গরিব হয়ে পড়ছে তেলেঙ্গানার মুসলিমরা
আসাদুদ্দিন ওয়াইসি - ছবি সংগৃহীত
ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের মুসলিমরা বিশেষত কোভিড-১৯ মহামারীর পর সামাজিকভাবে আরো বেশি প্রান্তিক হয়ে পড়ছে, নতুন তথ্যাদি এমনটা দেখাচ্ছে। হায়দ্রাবাদ-ভিত্তিক অর্থনীতিবিদ আমির উল্লাহ খান বলেন, তেলেঙ্গানার দরিদ্রতম ২০ ভাগ জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
'তেলেঙ্গানায় মুসলিম' শিরোনামে একটি সভা বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেন, দারিদ্র্যাক্রান্ত মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি অ্যান্ড প্র্যাকটিস‘ (সিডিপিপি)-এর সুধীর কমিশনের রিপোর্ট থেকে গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে খান বলেন, তথ্যউপাত্ত থেকে বোঝা যায়, মুসলিমরা অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র এবং দুর্বল হয়ে পড়ছে। তেলেঙ্গানার মোট ৪ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১২.৫ ভাগ মুসলিম বলে বিশ্বাস করা হয়।
তেলেঙ্গানা সরকার ২০১৬ সালে 'মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষাগত অবস্থার বিষয়ে তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন' প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদন গঠনের জন্য গঠিত কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক আইএএস অফিসার জি সুধীর, যিনি সিডিপিপির গবেষণা দলেরও চেয়ারম্যান ছিলেন । কমিশন প্রকাশ করেছে অধিকাংশ মানব উন্নয়ন সূচকে মুসলিম সম্প্রদায় খারাপ অবস্থায় রয়েছে।
সোমবারের 'তেলেঙ্গানায় মুসলিম' সভার আয়োজন করেছিল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (এআইআইএমআইএম)। এতে উপস্থিত ছিলেন হায়দ্রাবাদ লোকসভার সংসদ সদস্য (এমপি) এবং এআইআইএমআইএমের সভাপতি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বলেন, 'সুধীরের প্রতিবেদন পড়া জরুরি কারণ তথ্য-উপাত্ত বর্তমান যুগের নতুন তেল।' ওয়াইসি যোগ করেন, তেলেঙ্গানার মুসলিমদের মধ্যে দারিদ্র্য বাড়ছে এবং মাত্র ৫৭ ভাগ মানুষ নিজস্ব সম্পত্তির মালিক ।
'যদিও মুসলিমদের মধ্যে সাক্ষরতা হার ৭৭ ভাগ, তবুও উচ্চশিক্ষায় তাদের ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি' মন্তব্য করেন ওয়াইসি। সিডিপিপির অর্থনীতিবিদ এবং গবেষণা পরিচালক আমির উল্লাহ খান ছাড়াও প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রফেসর আবদুল শাবান ও প্রাক্তন আইএএস অফিসার জি সুধীরসহ অন্য বিশেষজ্ঞরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
ভারতে মুসলমানদের অবস্থা সম্পর্কে অমিতাভ কুন্ডু কমিটির প্রতিবেদন (সাচার রিপোর্টের পর মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষাগত অবস্থা দেখার জন্য ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তুক প্রতিষ্ঠিত) থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াইসি বলেন, উচ্চশিক্ষায় মুসলমানদের মধ্যে ঝরে পড়ার হার বাড়ার প্রধান কারণ তাদের 'আর্থিক সামর্থ্য' কম।
প্রতিবেদনের নেতৃত্বদানকারী অমিতাভ কুন্ডু বলেন, কোভিড -১৯-এর পরে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যের মাত্রা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসসি, এসটি এবং ওবিসি-র সাথে তুলনা করলে, মুসলিমরা এসটির তুলনায় কিছুটা ভালো, কিন্তু আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা এসসি এবং ওবিসির চেয়েও খারাপ, অধ্যাপক আবদুল শাবান জানান। অধিকিন্তু, তিনি আরো বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচুর ভূমিহীনতা রয়েছে এবং তাদের হাতে উৎপাদন মাধ্যমের মালিকানা নেই।
সিডিপিপি রাজ্য সরকারকে দারিদ্র্যে ভুগছে এমন সব সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতি সাধন করার আহ্বান জানায় এবং কে. চন্দ্রশেখর রাও প্রশাসনের কাছে এক গাদা নীতিগত সুপারিশ জমা দেয়। আমির উল্লাহ খান আরো সুপারিশ করেন, চলমান ‘দলিত বন্ধু’ যোজনায় মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, কারণ এই প্রকল্প মুসলিম জনসংখ্যার বিশাল অংশকে দারিদ্র্য এবং পশ্চাদপদতা থেকে উত্তোলন করতে পারে।
তদুপরি আমির উল্লাহ খান, পরামর্শ দেন, মুসলিম জনসংখ্যার ১ ভাগ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে, তাই, প্রায় ৯,০০০ পরিবারকে সরাসরি ‘কল্যাণ স্থানান্তর’ যোজনার জন্য বিবেচনা করা উচিত।
তিনি বলেন, 'যদি প্রতিটি পরিবারকে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়, তাহলে তেলেঙ্গানা সরকারের ওপর ৯০০ কোটি রুপির বোঝা চাপবে , যা বাজেটের ০.৮ ভাগের সমান।' আমির উল্লাহ খান বলেন, রাজ্যের বাজেটের রাজস্বের শতাংশ হিসাবে দরিদ্র মুসলিম পরিবারে সরাসরি নগদ স্থানান্তরের পরিমণ বাজেটের প্রায় ০.৩৫ ভাগ হবে।
ওয়াইসি বলেন, তিনি এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেসিআরের সাথে কথা বলবেন এবং তাকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাবেন।