উইঘুর মসজিদ ভেঙে হোটেল নির্মাণ নিয়ে হিল্টনকে বয়কটের ঘোষণা মুসলিম সংগঠনগুলোর
উইঘুর মসজিদ ভেঙে হোটেল নির্মাণ নিয়ে হিল্টনকে বয়কটের ঘোষণা মুসলিম সংগঠনগুলোর - ছবি সংগৃহীত
৪০টিরও বেশি সংগঠন ঘোষণা দিয়েছে, ২০১৮ সালে শিনজিয়াঙে ধ্বংস করা উইঘুর মসজিদের জায়গায় একটি হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনাকে ঘিরে তারা হিল্টনকে বয়কট করবে
চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াঙে একটি গুঁড়িয়ে দেয়া মসজিদের জায়গায় হিল্টন হোটেলের একটি হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ৪০ টিরও বেশি মার্কিন মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন কোম্পানিটিকে বয়কট করা শুরু করেছে।
ভার্জিনিয়ায় হিল্টনের সদর দফতরের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় ‘কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিল্যাশন্স’ (সিএআইআর) বলে, হোটেলের নির্মাণের এই পরিকল্পনা উইঘুর মুসলিমদের সংস্কৃতি এবং বিশ্বাস নির্মূল প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে।
"আমরা হিল্টন হোটেলকে পুনর্মূল্যায়নের জন্য, পুনর্বিবেচনার জন্য চার মাসেরও বেশি সময় দিয়েছি ... কিন্তু তারা মূল্যবোধের পরিবর্তে মুনাফাকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে," সিএআইআরের নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেন। "তারা তাদের নিজস্ব লাভের হিসেবকে মানবাধিকারের উপর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
যে স্থাপনাটি ধ্বংস করায় সংগঠনগুলো হিল্টনকে বয়কট করার জন্য প্ররোচিত হয় সেটা একটি মসজিদ। ২০১৮ সালে শিনজিয়াঙের হোতান জেলার এই মসজিদটিকে ধ্বংস করা হয়।
আওয়াদ বলেন, "আমি-আপনি হিল্টন হোটেলের লাভের খাতায় দাঁত বসাতে পারি, কারণ তারা একমাত্র ঔ ভাষাই বোঝে।"
"আপনি বেড়াতে গিয়ে কোথায় থাকবেন বা ব্যবসায়িক সভা করবেন বা অনুষ্ঠান, বিবাহ বা ভোজের আয়োজন করবেন, তা বেছে নেওয়ার আপনার এবং আমার পছন্দ ... হজ পালনে যারা মদিনা, মক্কায় যান, তাদের সেখানে অবস্থান কালে হিল্টন হোটেল না থাকার জন্য আমরা আবেদন করছি," তিনি যোগ করেন।
‘‘অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট’-এর গবেষণা অনুসারে, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে শিনজিয়াঙের ৯০০টি স্থানে প্রায় ১৬,০০০ মসজিদ আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
অনেক মসজিদ থেকে মিনার সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিছু কিছু মসজিদ পুরোপুরি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড চীন সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রতিবেদন এবং আগের বছরের স্যাটেলাইট ছবির সাথে এ বছরের ছবির তুলনা করে এই সব ধ্বংসযজ্ঞের সত্যতা যাচাই করা হয়েছে।
জুলাই মাসে একটি দ্বিপক্ষীয় মার্কিন কংগ্রেশনাল কমিশন হিল্টনের প্রতি এই প্রকল্পের সঙ্গে নিজের নাম যুক্ত করতে না দেওয়ার আহ্বান জানায় ।
হিল্টনের একজন মুখপাত্র মিডল-ইস্ট আইকে বলন : "আমাদের ব্যবসায়িক মডেল বিশ্বব্যাপী ১১৯ টি দেশ এবং অঞ্চল জুড়ে পৃথক পৃথক শাখায় স্থানীয় মালিকদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। তবে শাখা-প্রশাখার এই মডেল হিল্টনের জন্য সম্পত্তি উন্নয়ন ও পরিচালনায় জড়িত থাকার বিষয়টিকেও সীমাবদ্ধ করে।
"হিল্টন তার ব্যবসায়িক কর্মকান্ড নিয়ে প্রকাশ্যে বিস্তারিত আলোচনা করে না। তবে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, ২০১৯ সালে একটি স্বাধীন চীনা মালিকানা গোষ্ঠী প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে একটি খালি জমি কিনেছিল। তাদের পরিকল্পনার মধ্যে একটি হোটেলসহ নানা বাণিজ্যিক নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। তবে নির্মাণ স্থান নির্বাচনের সাথে হিল্টন জড়িত ছিল না। "
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি বহু বছর ধরে চীন সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার অভিযোগ করেছে। ইসলামী রীতিনীতি নির্মূল করার লক্ষ্যে দশ লাখেরও বেশি উইঘুরকে বন্দী শিবিরে আটকে রাখা হয়েছে।
উইঘুরদের মধ্যে যারা নামায, রোজা, মদ থেকে বিরত থাকা, দাঁড়ি রাখা বা ইসলামী পোশাক পরাসহ ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি আনুগত্য দেখায়, তারা ধরপাকড়ের শিকার হয়েছে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জিনজিয়াংয়ের পরিস্থিতিগুলিকে "ভার্চুয়াল খাঁচা" এবং "ক্রমবর্ধমান অনুপ্রবেশকারী পুলিশিং সিস্টেমের জন্য একটি ইনকিউবেটর" বলে বর্ণনা করেছে যা সারা দেশে এবং এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
শিনজিয়াঙের সাথে কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান এবং মঙ্গোলিয়ার সীমান্ত রয়েছে এবং ১৯৪৯ সাল থেকে অঞ্চলটি চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের শেষের দিকে পররাষ্ট্র দফতর ঘোষণা করে, চীন সরকার উইঘুর এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর উপর গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মাধ্যমে ব্যাপক দমন-নিপীড়ন করছে।
কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে এক সিএনএন টাউন হল বৈঠকের সময় মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন উইঘুরদের প্রতি চীনের আচরণকে অগ্রাহ্য করে বলেন, প্রতিটি দেশেরই "নিজস্ব সাংস্কৃতিক নিয়মকানুন" রয়েছে।
চীন অবশ্য গণহত্যা এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিদেশী পত্রিকা থেকে