মার্কিন অস্ত্র নিয়ে বিপদে ইন্দোনেশিয়া!
মার্কিন অস্ত্র নিয়ে বিপদে ইন্দোনেশিয়া! - ছবি সংগৃহীত
মার্কিন অস্ত্রশস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার তিক্ত স্মৃতি রয়েছে জার্কাতার। পূর্ব তিমুরে মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যু তুলে ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মার্কিন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছে দেশটি। নিষেধাজ্ঞার ফলে ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীতে খুচরা যন্ত্রাংশের অভাব দেখা দেয়।
অস্ট্রিয়া ও ভিয়েনার অফলোড করা ১৫টি ইউরোফাইটার টাইফুন জেট কেনার চিন্তা করেছিল জার্কাতা। সেকেন্ডহ্যান্ড ইউরোফাইটার ইন্দোনেশিয়াকে কিছু রুপিয়া বাঁচাতে পারলেও লোকজন আবার পুরনো জিনিস কেনার ঘোর বিরোধী। তা ছাড়া এগুলো সংগ্রহে ইউকে, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেনের অনুমোদনও প্রয়োজন হবে। অস্ট্রিয়ার অস্ত্র সংগ্রহ করতে ইসরাইলের অনুমোদন দরকার, কেননা অস্ত্র নির্মাণ ও সরবরাহের পুরোটা ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ করে। ইতঃপূর্বে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ প্রশ্নে ইন্দোনেশিয়া কঠিন আপত্তি জানায়। ফলে এই পথে পা বাড়ালে পুরনো জেট পেতে দুই দশক সময়েও শেষ হবে না। ততদিনে অনেক খেলা সাঙ্গ হয়ে যাবে। বর্তমানে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ পাকিস্তান ও তুরস্ক। তাই মন্ত্রী প্রবো সুবিয়ান্তো ফ্র্রান্স এবং তুরস্কের বন্দরে ভিড়তে চায়। ফ্রান্স থেকে রাফায়েল ও সাবমেরিন সিস্টেম এবং তুরস্ক থেকে মানববিহীন আকাশযান বা ড্রোনসহ বিভিন্ন ধরনের আধুনিক অস্ত্র। অকাস বিরোধে ক্ষিপ্ত ফ্রান্স এবং মুসলিম দেশ হিসেবে তুরস্ক জার্কাতাকে যুদ্ধাস্ত্র দিতে আগ্রহী হয়েছে। খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুটি দেশ অধিক অর্থ দাবি করবে না বলে জানা যায়।
বেইজিংয়ের সাথে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্দোনেশিয়া চীন থেকে স্থানান্তরিত মার্কিন কোম্পানিগুলোকে নিজ দেশে রাখতে যাচ্ছে। বেইজিং জাকার্তার এসব প্রস্তাব অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করেনি। তবে ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় নৌ-উপস্থিতি বৃদ্ধি ও টহল বৃদ্ধির মাধ্যমে চীন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। ইন্দোনেশিয়ার টহল-জাহাজ প্রায়ই চীনের কোস্ট গার্ড বাহিনীর মুখোমুখি হয়, যদিও আজতক কোনো সমস্যা হয়নি। ইন্দোনেশিয়া অবস্থান পরিবর্তন করলে এই ‘মুখোমুখি’ ভিন্ন দিকে মোড় নেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
গত মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, চীন ইন্দোনেশিয়ায় সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে জার্কাতা বলেছে, ‘ইন্দোনেশিয়া কোনো দেশের জন্য সামরিক ঘাঁটি হবে না।’ ইন্দোনেশিয়া রাজি না হলে কোনো দূরবর্তী দ্বীপে চীন ঘাঁটি বানাবে। চীন ‘নাইন ড্যাশ লাইনের’ বাইরের এলাকাও নিজের বলে দাবি করে। বিষয়টি অনেকটা এরকম- চীনের সাথে থাকো নতুবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।
ইন্দোনেশিয়া কি এমন অবস্থানে থাকতে চায়? ইন্দোনেশিয়া বোঝে যে, আমেরিকা ও চীনের দ্বন্দ্ব তার কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য হুমকি তৈরি করছে। ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের উত্তেজনা কমাতে জার্কাতার তেমন কিছু করার নেই। ইন্দোনেশিয়া আসিয়ান পর্যায়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য চাপ দিতে পারে। যদি না দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া একত্র হয়ে এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিক্রিয়া প্রণয়ন করে। তবে তার সম্ভাবনা খুব কম। এ দিকে যুক্তরাষ্ট্র চীন বিরোধী মোর্চা কোয়াড, অকাস এসব করেই চলেছে। ফলে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান আরো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরে পরস্পরবিরোধী ও বিদ্বেষপূর্ণ বাক্যবাণ ছুঁড়ছে এবং সাগরে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। ব্রিটেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য সেখানে চারটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠিয়েছে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উদ্বেগ ও সশস্ত্র সংঘর্ষের ঝুঁকির চাপ বাড়িয়েছে। আসিয়ানের ওপর প্রভাব বিস্তারের জোর প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র।
রেটনো বলেছেন, ‘আসিয়ানকে অবশ্যই দৃঢ়ভাবে নিরপেক্ষ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ ‘আসিয়ান, ইন্দোনেশিয়া, সবাইকে দেখাতে চায় যে, জাকার্তা অংশীদার হতে প্রস্তুত। প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদে পড়তে চাই না।’ চীন, দক্ষিণ চীন সাগরের বেশির ভাগ অংশকে সার্বভৌম অঞ্চল বলে দাবি করে। ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ব্রুনাই সম্পদসমৃদ্ধ এই জলসীমার অংশ দাবি করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বছর চীনের দাবি করা জলসীমায় নৌচলাচলের স্বাধীনতার কথা উল্লেøখ করে বাণিজ্যিক ও সামরিক নৌচলাচল কার্যক্রম বাড়িয়েছে, ২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মতো এই অঞ্চলে দু’টি বিমানবাহী রণতরী, পরমাণু সাবমেরিন ও নজরদারি বিমানের টহল বৃদ্ধি করেছে।
চীনের নৌবাহিনীও জলপথে নৌমহড়া বাড়িয়েছে, জাহাজ ঘায়েল করার চারটি মাঝারি পাল্লøার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে, এগুলোকে ‘এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার কিলার’ বলা হয়।