নারীরূপে জন্মগ্রহণ করাটাই কি মহা অপরাধ?
নারীরূপে জন্মগ্রহণ করাটাই কি মহা অপরাধ? - ছবি সংগৃহীত
এক.
মুসলিম নারীদের রেস্টুরেন্টে না খাওয়া কোনো তাকওয়ার পরিচয় নয়, কিংবা রেস্টুরেন্টে খেলেই ঈমান চলে যাবে- বিষয়টি এমন নয়। কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত আচরণ মুসলিম নারীর জীবযাপনের মানদণ্ড নয়। কোরআন সুন্নাহয় বর্ণিত উসূলের আলোকে তাদের জীবন পরিচালিত হবে। সেখানে কারো ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিচ্ছবি জীবনের নির্দেশিকা হিসেবে গৃহীত হওয়া জরুরি নয়।
দুই.
মুমিন জীবনের সৌন্দর্যের গোপন রহস্য হলো তাকওয়া। আমরা যদি প্রকৃত তাকওয়ার রূপ দেখতে চাই তাহলে নারী সাহাবিদের জীবনের দিকে তাকাতে হবে। তাদের জীবনের দর্পণে আমরা আমাদের জীবনের রূপরেখা খুঁজে পেতে পারি। মুমিনের জীবন সৃজনশীল জীবন। তাদের নারীরা আবদ্ধ হয়ে বসে থাকবে কিংবা জীবন্ত ট্যান্টের মতো জীবনযাপন করবে বিষয়টি মোটেও নয়। বরং নারীরা আর্থ সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ, শিক্ষা বিস্তার, পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলন, নিরাপদ খাদ্য ও চিকিৎসা আন্দোলন, মানবধিকার প্রতিষ্ঠা, রাজনীতি প্রভৃতিসহ কল্যাণমূলক যেকোনো কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
তিন.
কোরআন মাজিদে নারী পুরুষ উভয়কে সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। কাজেই নারীরাও দুনিয়ার সকল কাজে অংশগ্রহণ করবে এটাই স্বাভাবিক। নারী সাহাবিরা নার্স, চিকিৎসক, শিক্ষিকা, সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, বাজার পরিদর্শক প্রভৃতিরূপে দায়িত্ব পালন করেছেন। নারী সাহাবিরা একদিকে মেষ চড়াতেন অপরদিকে যুদ্ধক্ষেত্রেও অংশগ্রহণ করেছেন। তৎকালীন রাজনীতিতে রয়েছে তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। তাফসির, হাদিস, ফিকহ, আইন, সাহিত্যসহ জ্ঞানের অগণিত শাখায় নারী সাহাবিদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পত্রে লেখা রয়েছে।
চার.
হযরত আয়েশা রা. যদি পুরুষদের কাছে জ্ঞানের জানালা উন্মুক্ত করে না দিতেন তাহলে নবিজি সা.-এর জীবনের বিশাল এক পরিধি আমাদের অগোচরে থেকে যেত। কিন্তু আমরা সেই আয়েশা রা.-এর জীবন থেক শিক্ষা নিয়ে মেয়েদেরকে আজ সেভাবে গড়ে তুলতে ইচ্ছা প্রকাশ করি না । আজকাল আমরা উসূল থেকে দূরে সরে গিয়ে আবেগের মানদণ্ডে ইসলামকে অনুসরণ করছি ফলে আমরা পিছিয়ে গিয়েছি, পিছিয়েছে আমাদের নারী সমাজ। আজকের যুগে আয়েশার মতো নারী তৈরির পথ আমরা একেবারে রুদ্ধ করে দিয়েছি। যে নারী বিশ্বে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে আজ সেই সব নারীদেরকেই আমরা শিক্ষা থেকে মাহরুম করছি।
পাঁচ.
ইসলামপন্থীদের একটা অংশ আজো নারীদের উচ্চশিক্ষা-বিরোধী, আজো তারা নারীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে পড়তে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। তাদেরকে মেডিকেলে পড়তে দেয়া হয় না। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে দেয়া হয় না। অথচ তারা হাসপাতালে তাদের স্ত্রী কণ্যা ঝিদের চিকিৎসার জন্য নারী ডাক্তার খোঁজে, তারা তাদের মেয়েদের পড়ানোর জন্য নারী শিক্ষিকা খোঁজে। এটা কি স্ববিরোধী আচরণ নয়? আজকের যুগে নারীদের বিভিন্ন বিভাগে চাকরি করতে হবে। দায়িত্ব পালন করতে হবে। মহিলা সন্ত্রাসী, মহিলা মাদক কারবারি, শিশু পাচারকারণিনীসহ সকল ধরণের মহিলা অপরাধীদের গ্রেফতার করতে মহিলাদেরকেই প্রশাসনে নিয়োগ দিতে হবে। র্যাব, পুলিশসহ প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাতৃকালীন ছুটি নিশ্চিতসহ তাদেরকে এসব বিভাগে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।
ছয়.
বিশ্ববিদ্যালয়, রেস্টুরেন্ট, মার্কেটসহ সকল জায়গায় নারীদের বিচরণের অবকাশ দিতে হবে। তাদের অধিকার বাস্ততবায়নে কার্যকরী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নারীদের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল,কারিগরি প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে। তাদের জন্য মসজিদে নামাজের জায়গাসহ ও সকল জায়গায় তাদের নামাজের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিশু পরিচর্যার জন্য ভ্রাম্যমান নারীদের জন্য ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। স্বতন্ত্র ওয়াশরুম স্থাপন করতে হবে। বাজারে নারীদের কেনাকাটার জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। রেস্টুরেন্টে নারীর জন্য স্বতন্ত্র খাবার রুম নিশ্চিত করতে হবে। যাতে পথিক, সফরকারী ও ডিউটিরত নারীরা যেকোনো সময় নির্বিঘ্নে খেতে পারে। নারীদেরকে সকল জায়গায় যেতে হবে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নারীদেরও সকল ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর যদি তাদের সকল কিছু থেকে বিরত রাখতে চান, তাহলে একটা প্রশ্ন করতে চাই, নারীরূপে জন্মগ্রহণ করাটাই কি মহা অপরাধ?