২০০৭ থেকে ২০২১ : অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হলেও হারের বৃত্ত ভাঙেনি
২০০৭ থেকে ২০২১ : অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হলেও হারের বৃত্ত ভাঙেনি - ছবি সংগৃহীত
২০০৭! টি-২০ বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়। শুধু জয় না। ঐতিহাসিক জয়। তখনকার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে আফ্রিকা বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়েছিল টি-২০-এ নবীন বাংলাদেশ।
পরের গল্পটা মলিন, রংচটা। একের পর এক পরাজয়, হতশ্রী প্রদর্শনী। ঐ যে ২০০৭-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় তারপর একে একে চলে গেছে ছয়টি টি-২০ বিশ্বকাপ, কেটে গেছে ১৪ বছর তবুও টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে জয় নামক সোনার হরিণ আর আসেনি। সময়ের সাথে সাথে খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হলেও হারের বৃত্ত ভাঙেনি। রার্গন্যার নাকসের দারিদ্রের দুষ্টচক্রের মতো এবারও ভাঙেনি বাংলাদেশের পরাজয় চক্র।
বিশ্বকাপ মিশনে প্রথম ম্যাচে স্কটিশদের বিপক্ষে লজ্জাজনক হারের পর অজিদের বিপক্ষে বিব্রতকর হারের মাধ্যমে শেষ হলো টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন।
দুবাইতে বিকাল ৪টায় শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং করতে নামে অজিরা। দুই দলে দুই পরিবর্তন আসে শুরুর একাদশে। অষ্ট্রেলিয়া দলে বামহাতি স্পিনার এ্যাশ্টন এ্যাগারের পরিবর্তে দলে ফেরেন মিশেল মার্শ। বাংলাদেশ দলে স্পিনার নাসুমের পরিবর্তে দলে ফেরেন পেসার মুস্তাফিজ।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই অজিদের তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশী ব্যাটাররা। প্রথম তিন ওভারে সাজঘরে ফেরেন প্রথম সারির তিন ব্যাটার। বরাবরের মতো ব্যর্থ লিটন দাস আজও রানের খাতা খুলতে পারেন নি। মিশেল স্টার্কের বলে ইনসাইড এজে বল স্টাম্পে আঘাত হানে। একই ভাবে জশ হ্যাজেলউডের বলে সাজঘরে ফেরেন নিষ্প্রাভ সৌম্য সরকার। তিনি অবশ্য ৮ বল খেলে ৫ রান করেন। আলোচনা-সমালোচনায় জর্জরিত মুশফিক আরো একবার ব্যর্থ হয়েছেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে লেগ বিফোর হয়ে সাজঘরে ফেরেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। তিন ব্যাটার সাজঘরে স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের রান তখন মাত্র ১০। দলপতি রিয়াদ ও নাঈম শেখের হাত ধরে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে বাংলাদেশ তবে দলীয় ৩২ রানের মাথায় ১৭ রান করে নাঈম শেখ বিদায় নিলে স্কোর দাড়ায় ৩২-৪! ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ সাজঘরে আসা যাওয়ার মিছিলে নিজেদের হারিয়ে দিশেহারা অবস্থা। ৩২-৪, চোখের পলকে ৩৩-৫ হতে দেরী হয়নি।হ্যাজেলউডের পর নিজের প্রথম ওভারেই আফিফকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান লেগ স্পিনার জ্যাম্পা।
৩৩ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন দলনেতা রিয়াদ ও শামীম পাটোয়ারী। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাড়ায় ৫৮-৫। এরই মধ্যে প্রথম দশ ওভারে বাংলাদেশ ডট বল খেলে ৩৫ টি। ২৮ বলে ২৯ রানের ছোট্ট পার্টনারশিপ গড়ার পরে জ্যাম্পার বলে কাট করতে গিয়ে ব্যক্তিগত ১৯ রান করে ম্যাথু ওয়েডের বলে ধরা পড়ে সাজঘরে ফেরেন শামীম। দলীয় স্কোর তখন ৬২-৬; পরের বলে আবারো উইকেট এবার লেগ বিফোর উইকেট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মাহাদী। লিটন দাসের পর বাংলাদেশ দলে দ্বিতীয় গোল্ডেন ডাক মারেন তিনি।
এরপরে আর কিছুই ছিল না। পরের ওভারে স্টার্কের বলে ওয়েডের হাতে ধরা পড়ে আউট হলে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ৩০ বল বাকি রেখে মাত্র ৭৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাট হাতে সর্বাধিক ১৯ রান করেন নাঈম শেখ।
অজিদের পক্ষে নিজের ক্যারিয়ার সেরা ১৯ রানে ৫ উইকেট লাভ করেন লেগ স্পিনার এ্যাডাম জ্যাম্পা।
মাত্র ৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে জয় ছাড়া আরো সমীকরণ সামনে ছিল অজিদের। গ্রুপে রান রেটের হিসাবে সাউথ আফ্রিকার আগে উঠতে হলে অজিদের ৭৪ রান চেজ করতে হতো ৮.১ ওভার বা তার আগে। তবে ৮.১ ওভারের রান চেজ করার কাজটা সহজেই সারে অষ্ট্রেলিয়া।অধিনায়ক ফিঞ্চ ২০ বলে ৪০ আর ওয়ার্নার ১৪ বলে ১৮ রান করে সাজ ঘরে ফেরেন। বাকি কাজ সারেন মিশেল মার্শ ৫ বলে করেন ১৬ রান।
বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন ও শরিফুল একটি করে উইকেট লাভ করেন।
ম্যাচে বল হাতে দুর্দান্ত বল করার সুবাদে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন এ্যাডাম জ্যাম্পা।