আন্তর্জাতিক সঙ্ঘাতের উস্কানি দিচ্ছে সার্বিয়া
আন্তর্জাতিক সঙ্ঘাতের উস্কানি দিচ্ছে সার্বিয়া - ছবি সংগৃহীত
সার্বিয়া একটি মারাত্মক সঙ্ঘাতের উস্কানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কসোভোর প্রধানমন্ত্রী।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী আলবিন কুরতি বলেছেন, প্রতিবেশী সার্বিয়া এ অঞ্চলে একটি মারাত্মক আন্তর্জাতিক সঙ্ঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। দু’ দেশের সীমান্তের কাছে দুটি যানবাহন নিবন্ধন কার্যালয়ে হামলার পর এ অভিযোগ করেন তিনি।
গত শনিবার ভোরে এ উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যখন জাতিগত সার্বদের বিক্ষোভের ষষ্ঠ দিনে জাতিগত আলবেনিয়ান নেতৃত্বাধীন সরকার সার্বিয়া নিবন্ধন প্লেটযুক্ত গাড়ি কসোভোয় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং দেশটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সার্বিয় চালকদের অস্থায়ী নাম্বার প্লেট ব্যবহারের নির্দেশ জারি করেছে।
কোনো কারণ ছাড়াই সীমান্তের কাছে জুবিন পটক শহরে একটি নিবন্ধন অফিস জ্বালিয়ে দেয়া হয়, অপর একটি অফিস ধ্বংস করা হয় ভেকানে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেলাল স্ভেকলা তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, জুবিন শহরে যানবাহন রেজিস্ট্রি অফিসে আগুন লাগানোর ঘটনাটি ছিল সন্দেহভাজনদের একটি ‘অপরাধমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’।
জাতিগত কসোভা-সার্বরা গত সোমবার থেকে ট্রাক জড়ো করে দু’দেশের সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে। কসোভো কর্তৃক বিশেষ পুলিশ মোতায়েনের ফলে তারা ক্ষুব্ধ এবং গাড়ির নাম্বার প্লেট বিষয়ক পদক্ষেপ বলকান অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
এখন সার্বিয়া থেকে কোনো গাড়ি প্রবেশকালে তাদের নাম্বার প্লেট সরিয়ে নিচ্ছে কসোভো। আবার সার্বিয়াও একই কাজ করছে। উভয় দেশই নিজ দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে চালকদের অস্থায়ী নাম্বার প্লেট লাগাতে বাধ্য করছে।
সার্বিয়া এখনো তাদের সাবেক প্রদেশ কসোভোকে একটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে অনুমোদন দেয়নি এবং তাদের মধ্যকার সীমান্তকে তারা অস্থায়ী সীমানা হিসেবে গণ্য করে থাকে।
সার্বিয়া কসোভোর নিকটবর্তী এলাকায় সেনাবাহিনীকে উচ্চ সতর্কাস্থায় রেখেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আটিএস শনিবার জানিয়েছে, সার্বিয় সামরিক বিমান সীমান্তের আকাশে দিনে দু’বার করে টহল দিচ্ছে, ফলে প্রতিবাদী সার্বিয়রা উল্লাস প্রদর্শন করছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক বরিস গ্যাজিক বলেন, শুক্রবার ওই এলাকায় সার্বিয় হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে।
কুরতি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, আমাদের রাষ্ট্রকে যারা ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে আক্রমণ করছে তাদের ভূমিকা আইনের শাসনকে বিপদে ফেলছে এবং তারা আমাদের শান্তি বিনষ্ট করছে।
‘সার্বিয়া সুস্পষ্টভাবে এদেরকে সাহস যোগাচ্ছে ও সাহায্য করছে’—তিনি যোগ করেন। ‘সার্বিয়া একটি মারাত্মক আন্তর্জাতিক সংঘাত উস্কে দেওয়ার জন্য কসোভোর নাগরিকদের অপব্যবহার করে’।
এদিকে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিক কসোভোর নাম্বার প্লেট সংক্রান্ত পদক্ষেপকে একটি অপরাধমূলক কাজ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এছাড়া তিনি কসোভোর সব বিশেষ বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়ার বিষয়টিকে বিতর্ক সমাধানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতার শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
কিন্তু শনিবারের ঘটনার পর কসোভো সরকার বিশেষ পুলিশ প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো কথা বলছে না।
কসোভোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্ভেলা ফেসবুকে লিখেছেন, এসব অপরাধ জানিয়ে দিচ্ছে যে, জারিনজ ও ব্রঞ্জাক সীমান্ত ক্রসিং-এ কী ঘটতে যাচ্ছিল, যদি সেখানে বিশেষ বাহিনী না পাঠানো হতো। এর মাধ্যমে সেখানে জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে কসোভো ও সার্বিয়াকে অবিলম্বে সংযম প্রদর্শন ও একতরফা পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র।
কসোভোর প্রেসিডেন্ট জোসা উসমানি বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন সুস্পষ্টভাবে যা দেখা যাচ্ছে তাকে উপেক্ষা করা না হয়, আর তা হলো—বলকান অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা সৃষ্টির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোকে ধ্বংস করার রাশিয়ান-সার্বিয়ান প্রবণতা।
‘এখন সময় এসেছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, প্রথমত ইইউ এবং ন্যাটো সদস্য দেশগুলি তাদের বিপদ দেখবে এবং ‘সার্বিয় সাম্রাজ্য’ তৈরির লক্ষ্য অর্জন করতে ভুসিক শাসনকে বাধা দেবে’- নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণকালে তিনি ফেসবুকে এসব কথা লিখেন।
কসোভো-আলবেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে সার্বিয় সেনাদের ১৯৯৮-১৯৯৯ রক্তাক্ত ক্র্যাকডাউন ন্যাটোর হস্তক্ষেপের পর শেষ হয় এবং কসোভো ২০০৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশ কসোভোকে স্বীকৃতি দিলেও সার্বিয়া ও তার মিত্র রাশিয়া ও চীন এখনো স্বীকৃতি দেয়নি।
কসোভোতে এখনো ন্যাটো নেতৃত্বাধীন ও যুক্তারাষ্ট্রের হাজার হাজার শান্তি রক্ষাকারী সেনা মোতায়েন রয়েছে। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ কসোভো-আলবেনিয়ান এবং সংখ্যালঘু কসোভো-সার্বদের মধ্যে জাতিগত উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সূত্র : আল জাজিরা