কোভিড-১৯ নির্মূলের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক দিকগুলো হলো
কোভিড-১৯ - ছবি : সংগৃহীত
১. কোভিড-১৯-এর রোগ জীবাণুর সাসেপ্টিবল হোস্ট ও মূল রিজার্ভার একটিই, আর সেটি হলো মানুষ। মানুষের বাইরে এর অন্য কোনো রিজার্ভার (রোগ সৃষ্টি ও বংশ বৃদ্ধি করার ক্ষমতা) নেই। এই ভাইরাসের ইনফেক্টিভিটি পিরিয়ড ও উপসর্গহীন রোগীর সংখা তুলনামূলকভাবে অন্য ভাইরাসগুলোর চেয়ে কম।
২. সারসকভ-২ এর আরো নম্বর অর্থাৎ আক্রান্তকালীন সময়ে একজন রোগী সর্বোচ্চ গড়ে ২.৫ জনকে আক্রান্ত করতে পারে যা স্মল পক্স, পোলিও, মিজলসের তুলনায় কম।
৩. অন্যান্য ভাইরাসের র্যাপ্লিকেশনে প্রুফ রিডিং ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রুফ রিডিং ক্ষমতা আছে, ফলে মিউটেশন-ভ্যারিয়েন্ট অন্যদের তুলনায় কম হয়। বেশির ভাগ ভ্যারিয়েন্টই মানুষের জন্য কম ক্ষতিকর। আবার যারা ক্ষতিকর, তারাও মানুষ নামক হোস্টের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে এক থেকে দেড় বছরের বেশি টিকে না।
৪. মানব শরীরের বাইরে যেমন- রোগীর ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বায়ু, মাটি, রেস্পিরেটরি পার্টিকল ইত্যাদিতে সারসকভ-২ একটি অল্প ও নির্দিষ্ট সময় বেঁচে থাকলেও বংশবিস্তার করতে পারে না। হোস্ট তথা মানুষ না পেলে নির্দিষ্ট সময় পরে এই জীবাণু বেঘোরে মারা যায়। সারসকভ-২ জীবাণুটি লিপিড বাইলেয়ার মেমব্রেন দ্বারা আবৃত ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে হাত ধুলেই মেমব্রেনটি যা খসে পড়ে ও সাথে সাথে মারা যায়।
৫. স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেমন- সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, হাত না ধুয়ে হাত দিয়ে নাক মুখ ও চোখ স্পর্শ না করে এবং মাস্ক পরিধান করে ১৪ দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যেতে পারলে চ্যানেল ব্লক হয়ে যাওয়ার কারণে রোগ জীবাণু মারা যায়। ফলে অন্য কোনো ব্যবস্থা নিয়ে শুধু এই চ্যানেল ব্লকের কাজটিও যদি একযোগে সারা পৃথিবী চালানো যেত তাহলে অনেক আগেই কোভিড-১৯ নির্মূল হয়ে যেত। কিন্তু বাস্তবে সেটি পারা যাচ্ছে না বলে এত বড় বিপর্যয়।
৬. মানবেতিহাসে স্বল্পতম সময়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের সহজলভ্য কোভিড-১৯ এর টিকা আবিষ্কার।
৭. এই রোগের প্রাথমিক উৎস হর্সশু বাদুড়। মানুষ থেকে অন্য পোষা কিছু প্রাণীতে ছড়ানোর কিছু প্রমাণ আছে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত এই বাদুড় ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী থেকে মানুষকে পুনরায় আক্রান্ত করার কোনো প্রমাণ নেই।
৮. সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয়ের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসার সর্বশেষ জ্ঞান দ্বারা সমৃদ্ধ। আছে আইসোলেশন-কোয়ারেন্টিনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। আরো আছে ক্রিটিক্যাল রোগীদের জন্য আইসিইউ যা ইতোপূর্বে কোনো মহামারী চলাকালীন ছিল না।
৯. সারা পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোকে সমন্বয় করে একযোগে কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো একটি বিশ্ব ব্যবস্থা। আছে সবার টিকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদানকারী ও সরবরাহকারী সংগঠন ‘কোভ্যাক্স’ যা ইতোপূর্বে কখনো ছিল না।
১০. একটা সময় ছিল টিকা অসচেতনতায় ভরা বিশ্ব, এখন হয়েছে টিকা সচেতনতায় ভরা নতুন ও সজাগ বিশ্ব।
কোভিড-১৯ নির্মূলে অসুবিধাজনক দিকগুলো হলো-
১. মিউটেশন-ভ্যারিয়েন্ট ফরম্যাশনের ক্ষমতা।
২. শতভাগ কার্যকর ও লাইফ লং কোনো টিকা নেই। মাত্র ৮-১০ মাস স্থায়িত্বের টিকা। আর টিকাও এমনই যে মানুষকে শুধু উপসর্গযুক্ত রোগ সৃষ্টিতে বাধা দেয় কিন্তু মৃদু উপসর্গযুক্ত বা উপসর্গহীন করোনা হতে পারে টিকা দেয়ার পরও। শুধু তাই নয়, টিকাযুক্ত ব্যক্তি ভ্যাকসিন ব্রেক থ্রু ইনফেকশন ও অন্যদের ইনফেক্টও করতে পারে। তবুও নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কম কার্যকর। ভ্যারিয়েন্ট দমনে সময়মতো যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়ে মানব সমাজের বিনাশ সাধন করতে থাকে। ফলে এর নম্বর অর্থাৎ আক্রান্তকালীন গড়ে সর্বোচ্চ ইনফেক্ট করার ক্ষমতা ২.৫ থেকে বেড়ে ৭.৫-৯ পর্যন্ত হতে পারে।
৩. বৈশ্বিক টিকা বৈষম্য বা ‘ভ্যাকসিন ইনইকুইটি’, পৃথিবীর কোথাও কোথাও টিকা অসচেতনতা বর্তমান সময়ে এই মহামারী নির্মূলে বড় বাধা।
৪. রোগ জীবাণুর চ্যানেল ব্লকে স্বাস্থ্যবিধি, মাস্ক পরিধান, লকডাউন-শাটডাউন, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি অত্যন্ত কার্যকর পন্থা হলেও বাস্তবে রুটিরুজির প্রশ্নে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
৫. যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নতির ফলে সারা পৃথিবীকে বলা হয় একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ’। লোক সংখার ঘনত্বও আগের তুলনায় অনেক বেশি, ফলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও মানুষের গমনাগমন নিয়ন্ত্রণ অনেক কঠিন।