সুদানে অভ্যুত্থান : নেপথ্যে কে?

মাসুম খলিলী | Nov 02, 2021 04:30 pm
সুদানে অভ্যুত্থান : নেপথ্যে কে?

সুদানে অভ্যুত্থান : নেপথ্যে কে? - ছবি সংগৃহীত

 

আমেরিকান সাময়িকী ‘ফরেন পলিসি’র এক প্রতিবেদন অনুসারে, ধনী আঞ্চলিক শক্তি, বিশেষ করে উপসাগরীয় রাজতন্ত্র, সুদানের সামরিক জান্তাকে কূটনৈতিক এবং আর্থিক সহায়তা ঢেলে দিয়েছে। এটি সুদানের জনগণের সুবিধার জন্য করা হয়নি বরং অর্থনৈতিক চাপ উপশম করার জন্য এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তার পরীক্ষা জয়ী করতে আর দেশটিকে তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কক্ষপথে টেনে আনার জন্য দেয়া হয়েছে। গত এক দশকে, অন্যান্য দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য সৌদি ও আমিরাতের ধ্বংসাত্মক প্রভাবের অনেক উদাহরণ রয়েছে। ২০১৩ সালের মিসরে অভ্যুত্থানের মতো আরেক উদাহরণ সুদানে সৃষ্টি করা হয়।

সুদানের এই সপ্তাহের ঘটনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোথাও ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যায়। জেনারেলরা যখন বুঝতে পারেন, তারা এটি দমন করতে পারবেন না তখন একটি জনপ্রিয় বিপ্লবের তরঙ্গে সওয়ার হন। তারা তখন কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রপ্রধানকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং নিজেদেরকে ‘গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। এরপরের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে, তারা সঙ্কট জাগিয়ে তুলতে কঠোর পরিশ্রম করেন যা অন্তর্বর্তী রোডম্যাপের ব্যাপারে মোহভঙ্গের জন্ম দেয়। শেষ পর্যন্ত, বেসামরিক ব্যক্তিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরপ্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়। মিসরে এই ঘটনা ঘটেছে। তার পুনরাবৃত্তির কাজ চলছে সুদানে।

গত জুলাই মাস থেকে সুদানে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের সিদ্ধান্তের পর মূল্যস্ফীতি বিশ্বের সর্বোচ্চ হারের একটিতে লাফিয়ে গিয়ে ৪০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। গুরুতর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বেসামরিক নেতাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে আর স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের আড়ালে সামরিক বাহিনীর পক্ষে ক্ষমতা কেড়ে নেয়া সহজ হয়েছে। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদার আর্থিক সহায়তা এটাকে সমর্থন করেছে।

বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরপরই, এপ্রিল ২০১৯ সালে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সামরিক শাসনের জন্য তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই অঙ্গীকারটি দেয়া হয়েছিল অন্তর্বর্তী সামরিক বেসামরিকদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে রাজি হওয়ার আগে। ক্ষমতা ভাগাভাগির পর সেটি আর বাস্তবে রূপ পায়নি। আগামী সপ্তাহগুলোতে, অভ্যুত্থান জয়ী হলে এই সাহায্য আবার প্রবাহিত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

ব্যাপক আঞ্চলিক সমর্থন আর সেইসাথে অভ্যন্তরীণ সমর্থনের অভাবে সুদানে অভ্যুত্থান এখনো নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিদেশে বেশ কয়েকজন সুদানি রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যেই এর নিন্দা করেছেন। মিসরে জেনারেলদের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি ইসলামিস্ট হওয়ার কারণে বিশ্বরাজনীতির নিয়ন্ত্রকরা চোখ বন্ধ করে জান্তাকে সব নির্মমতা ও মানবাধিকার হরণের কর্মকাণ্ডে নীরবে সমর্থন দিয়ে যান। সুদানে বশির-বিরোধী যে রাজনৈতিক শক্তি তার বিকাশ ঘটে ভিন্নভাবে। এখানে এক সময়ের বামধারার পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে ইসলামিক ভাবধারার প্রেসিডেন্ট বশিরের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে মূল ভূমিকা রেখেছে পাশ্চাত্য শক্তিবলয়। আর সেক্যুলারপন্থী হওয়া সুদানি পেশাজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে ক্ষমতার অংশীদার করেছে ইউরোপ আমেরিকা। বশিরের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের পর ট্রাম্প প্রশাসনের ইন্ধনে সামরিক বেসামরিক দু’পক্ষ একজোট হয়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ জনমতের বিপক্ষে গিয়ে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নেয় ।

এখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় বাইডেন প্রশাসন। বাইডেন প্রশাসনের নতুন হিসাব নিকাশের কারণে সামরিক বাহিনীর সর্বময় কর্তৃত্ব গ্রহণকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা পুরোপুরি মেনে নেয়নি। সামরিক জান্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন সুদানের ৭০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা স্থগিত ঘোষণা করেছে। প্রশ্ন হলো, এই অবস্থায় জেনারেল বুরহান কি পারবেন মিসর সৌদি আমিরাতের সমর্থনে সিসি মার্কা শাসন সুদানে চালু করতে?

ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের অ্যাজেন্ডা কার্যকর করলে তেল আবিবের জন্য বুরহানের কর্তৃত্ব গ্রহণে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। বশিরের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের আগে বুরহান ও তার প্রধান সহযোগী জেনারেল হেমেতি ইসরাইলি গোয়েন্দাদের সাথে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। সেখানেই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার বিনিময়ে সেনা নেতৃত্বকে ক্ষমতা দখলে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা যায়। পরবর্তী বিক্ষোভ ও বশিরের ক্ষমতাচ্যুতির যে দৃশ্যপট মঞ্চায়িত হয় তার কাঠামো এই ধরনের গোপন বৈঠকগুলোতে নির্ধারণ হয়েছিল। এ জন্য আয়োজন করা বৈঠকে শুধু ইসরাইলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারাই নন, সেই সাথে সৌদি-আমিরাত-মিসর ও কয়েকটি পশ্চিমা দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও অংশ নেন।

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us