পৃথিবীর সবচেয়ে 'শিক্ষিত' ব্যক্তি শ্রীকান্ত জিচকার
শ্রীকান্ত জিচকার - ছবি : সংগৃহীত
তিনি ছিলেন একাধারে আই.পি.এস এবং আই.এ.এস। সেইসাথে চিকিৎসক ও আইনজীবী। ছিলেন এলএলবি ও বিজনেস ম্যানেজারও।
ইতিহাস থেকে ইংরেজি পর্যন্ত অনেক বিষয়ে এমএ ছিলেন এই তুখোড় মেধাবী। একজন বিধায়ক ও একাধারে ১৪টি দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
শিক্ষাজীবনে ২০টি ডিগ্রি অর্জন করা এই ব্যক্তি ডিগ্রির সংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে 'শিক্ষিত' ব্যক্তি, আমাদের এই উপমহাদেশের গর্ব শ্রীকান্ত জিচকার। অথচ তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন একটি মারাঠা পরিবারে।
কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করা শ্রীকান্ত জিচকার ভারতের এবং পৃথিবীর সবচেয়ে 'শিক্ষিত' ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
মারাঠি এই ভদ্রলোকের জীবন শুরু এমবিবিএস ও এমডি দিয়ে। তার পদাচারণ ঘটেছে চিকিৎসাবিজ্ঞান, আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ব্যবসায় প্রশাসন, সাংবাদিকতাসহ নানা বিষয়ে।
শিক্ষাজীবনে ২০টি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। এসবের মধ্যে ১১টি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে এই ভদ্রলোকের। প্রতিটিতেই রেখেছেন সাফল্যের ছাপ।
শ্রীকান্ত জিচকারের স্নাতকোত্তরের বিষয়গুলোর মধ্যে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সোশিয়লজি , ইকোনমিক্স, সংস্কৃত, হিস্ট্রি, ইংলিশ, ফিলোসফি, পলিটিক্যাল সায়েন, এনসিয়েন্ট ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি, কালচার এন্ড আর্কেওলজি ও সাইকোলজি।
তিনি যতগুলো ডিগ্রি তিনি নিয়েছেন সব ক’টিতেই প্রথম শ্রেণীর সাথে স্নাতকোত্তর, এবং ২৮টি স্বর্ণপদক বিজয়ী তিনি।
এমনকি অনবদ্য এই কৃতিত্বের মালিক হিসেবে শ্রীকান্ত জিচকারের নাম উঠেছে ভারতের রেকর্ড বুক লিমকা বুক অব রেকর্ডসের পাতায়।
শ্রীকান্ত টানা ১৭ বছর, প্রতি গ্রীষ্মে ও প্রতি শীতেই কোনো না কোনো স্নাতকোত্তরের বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে গেছেন । এই সময়ের মাঝে জিচকার মোট ৪২টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। সব ক’টি পরীক্ষাতেই তিনি সফল হয়েছিলেন।
জীবনের ২৪টি বছর টানা পড়াশোনার পর তার একসময় ইচ্ছে হলো পুলিশের চাকরি করবার। যেই ভাবা সেই কাজ। বসে গেলেন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস) পরীক্ষায়।
যথারীতি সেখানেও উতরে গেলেন। সেটা ১৯৭৮-এর ঘটনা। দু' বছর চুটিয়ে পুলিশের চাকরি করার পর তার আবার 'নতুনের নেশা' চেপে বসল প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার।
১৯৮০-এ তিনি আই.এ.এস কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু মাত্র চার মাসের মধ্যে আই.এ.এস-এর চাকরি থেকে পদত্যাগ করলেন, মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে লড়াই করবেন বলে।
১৯৮০ সালে শ্রীকান্ত যখন বিধায়ক নির্বাচিত হলেন তখন তার বয়স মাত্র ২৫। তিনিই হলেন ভারতের সবচেয়ে কমবয়সী বিধায়ক।
সবই যখন হলো তখন মন্ত্রী হওয়াটাই বা আর বাকি থাকবে কেন! সেটাও হলেন এবং একটা দুটি দফতরের নয়, একেবারে ১৪টি দফতরের। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সদস্যও ছিলেন তিনি।
এত শিক্ষাগত যোগ্যতা আর গুণের বাইরেও তিনি ছিলেন অসাধারণ চিত্রশিল্পী, পেশাদার ফটোগ্রাফার, মঞ্চাভিনেতা, শখের বেতার চালক ও জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী।
প্রশ্ন হতে পারে শ্রীকান্ত কেন এতগুলো বিষয়ের উপর পড়াশুনা করেছেন? শ্রীকান্ত চাইলে তো একটি বিষয়ের ওপর ডিগ্রি নিয়েই ভলো চাকরি নিয়ে সুখ আর সাচ্ছন্দে জীবন অতিবাহিত করতে পারতেন।
কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ শ্রীকান্তের জানার আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। তিনি পড়তে ভালোবাসতেন। ভালোবাসতে নতুন নতুন চ্যালেজ্ঞ গ্রহণ করতে।
তার ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে প্রায় ৫২ হাজার বইয়ের খোঁজ পাওয়া যায়।