করোনা নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
করোনা নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? - ছবি : সংগৃহীত
সম্প্রতি বিএমজে গ্লোবাল হেলথ নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে স্মল পক্স, পোলিও, কোভিড-১৯- এই তিনটি মহামারীর নির্মূলকরণে কোনটির সম্ভাব্যতা কতটুকু তা বিশ্লেষণ করা হয়। এই বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গবেষক দল ১৭টি পয়েন্ট বা ভ্যারিয়েবলকে বিবেচনায় নেয়। প্রত্যেকটি রোগের প্রত্যেক ভ্যারিয়েবলের জন্য স্কোর করা হয় শূন্য থেকে তিন পর্যন্ত। একটি রোগের একটি নির্দিষ্ট ভ্যারিয়েবল স্কোর ‘শূন্য’ মানে, ওই রোগটির এই ভ্যারিয়েবলটি নির্মূলের ক্রাইটেরিয়ায় শূন্য সক্ষমতা। আর স্কোর ‘তিন’ মানে রোগ নির্মূলের সর্বোচ্চ সক্ষমতা। সুতরাং ১৭টি ভ্যারিয়েবলের রোগ নির্মূলে সর্বোচ্চ সক্ষমতা ৫১।
গবেষকদল এই ১৭টি ভ্যারিয়েবলকে বিশ্লেষণ করে নির্মূল হওয়ার যোগ্যতা বিচারে সবচেয়ে যোগ্য বিবেচনা করেছে স্মল পক্সকে যা দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে গেছে। নির্মূলের যোগ্যতা বিচারে দ্বিতীয় হচ্ছে কোভিড-১৯ আর তৃতীয় পোলিও। ডব্লিওএইচও ৩০ বছরব্যাপী চেষ্টা করার পর দু’টি দেশ ছাড়া (আফগানিস্তান ও পাকিস্তান) অন্য সব দেশ থেকে ওয়াইল্ড পোলিওকে বিদায় করতে সমর্থ হয়েছে।
জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে গবেষকদল চূড়ান্তভাবে এ ব্যাপারে কিছু আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, কোভিড-১৯ নির্মূলের সম্ভাবনা পোলিও-এর চেয়েও বেশি কিন্তু স্মল পক্সের চেয়ে কম। পোলিও নির্মূলে বিশ্ব চেষ্টা চালাচ্ছে ৩০ বছর অবধি, আশা করা যায়, কোভিড-১৯ নির্মূলে ৫-১০ বছরের বেশি লাগবে না।
ক্স ১৭টি ভ্যারিয়েবলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ্যারিয়েবল হলো ভ্যাকসিন ভ্যারিয়েবল যাকে আবার দু’টি ভ্যারিয়েবলে ভাগ করা হয়েছে। ভ্যাকসিনের দু’টি ভ্যারিয়েবলের মধ্যে একটি ভ্যারিয়েবল হলো ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও ইফেক্টিভিটির বিচার বিশ্লেষণ। এই বিচারে স্মল পক্স, পোলিও ও কোভিড-১৯-এর স্কোর হলো যথাক্রমে- তিন, এক এবং এক। ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ভ্যারিয়েবল হলো সংশ্লিষ্ট ভ্যাকসিন কতদিন অ্যান্টিবডি প্রটেকশন ধরে রাখতে পারে। সে সক্ষমতায় আবারো স্মল পক্স, পোলিও এবং কোভিড-১৯-এর সক্ষমতা স্কোর যথাক্রমে- তিন, দুই এবং এক। স্মল পক্স ভ্যাকসিন নিরাপদ, অধিক কার্যকর ও সুরক্ষা আজীবন।
ক্স পোলিও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এই সমস্যা তিনটি। প্রথমত, আজীবন অ্যান্টিবডি প্রটেকশন পেতে চার ডোজ ভ্যাকসিন লাগে। দ্বিতীয়ত, এমন ভ্যাকসিন দরকার যা পোলিও-এর তিনটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধেই কাজ করে। তৃতীয়ত, ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন থেকে উদ্ভূত পোলিও হওয়া এবং প্রতি ১০ লাখ টিকা প্রাপ্তদের মধ্যে এক-দুইজনের ওরাল পোলিও ভ্যাকসিনের কারণে প্যারালাইসিস হওয়ার চান্স থাকে।
ক্স গবেষণায় দেখা গেছে, টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাসারন্ধ্র ও গলবিলে থাকা করোনা জীবাণু অন্যদের আক্রান্ত করে। সব মিলিয়ে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত দু’টি ভ্যারিয়েবলে স্মল পক্সের স্কোর তিন, পোলিওর স্কোর ১-২ এবং কোভিড-১৯-এর স্কোর এক।
স্মল পক্সে রিং ভ্যাকসিনেশনে সফলতা দেখিয়েছে, পোলিওতে দেখিয়েছে গণটিকা আর কোভিড-১৯-এর গণটিকা বিশ্বব্যাপী চলমান।
ক্স স্মল পক্স, পোলিও ও কোভিড-১৯-এই তিনটি ভাইরাল ডিজিজেরই ক্যারিয়ার স্টেট সময় কম। ফলে রোগ নির্মূলের ক্যাটাগরিতে এই তিনটি ভাইরাল ডিজিজই সমানে সমান।
ক্স সুস্পষ্টভাবে উপসর্গের উপস্থিতি যার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় সহজেই করা যায় : এই বিচারে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে স্মল পক্স, কারণ গুটিবসন্ত চেনা সহজ। পোলিওতে মাত্র ১০ শতাংশের ক্ষেত্রে উপসর্গের উপস্থিতি থাকে; তা-ও আবার খুবই সামান্য। বাকি ৯০ শতাংশ পোলিও রোগীই থাকে উপসর্গবিহীন। ফলে উপসর্গের উপস্থিতি দিয়ে পোলিও নির্ণয় কঠিন। কোভিড-১৯-এ ৩০ শতাংশের মতো উপসর্গহীন থাকে।
ফলে পোলিওর চেয়ে ক্লিনিক্যালি উপসর্গের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের স্কোরিংয়ে কোভিড-১৯ পোলিওর চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।