ইরান-তুরস্ক প্রক্সি সঙ্ঘাত

মাসুম খলিলী | Oct 23, 2021 04:42 pm
প্রক্সি সঙ্ঘাত

প্রক্সি সঙ্ঘাত - ছবি সংগৃহীত

 

ইরান-তুরস্ক দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা থাকলেও আঞ্চলিক কৌশলের ব্যাপারে অবিশ্বাস বিশেষভাবে তীব্র। একে অন্যকে আধিপত্য খুঁজছে বলে মনে করে তারা। ইরান সিরিয়ার শাসনের পতনের প্রচেষ্টায় বিরোধীদের প্রতি তুরস্কের সক্রিয় সমর্থন প্রত্যাখ্যান করে এবং মনে করে, এটি লেবাননে হিজবুল্লাহর সাথে ইরানের কৌশলগত সম্পর্ককে বিপন্ন করবে।

সিরিয়া সীমান্তে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তৈরিতে পিকেকে ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতি ইরানি সমর্থন এবং একই ঘরানার ইরাকি শিয়াদের কর্মকাণ্ড দেখে তুরস্ক উদ্বেগ প্রকাশ করে। উত্তর ইরাকের ইলিতিয়াস, একসময়ের অটোমান প্রদেশের অংশ মসুলকে (মসুল বিলায়েত) এখনো আঙ্কারা তার ‘টার্ফ’ হিসেবে দেখে। অন্য দিকে এলাকার সুন্নি অধিবাসীদেরকে সিরিয়া ও ইরাকের সাথে তার সীমান্তের স্থিতিশীলতার জন্য তেহরান সরাসরি হুমকি বলে মনে করে।

তেহরান তুরস্কের সিরিয়া নীতিকে প্রাথমিকভাবে নব্য-অটোমান উচ্চাকাক্সক্ষার একটি পণ্য হিসেবে ব্যাখ্যা এবং উসমানীয় খেলাফত শাসিত অঞ্চলে তুরস্কপন্থী সুন্নিদের আঙ্কারা ক্ষমতায়ন করে বলে উল্লেখ করে। ইরানের একজন জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘সিরিয়ায় [২০১১ সালের পরে] যা পরিবর্তন হয়েছে, তা না সরকারের কারণে ছিল এবং না ইরানের সাথে এর সম্পর্ক ছিল।’

অন্য দিকে আঙ্কারার কর্মকর্তারা বলেন যে, ইরান পারস্য সাম্রাজ্যকে এবার শিয়া ধারাবাহিকতা দিয়ে পুনরুজ্জীবিত করতে চায়। প্রেসিডেন্ট এরদোগান ২০১৫ সালের মার্চে ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করার নামে ইরান ‘কেবল তার জায়গা করে নিয়েছে’ বলে অভিযুক্ত করেন। তুরস্ক আরো বলেছে, সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ-সুন্নি জনসংখ্যার ওপর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, আলাবিদের শাসন রক্ষার জন্য ইরান শিয়া মিলিশিয়াদের একত্রিত করেছে; সম্প্রদায়গত উত্তেজনাকে আরো ঘনীভূত করে সুন্নি জিহাদিদের শক্তিশালী হবার উপকরণ সরবরাহ করছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রপের এক পর্যালোচনা অনুসারে তুরস্ক ও ইরান উভয়ে এমনভাবে কাজ করেছে যার জন্য একে অন্যকে দোষ দেয় আর কঠোর শক্তির ব্যবহার এবং অ-রাষ্ট্রীয় অভিনেতাদের সমর্থন করে। সন্দেহ, ভুল ধারণা ও ভুল হিসাবের কারণে সাধারণ ভিত্তি নির্মাণের প্রচেষ্টা তাদের ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সরকার সিরিয়ার সঙ্কট সমাধানে একটি উদ্যোগ নিয়েছিল। সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছিলেন, তা তার বিপ্লবী গার্ড কোরের ‘অভিজাত’ কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি তুর্কি প্রতিপক্ষ আহম্মেত দাভুতোগলুর কাছে উপস্থাপন করেছিলেন। সে সময় কয়েক মাসের শাটল কূটনীতিতে কোনো ফল হয়নি। তুর্কি কর্মকর্তারা আসাদকে বোঝাতে পারেননি তিনি এমন একটি উত্তরণে নেতৃত্ব দিতে রাজি হবেন, যার ফলে তার ক্ষমতাচ্যুতি হবে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, তারা হিসাব করেছিল যে, সামরিক গতিশীলতা এবং সময় তাদের পক্ষে ছিল। আঙ্কারার দৃষ্টিকোণ থেকে, আসাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয় সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা দূর করবে অথবা কমপক্ষে চুক্তির শর্তাবলি উন্নত করবে। রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপে পরে সব কিছু অবশ্য পাল্টে যায়।

সিরিয়ায় প্রায় তিন বছর পারস্পরিক উত্তেজনার পর, তুরস্কে জুলাই ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তুরস্ক-ইরান সংলাপের দ্বিতীয় সুযোগ দেখা দেয়। এরদোগানের প্রতি ইরানের তাৎক্ষণিক সমর্থন সিরিয়ার বিষয়ে সম্পর্কের উষ্ণতা এবং আবার আলোচনা শুরু হতে সাহায্য করে। উত্তর সিরিয়ায় ওয়াইপিজির অগ্রগতিতে তুর্কি-রাশিয়ান পুনর্মিলন, সম্ভবত আঙ্কারার সিরিয়া নীতির পুনর্বিবেচনায়ও ভূমিকা রাখে।

তারা যুদ্ধ-পরবর্তী সিরিয়ায় কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা (রাষ্ট্রপতি বা সংসদীয়) এবং ক্ষমতার ভাগাভাগি পদ্ধতি যাতে কাজ করতে পারে সে দিকে মনোনিবেশ করতে সম্মত হয়। কিন্তু দু’টি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর, উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক হস্তক্ষেপ- ‘অপারেশন ইউফ্রেটিস শিল্ড’ আলোচনাকে ব্যাহত করে এবং অবিশ্বাসকে আরো বাড়িয়ে তোলে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us