যে তরুণের ভালোবাসায় প্রাসাদ ছাড়লেন রাজকন্যা
যে তরুণের ভালোবাসায় প্রাসাদ ছাড়লেন রাজকন্যা -
রাজপথ নয়, জনপথই বেছে নিলেন জাপানের রাজকন্যা! প্রাসাদ নয়, রাজকন্যার পছন্দ হবু বরের ‘ছোট্ট কুঁড়ে’! শৈশব থেকে প্রাসাদের বৈভব তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার পর এবার ওই বিলাসবহুল জীবনের মোহ ছেড়ে তিনি মেতে গেলেন আমজনতার স্রোতে। বিয়ে করলেন এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেকে।
পাত্রের নাম কেই কোমুরো। তিনি রাজকন্যার বহু দিনের প্রেমিক। কলেজে পড়তে পড়তেই তার সাথে আলাপ জাপানের রাজকন্যা মাকোর।
রাজকুমারী মাকো তার দাদা সম্রাট আকিহিতোর মতোই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সম্রাট আকিহিতো একসময় মনস্থির করে ফেলেছিলেন রাজদণ্ড রক্ষার গুরুদায়িত্ব তিনি আর পালন করবেন না। তখন তার বয়স ছিল ৮৩ বছর। তার নাতনি রাজকুমারী মাকোও তেমনই নিজের জীবনের গুরু সিদ্ধাম্ত নিতে পিছপা হননি।
সম্রাট আকিহিতোর তিন নাতনি- মাকো, কাকো ও আইকো। নাতি একটিই, ১৪ বছরের রাজকুমার হিসাহিতো। মাকোই এদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড়। মাকোর বয়স এখন ৩০ বছর।
সম্রাট আকিহিতোর খুব আদরের নাতনি মাকো। লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে গবেষকের কাজ নেন একটি জাদুঘরে। আর তার ৩০ বছর বয়সের প্রেমিক কেই কোমুরো কাজ করেন টোকিয়োর একটি আইন সংস্থায়। খুব একটা উঁচু পদে কাজ করেন তিনি, এমনটা নয়।
তবে মা, বাবার কাছ থেকে কোমুরোকে কখনো লুকিয়ে রাখেননি রাজকন্যা মাকো। তাদের সাথে অনেক আগেই কোমুরোর আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন রাজকুমারী।
কোমুরোর সাথে মাকোর প্রথম দেখা ২০১২ সালে। মাকো তখন রাজপরিবারের প্রথা ভেঙে টোকিয়োর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সেখানেই দু’জনের আলাপ।
মাকোর ছিল বৈভবে ভরপুর জীবন। ঠিক তার উল্টা ছিল কোমুরোর জীবন। একা মায়ের কাছেই বড় হওয়া তার। আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। কোমুরোর পড়াশোনার খরচ অনেকাংশে বহন করেছিলেন মায়ের প্রাক্তন প্রেমিক। টোকিও পর্যটন শিল্পের জন্য কাজ করেও উপার্জন করতেন কোমুরো।
চার বছর আগে জোড় বাঁধার পাকাপাকি সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছিলেন তারা। তা নিয়ে হই হই পড়ে গিয়েছিল জাপানজুড়ে। ভালোবাসার টানে বরাবরের জন্য প্রাসাদ ছেড়ে রাজকন্যা চলে যাবেন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে, মন থেকে অনেকেই এটা মেনে নিতে পারছিলেন না।
২০১৭ সালে তাদের বাগদান হয়েছিল। সম্প্রতি তারা আনুষ্ঠানিক বিয়েও করলেন। নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণ পরিবারে বিয়ে করায় রাজপরিবারের সাথে যাবতীয় সম্পর্ক ছেদ করতে হয় মাকোকে। রাজ পরিবারের ১০.৩ লাখ ডলার সম্পত্তিও আর দাবি করবেন না তিনি। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ৯ কোটি টাকা। জাপানের রাজপরিবারের ঐতিহ্য আর প্রথা মেনে বিয়ের কোনো রীতিও পালন হয়নি।
প্যাস্টেল রঙের ফুলহাতা পোশাক আর হাল্কা মুক্তোর গয়না পরে নিজের বাড়ি ছাড়েন মাকো। মেয়েকে বিদায় জানাতে রাজপ্রাসাদের দরজা পর্যন্ত এসেছিলেন মাকোর বাবা, জাপানের বর্তমান সম্রাট নারুহিতোর ভাই, যুবরাজ ফুমিহিতো। ছিলেন মাকোর মা যুবরানী কিকো কাওয়াশিমা ও বোন কাকো-ও।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা