বাঘ কেন আজ ডোরাকাটা বিড়াল?

আফফান উসামা | Nov 06, 2021 01:32 pm
বাঘ কেন আজ ডোরাকাটা বিড়াল?

বাঘ কেন আজ ডোরাকাটা বিড়াল? - ছবি সংগৃহীত

 

বাংলার ক্রিকেটে আমাবস্যার হানা, ঘোর আঁধারে হারিয়েছে দিশা। হারতে হারতে দেয়ালে পিঠ, বেড়েই চলেছে জয়ের অপেক্ষা। যে হার শুধু হার নয়, মিশে আছে লজ্জা লাঞ্ছনা আর নীরব কান্না। মিশে আছে একরাশ হতাশা, হচ্ছে না, হচ্ছে না, পারছি না। ১১০ ভাগ দিয়েও পারছি না। কিন্তু কেন? কি কারণে বাঘ আজ আগ্রাসন হারিয়ে পরিণত ডোরাকাটা বিড়ালে? আর তা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? তা নিয়েই কিছু এলোমেলো টুকিটাকি —

ভিনদেশীদের গল্প যখন লিখতে যাই, প্রায় সময়ই স্কুল ক্রিকেট নামক একটা অধ্যায় পাই। হয়তো কখনো তার ব্যক্তি কীর্তিতে, কখনো বা স্কুলের খ্যাতিতে। পাওয়া যায় রাজ্য দলের নামও। রাজ্য দলগুলো যেন ক্রিকেটারদের সুখে-দুঃখের বন্ধু। ভালো কিংবা কালো সর্বদাই রাজ্য দলগুলো দিয়ে যায় আলো। আবার এই রাজ্য দলগুলোর একাডেমি থেকে ক্রিকেটার বের হয় পদ্মার বুকে ইলিশের মতো করে, ঝাঁকে-ঝাঁকে। এমনকি ক্রিকেটারদের পরিচিতিও জয় রাজ্য দলের নামে।

বিপরীতে আমাদের ক্রিকেটে স্কুল কিংবা আন্তঃজেলা ক্রিকেটের ভূমিকা একেবারে নগন্য, গল্পগুলোতে তাদের চরিত্র উঠে আসে খুবই সামান্য। আন্তঃজেলা ক্রিকেটের কথা পত্রিকার ছোট কলামে হাতেগোনা কয়েক লাইনে দেখা গেলেও মানহীনতায় হারিয়েছে মূল্য। ছোট দেশে রাজ্য নেই, বিভাগ আছে; আছে বিভাগীয় ক্রিকেটও। কিন্তু ৯০০ কোটি টাকার এফডিআর থাকা সত্ত্বেও নেই তাদের নিজস্ব একটা একাডেমিও।

একটা নির্দিষ্ট, নিজস্ব একাডেমী না থাকার ফলাফল এখন বেশ ভালোই দেখাই যাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে পরিণতি কী হবে। শুধুই অনুর্ধ্ব ১৯ দিয়েই কি ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া যাবে? এক বিকেএসপিই কি পারবে লাল-সবুজের এই বিস্তৃত ভূমি থেকে খাঁটি রত্মের সন্ধান পেতে? শুধুই এইচপিতেই কি দলছুটরা সঠিক পথের দেখা পাবে? এইচপি আসলে কার জন্য বোঝা তা বড় দায়, ছোট-বড় সবার সমন্বয়ে অনেকটা জগাখিচুড়ির স্বাদ।

অথচ ব্যাংকে টাকা রেখে বিলাসিতা না করে সঠিক পন্থায়, সঠিক সমন্বয়ে যদি বিভাগ কেন্দ্রীক ক্রিকেট একাডেমি করা যেতো প্রতিষ্ঠা, তবে ক্রিকেটে আজকের এই দিন দেখতে হতো না। ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে একাডেমিগুলো থেকেই পাওয়া যেত যথেষ্ট সহায়তা। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও থাকতো চরমে, মাঠেও যার উত্তাপ পাওয়া যেত গরমে। নিজস্ব ম্যানেজমেন্ট, নিজস্ব পরিকল্পনা। ভিন্ন ভিন্ন কোচ আর তাদের ভিন্ন ভিন্ন অনুশীলন। আর সকল পর্যায়ের সুবিধা ও দিকনির্দেশনা পেলে তামিম-সাকিবের দিনশেষে করতে হতো না আফসোস, পাওয়া যেতো ভরসা।

একাডেমি কেন্দ্রীক করা যেতো হান্টও। যে হান্টে সন্ধান মিলত সত্যিকার প্রতিভার। আর সেই প্রতিভা কলিগুলোকে প্রস্ফুটিত করে যদি উচ্চতর অনুশীলনের জন্য অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডে পাঠানো যেত, তবে হয়তো আমাদেরও একজন হারিস রউফ থাকত। এই হারিস রউকে পেসার হান্ট করে খুঁজে পেয়েছিলেন পাকিস্তানি কিংবদন্তী পেসার আকিভ জাবেদ। পরে একাডেমিতে তাকে দীক্ষিত করে পাঠিয়ে দেন তাসমান সাগর পাড়ের দেশে। সেখানে দৃষ্টি কেড়ে সুযোগ পেয়ে যান বিগব্যাশে। অতঃপর আজকের পাকিস্তান দলে।

আর আমরা শুধু সেই ২০০০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যপে চলেছি অনবরত : নেই...নেই...নেই। কিন্তু পাওয়া যাবে কিভাবে সেই চেষ্টা আর করা হয়নি। যদি করা হতো তবে করোনার ক্রান্তিকালে বিসিবি’র ঘরেও অভাব লাগতো। যেমনটা লেগেছিলো সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দ পাওয়া ভারতের ঘরেও। অথচ ক্রিকেটের উন্নতি না করে আমরা টাকার উন্নতি করছি। আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে বলছি আমার কাছে ৯০০ কোটি আছে।

ফিরি বর্তমান হাল-চালে। কোথায় হারালো বাঘের আগ্রাসন, দায়টা কার? জনপ্রিয় সাংবাদিক নাজমুল রানার ভাষায় সুন্দর বনের বাঘ হঠাৎ কেন ডোরাকাটা বেড়াল? কারণ তো অনেক আছে, তবে একটা কারণ দিয়েই বাকিগুলো ফোকাস হারাবে। বরাবরের মতোই কি বলির পাঠা বলির পাঁঠা হবে রাসেল ডমিঙ্গো। অবাক হবার কিছু নেই। এতো বরাবরের মুখস্থ চিত্র। দশের বোঝা একের উপর চাপিয়ে, সকল ব্যর্থতার দায় একজনের মাথায় দিয়ে সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে!

রাসেল ডমিঙ্গো দোষী নয় তা বলি না। বলছি বাকি দোষীরা কি আইনের উর্ধ্বে? হয়তো বা তাই, এমনটাই তো হয়ে চলেছে। প্লেয়ার আর ম্যানেজমেন্টের উপর কি এই দায় বর্তায় না? যাহোক, বিতর্ক থেকে বাঁচতে বিশ্বকাপ শেষে দল দেশে ফিরতে না ফিরতেই, ম্যানেজার ও কোচের রিপোর্ট হাতে না পেয়েই বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেলেছে বিচারকরূপী অপরাধীরা। যার একটা পয়েন্ট পারভেজ হোসাইন ইমন।

পারভেজ হোসাইন ইমন সম্পর্কে সবারই কম বেশি ধারণা আছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর নামে হওয়া দেশীয় আসরগুলোর সৌজন্যে। যদিও অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ তাতে বড় ভূমিকা রেখেছে। যাহোক, শোনা যাচ্ছে আসন্ন পাকিস্তান সিরিজে টি-২০-এ বাংলার লাল সবুজ জার্সিটা তার গায়ে উঠতে চলেছে। কিন্তু আদৌ কি তা ঠিক হচ্ছে? আমার দৃষ্টিতে এখনি সেই সুযোগ আসেনি। একটু সময় দেয়া যেত তাকে। বিশেষ করে আরেকটা দেশীয় আসর, যেখান থেকে ফর্মটা ক্যারি করে নিয়ে যেত জাতীয় দলে। কিংবা বাইরের দেশে ভিন্ন পরিবেশে কোথাও কিছু দিন অনুশীলন করার সুযোগ হলে তা হতো সোনায়-সোহাগা। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, ওর ক্যারিয়ার নিয়ে ভয় হচ্ছে। তার ওপর সে আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচিত নাম!


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us