সুদানের বাস্তবতা
সুদানের বাস্তবতা - ছবি সংগৃহীত
সামরিক অভ্যুত্থানের পর সুদানের এখনকার বাস্তবতা হলো, সামরিক সরকারের বিরোধীরা এই সর্বশেষ অভ্যুত্থানের মুখে সম্ভবত চুপ থাকবে না। বশিরের পতনের আগে কয়েক মাস ধরে প্রতিবাদকারীরা গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। আর মিসরের সেনাবাহিনীর মতো সুদানি সেনাবাহিনীর ততটা সামর্থ্য ও জনপ্রিয়তা নেই যাতে সামরিক জান্তা মিসরীয় রাজনীতির ওপর তার আধিপত্য ন্যায্য করার জন্য তার শক্তিকে ব্যবহার করতে পেরেছে। সুদানের জনগণের অভিজ্ঞতা হলো, অভ্যুত্থান গণতন্ত্র আনে না। সামরিক অভ্যুত্থানের প্রথম মুহূর্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। বিরোধী বাহিনী দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেয়, জুন ২০১৯ সালে যা বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরে সেনাবাহিনীকে বেসামরিক ব্যক্তিদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য করে।
এই সময়ে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে একটি জরুরি আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনসহ আরো কিছু উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে যা সুদানের ক্ষেত্রে একটি পার্থক্য তৈরি করতে পারে। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে সুদানের রাজনীতিতে তাদের ক্ষতিকর সম্পৃক্ততা বন্ধ করতে বুরহানের আঞ্চলিক সমর্থক কায়রো, রিয়াদ এবং আবুধাবিতে স্পষ্ট বার্তা পাঠানো যেতে পারে। এই দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে তাদের সম্পর্কের জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করে। তারা এই অঞ্চলে কর্তৃত্ববাদিতাকে স্থিতিশীলতার ভিত্তি হিসেবে সমর্থন করার যুক্তি দেখায়। তারা বাইডেন প্রশাসনের সাথে একটি ক্ষীণ সম্পর্ক বজায় রাখে আর তারা মৌখিক সমালোচনার বাইরে সর্বশেষ অভ্যুত্থানের প্রতি আমেরিকার কার্যকর অবস্থান দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।
সুদানের অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক নিন্দা অনেক হয়েছে। তবে সমালোচনাকে ‘কংক্রিট’ দাবিতে রূপান্তরিত করা এবং নিষেধাজ্ঞার সাথে যুক্ত একটি জবাবদিহিতার সময়রেখা সুদানের সামরিক নেতাদের ক্ষমতা দখলের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করবে। সাহায্য কমানোর মার্কিন সিদ্ধান্ত একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। সুদানের প্রতিবিপ্লবকে সমর্থনকারী আরব সরকারগুলোর ওপরও ওয়াশিংটনকে চাপ দিতে হবে। এছাড়া একটি উদাহরণ অবশ্যই সামরিক নেতাদের জন্য তৈরি করা উচিত যারা আঞ্চলিক সমগোত্রীয়দের সাথে মিলে গত ১০ বছরে আরব অঞ্চলে নাগরিক আন্দোলন ধ্বংস করেছেন। অভ্যুত্থানের পিছনে থাকা বুরহান, হেমেতি এবং অন্য নেতাদের বিচার করার বিষয় নিয়েও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আলোচনা তাদের জন্য চাপ তৈরি করতে পারে ।
শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সেক্যুলার বেসামরিক শক্তির সাথে ক্ষমতা ভাগ করে দেশ পরিচালনায় জান্তাকে হয়তো উৎসাহিত করতে পারে। এ ধরনের প্রশাসনকে দিয়ে সুদানি সমাজের গভীরে যে ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রভাব রয়েছে, সেটিকে নমনীয় করতে পারবে বলে এ শক্তি মনে করতে পারে। সুদানে ইসলামিস্টদের বড় অংশ প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে সমর্থন করেছিল। সামরিক অভ্যুত্থানের পর এ শক্তিটি এক প্রকার কর্তৃত্বহারা অবস্থায় রয়েছে। তবে সুশাসন ফেরানো ও জনগণের অর্থনৈতিক দুর্দশা নিরসনে বর্তমান সরকার আশাবাদী হওয়ার মতো কিছুই করতে পারেনি। ফলে সাধারণ সুদানিদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বাঁধছে। আর একই সাথে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি গণসমর্থনও বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পেশাজীবী রাজনৈতিক শক্তির চলমান আন্দোলনে ইসলামিস্টদের ভূমিকা কী হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ড. হাসান তুরাবির দলের সাথে পেশাজীবীদের সম্পর্ক ও একাত্মতা আগেই ছিল। এখন মূল ধারার ইসলামিস্টরা এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হলে জান্তা সরকার বেকায়দায় পড়বে। তবে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়রা সামরিক বাহিনীর সাথে সেক্যুলার রাজনৈতিক ও পেশাজীবী শক্তির মধ্যে মেলবন্ধনটিকে আবার জোড়া লাগিয়ে সামনে এগোতে চায় কিনা সেটি একটি বড় বিবেচ্য হতে পারে।