দ্য ওয়াগনার গ্রুপ : আফ্রিকায় রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের শিখণ্ডী
দ্য ওয়াগনার গ্রুপ : আফ্রিকায় রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের শিখণ্ডী - ছবি সংগৃহীত
সম্প্রতি মালির সামরিক পরিষদ ও ওয়াগনার গ্রুপের মাঝে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক ১,০০০ ওয়াগনার মিলিশিয়া মালিতে অবস্থান করবে।
চুক্তির ঘোষণাটি ঠিক এমন সময়ে এলো যখন আফ্রিকার একাধিক দেশে ওয়াগনার গ্রুপটির একের পর এক যুদ্ধাপরাধের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় পুরো অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ওয়াগনারের উপস্থিতি রয়েছে যে সকল দেশে :
১. লিবিয়া। ২০১৯ সালের এপ্রিলে খলিফা হাফতারের বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য ওয়াগনার লিবিয়ায় আসে। অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত বাহিনীটির ৩,০০০ থেকে ৩,৫০০ যোদ্ধা রয়েছে সেখানে। এমনকি তাদের হাতে নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও রয়েছে।
মধ্যলিবিয়ার জুফরা বিমানঘাঁটি ও দক্ষিণাঞ্চলে তামানহান্ট ঘাঁটিতে তাদের অবস্থান। তাদের বিরুদ্ধে লিবিয়ার বেসামরিক জনগণের ওপর যুদ্ধাপরাধ চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
২. সেন্ট্রাল আফ্রিকা।২০১৮ সাল থেকে সেখানে তাদের উপস্থিতি বিদ্যমান। ৪৫০ থেকে ১,০০০ এর মাঝে সৈন্যসংখ্যা ওঠানামা করে। প্রেসিডেন্ট গার্ড ও আরো কিছু সেনা ইউনিটকে তারা প্রশিক্ষণ দেয়। কমিশনের ভিত্তিতে সেখানকার স্বর্ণ ও হীরার খনিগুলোর নিরাপত্তা প্রদান করে।
ওয়াগনারের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নির্বিচারে হত্যা ও খনিজ সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
৩. সুদান। ২০১৭ সাল থেকে স্বর্ণ অনুসন্ধানের শিরোনামে 'উমইনফাস্ট' ও 'মিরগোল্ড' নামক দুটি কোম্পানির ছদ্মবেশে তাদের তৎপরতা শুরু করে। এরপর সুদান সেনাবাহিনীর একটি অংশ ও দারফুর অঞ্চলে 'কুইক রেসপন্স ইউনিট'কে প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
ওয়াগনার প্রেসিডেন্ট বশিরের সাথে দক্ষিণ সুদানের সোনারখনি-সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে।
৪. মোজাম্বিক। উত্তর মোজাম্বিকের প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ অঞ্চল কাবুদেলগাদো শহরে ওয়াগনারের উপস্থিতি রয়েছে। ইসলামিক স্টেটের অনুসারী আনসারুস সুন্নাহের বিরুদ্ধে সরকারি সৈন্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে।
ড্রোনসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জামে সজ্জিত বাহিনীটির ১৬০ থেকে ৩০০ সৈন্য মোতায়েন রয়েছে সেখানে।
৫. তানজেনিয়া। ২০১৮ সাল থেকে সেখানকার সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।
৬. ক্যামেরুন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বোলবিয়াকে সহায়তা করেছে। পাশাপাশি দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
৭. জিম্বাবুয়ে।২০১৮ সাল থেকে সেখানকার সরকারকে সহায়তার জন্য মোতায়েন রয়েছে।
৮. ডেমোক্রেটিক কঙ্গো। রুশ সামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ওয়াগনারের ১,৫০০ যোদ্ধা মোতায়েন রয়েছে।
এছাড়াও গিনিবিসাউ, বোতসোয়ানা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, চাঁদ, উগান্ডা, লেসোথো, বুরুন্ডি প্রভৃতি দেশে ওয়াগনারের উপস্থিতি রয়েছে।
ওয়াগনার কারা?
গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রুশ সামরিক কর্মকর্তা দিমিত্রি উতকিন 'ওয়াগনার' ছদ্মনামে রুশ গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করতেন। তার ওই ছদ্মনামে এই মিলিশিয়া গ্রুপটির নামকরণ করা হয়।
জননিরাপত্তা প্রদান, খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান বা সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির ছদ্মনাম ব্যবহার করে এরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের
ওপর নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের অভিযোগ করে আসছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ওয়াগনার ১২টির বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সূত্র : মাইদান