড়াই হচ্ছে।
২০১৯ সালে, জাতিগত ফেডারেলিজম এবং জাতীয়তাবাদী রাজনীতি থেকে দেশকে দূরে রাখতে, প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ ইথিওপিয়ান পিপলস রেভল্যুশনারি ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইপিআরডিএফ) জোটের জাতিগত ও অঞ্চলভিত্তিক দলসহ কয়েকটি বিরোধী দলকে তার নতুন প্রসপারিটি পার্টিতে একীভূত করেন। টাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (টিপিএলএফ) নতুন দলে যোগ দিতে অস্বীকার করে। টিপিএলএফ উল্লেখ করে যে চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২৯ আগস্ট ২০২০-এর জন্য নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচনগুলো ২০২১-এ স্থগিত করে আবি আহমেদ একজন অবৈধ শাসক হয়ে পড়েন। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ফেডারেল নির্বাচন বিরোধিরা বয়কট করে। এর মাধ্যমে নবায়ন করা আমি সরকারের নির্বাচনকে টিপিএলএফ জোট অবৈধ ঘোষণা করে।
এর আগে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর টাইগ্রে বাহিনী এবং ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া-আমহারার মধ্যে লড়াই শুরু হয়। ফেডারেল মিত্র বাহিনী ২৮ নভেম্বর টাইগ্রে অঞ্চলের রাজধানী মেকেলে দখল করার পরে প্রধানমন্ত্রী আবি টাইগ্রে অপারেশন ‘সমাপ্ত’ ঘোষণা করেন। টাইগ্রে সরকার নভেম্বরের শেষের দিকে বলে যে ‘হানাদারদের’ বের না হওয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। ২৮ জুন ২০২১ তারিখে টাইগ্রে প্রতিরক্ষা বাহিনী মেকেলে পুনরুদ্ধার করে এবং জুলাই মাসে আমহারা এবং আফার অঞ্চলে অগ্রসর হয়। ২০২১ সালের নভেম্বরের শুরুতে, টিডিএফ ওরোমো লিবারেশন আর্মি (ওএলএ) এর সাথে একত্রে টাইগ্রে অঞ্চল থেকে আদ্দিস আবাবার দিকে দক্ষিণে হাইওয়েতে বেশ কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। টিপিএলএফ এখন আদ্দিস আবাবার দিকে এগুবে। সাতটি ছোট বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে ঐক্যবদ্ধ টিপিএলএফ ও ওএলএ জোট ঘোষণা করে যে তাদের লক্ষ্য হলো, শক্তি প্রয়োগে বা আলোচনার মাধ্যমে আবির সরকারের পতন ঘটানো এবং তারপর একটি ক্রান্তিকালীন কর্তৃপক্ষ গঠন করা।